E-Paper

থ্যালাসেমিয়ার ‘অপরাধে’ ছাত্রীকে টিসি নিতে চাপ, অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্কুলের অধ্যক্ষা

বছর তেরোর ছাত্রীর বাবা শেখ মইদুল ইসলাম এবং মা মুনমুন খাতুন জেলাশাসক ইউনুস রিশিন ইসমাইল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়কে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩২

—প্রতীকী চিত্র।

কোনও ছাত্র বা ছাত্রী রোগাক্রান্ত হলে কি স্কুলে পড়ার অধিকার হারাবে? শিক্ষার অধিকার আইনে এই প্রশ্নের জায়গা না থাকলেও পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কাপাসবেড়িয়ায় কেন্দ্রের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা এমনই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ।

থ্যালাসেমিয়ায় (ই-বিটা) আক্রান্ত বলে এবং শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ওই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা মহুয়া গুহ রায় টিসি নিয়ে স্কুল ও হস্টেল ছাড়তে বলেছেন এবং এক মাস ধরে হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ। বছর তেরোর ওই ছাত্রীর বাবা শেখ মইদুল ইসলাম এবং মা মুনমুন খাতুন জেলাশাসক ইউনুস রিশিন ইসমাইল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায়কে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

নেহা মানছেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। অধ্যক্ষার সঙ্গে আমার এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথাও হয়েছে। এটা কাম্য নয়। শুক্রবার ওই ছাত্রীকে স্কুলে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া সত্ত্বেও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষা টিসি দিতে চাইছেন। এটা নিন্দনীয়।’’ অধ্যক্ষা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘ফিট সার্টিফিকেট থাকলেই হবে না। হিমোগ্লোবিন ৮ হলে তাকে কী ভাবে স্কুলে রাখা যাবে?’’ পরে অবশ্য সুর বদলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সবাই যখন চাপ দিচ্ছেন, তখন আমি নিতে বাধ্য। শুক্রবার আসুক। রেখে দেব। তার পরে কিছু হলে কিন্তু আমার দায়িত্ব নয়।’’

ওই ছাত্রী ষষ্ঠ শ্রেণিতেই নবোদয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। হস্টেলে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যারাটে-সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিত সে। গত ৭ নভেম্বর জ্বর আসে এবং হস্টেলেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। ছাত্রীটির মা-বাবা তাকে বাড়ি নিয়ে যান। এক ইউনিট রক্তও দিতে হয়। সুস্থ হওয়ার পরে মেয়েকে ১১ নভেম্বর হস্টেলে রাখতেএলে তার অভিভাবকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং বলা হয় ‘ফিট সার্টিফিকেট’ আনতে। ছাত্রীটির মা মুনমুন সরকারি হাসপাতালের নার্স। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে নিয়ে অধ্যক্ষার কাছে গেলে উনি দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।’’ মেয়েটির বাবার কথায়, ‘‘প্রথমে তমলুক মেডিক্যাল, পরে কলকাতার এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে ২৪ নভেম্বর মেয়েকে হস্টেলে রেখে আসি। মাঝপথে অধ্যক্ষা ডেকে পাঠিয়ে টিসি নিতে বলেন।’’

সে দিনের কথোপকথন রেকর্ড করেন মইদুল ও মুনমুন। সেখানে অধ্যক্ষাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই মেয়ের হিমোগ্লোবিন ৮। একে স্কুলও রাখতে চাইছে না, আপনারাও বাড়িতে রাখতে চাইছেন না। স্কুলে যদি কিছু হয়, তা হলে আমাকে নাগাল্যান্ড পাঠিয়ে দেবে।’ অধ্যক্ষা লিখেও দেন— ‘হিমোগ্লোবিন ১১ না হওয়া পর্যন্ত এই ছাত্রীকে স্কুলে আসতে দেওয়া যাবে না।’

যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রবীণ রক্ত বিশেষজ্ঞ প্রসূন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া থাকলে এবং ৮-৯ হিমোগ্লোবিন থাকলেও পড়াশোনা করতে বা হস্টেলে থাকতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শুধু একটু যত্ন নিলেই হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Thalassemia Health Department

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy