অর্জুনের দলত্যাগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন দীনেশ।— ফাইল চিত্র।
বিজেপিতে যোগ দিয়েই সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন ভাটপাড়া থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক অর্জুন সিংহ। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব মন্তব্য করছেন, তা তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই তিনি তৃণমূল ছাড়লেন। জানিয়েছেন অর্জুন। তৃণমূলে থাকাকালীন যাঁর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে, সেই মুকুল রায়ের পাশে দাঁড়িয়েই বৃহস্পতিবার বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিলেন অর্জুন। আর এত দিন অর্জুন যাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ব্যারাকপুরের সেই তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বললেন, ‘‘কে এল, কে গেল, কিছু যায় আসে না।’’
বেশ কিছু দিন ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল অর্জুন সিংহের। বিষয়টি আঁচ করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে ডেকে বার্তাও দিয়েছিলেন অর্জুনকে। কিন্তু, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর ফের বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন ভাটপাড়ার এই তৃণমূল বিধায়ক। যদিও এ দিন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর লোকসভার টিকিট পাওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি অর্জুন। উল্টে পুলওয়ামার হামলার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করা মন্তব্য নিয়েই ছিলেন সব থেকে বেশি সরব।
পুলওয়ামা হামলার পর বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ছিল, গোয়েন্দাদের তরফ থেকে সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও কী করে পুলওয়ামায় ভয়াবহ জঙ্গিহানা হল? একই সঙ্গে আরও বলেছিলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাই মিলে তার নিন্দা করেছি। একজোট হয়েই আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। কিন্তু কারও কাছ থেকে আমরা দেশপ্রেম শিখব না।পাশাপাশি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলার নানা প্রান্তে বিজেপি-আরএসএস দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছিলেন মমতা।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দিলেন অর্জুন সিংহ, তৃণমূল বলল গুরুত্বহীন ঘটনা
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিজেপি দফতরে বসে মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন অর্জুন। সিপিএম বিরোধী আন্দোলনে মমতার সঙ্গে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে অর্জুন বলেন, ‘‘জঙ্গি হামলার পর গোটা দেশ যখন ক্ষোভে ফুটছে তখন তৃণমূল নেত্রীর ওই মন্তব্য দুঃখজনক। ৩০ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু, জঙ্গি হামলার পর তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তখনই সিদ্ধান্ত নিই এই দলে থাকা আর সম্ভব নয়। এই দলের হয়ে কাজ করা যায় না।’’
নেত্রীর পাশাপাশি দলের ‘মা-মাটি-মানুষ’ স্লোগান নিয়েও কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে অর্জুনকে। তাঁর অভিযোগ ‘মা-মাটি-মানুষ’ বা এম-এম-এম এখন কেবলই ‘মানি-মানি-মানি’-তে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: জঙ্গিহানার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও সতর্কতা নেওয়া হল না কেন? কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ মমতার
তবে, যাঁকে টিকিট দেওয়া নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত সেই দীনেশ ত্রিবেদী অবশ্য অর্জুনের দলত্যাগকে আমল দিতে রাজি নন। পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতার মতো অর্জুনের বিজেপিতে যোগ দেওয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে শোনা যায় ব্যারাকপুরের এই তৃণমূল প্রার্থীকে। পাশাপাশি, অর্জুনকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজকে মানুষ সমর্থন করেন, এই দাবি করে দীনেশ বলেন, ‘‘কে এল, কে গেল তা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, তা আমি পালন করব। কয়েক জনের দলত্যাগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বা রাজ্যের সাধারণ মানুষ ভাবিত নন। কারণ, মানুষ তৃণমূলের পাশে রয়েছেন।’’
(মালদহ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং সহউত্তরবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবরপড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy