E-Paper

সন্দেশখালি: ধরা পড়েনি কেউ, ক্রমে বাড়ছে আতঙ্ক

তদন্তকারীদের দাবি, অভিযুক্তেরা পলাতক। খোঁজ চলছে। তবে বসিরহাট পুলিশ-জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান ফোন ধরেননি। মোবাইল-বার্তারও জবাব মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৬
(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ। (ডান দিকে) সাক্ষী ভোলা ঘোষ। পিছনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি।

(বাঁ দিকে) শাহজাহান শেখ। (ডান দিকে) সাক্ষী ভোলা ঘোষ। পিছনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পেরিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। সন্দেশখালির বয়ারমারি-কলুপাড়ায় বুধবার গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কায় দু’জনের মৃত্যুর পরে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ট্রাকচালককে ধরতে পারেনি পুলিশ। গাড়িতে থাকা তৃণমূল কর্মী ভোলানাথ ঘোষ জেলবন্দি শেখ শাহজাহান ও তার স্ত্রী-সহ আট জনের বিরুদ্ধে তাঁকে ট্রাক চাপা দিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন ন্যাজাট থানায়। শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের মামলার অন্যতম সাক্ষী ভোলানাথ।

তদন্তকারীদের দাবি, অভিযুক্তেরা পলাতক। খোঁজ চলছে। তবে বসিরহাট পুলিশ-জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমান ফোন ধরেননি। মোবাইল-বার্তারও জবাব মেলেনি। ভোলানাথ বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি অভিযুক্তেরা ধরা পড়ে, ততই মঙ্গল। প্রশাসনের উপরে আস্থা আছে। তবে প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।’’

বসিরহাট আদালতে বুধবার যাচ্ছিলেন ভোলানাথ। গাড়িতে তাঁর ছোট ছেলেও ছিলেন। ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর ছোট ছেলে এবং গাড়ির চালক মারা যান। খাতায়-কলমে ওই ট্রাকের মালিক বয়ারমারির আব্দুস সামাদ মোল্লা। এ দিন তদন্তকারীরা আব্দুসের বাড়িতে যান। আব্দুস ছিলেন না। ওই বাড়ি থেকে পুলিশ একটি মোটবাইক আটক করে। আব্দুসের মেয়ে হাসনুহানা বিবি বলেন, ‘‘বাবা ওই ট্রাক অনেক আগে নজরুল মোল্লাকে (অন্যতম অভিযুক্ত) বেচে দিয়েছেন। গাড়ির কাগজপত্র বা নামবদলানো হয়নি।’’

ভোলানাথ দাবি করেছিলেন, দুর্ঘটনার পরে তিনি শাহজাহানের অনুগামী আব্দুল আলিম মোল্লাকে ট্রাকের চালকের আসনে দেখেছিলেন। পালিয়ে যেতেও দেখেন। আব্দুলও অন্যতম অভিযুক্ত। আব্দুলের স্ত্রী তথা আগারহাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রোশনারা বিবির দাবি, ‘‘ভোলা ঘোষ মুখোশধারী তৃণমূল। আমার স্বামী ট্রাক চালাতেই পারে না। অনেক বছর আগে ট্রাকে খালাসির কাজ করত।’’

এ সব চাপান-উতোরের মধ্যে নিলম্বিত তৃণমূল নেতা শাহজাহানের নাম যে ভাবে বার বার সামনে আসছে, তাতে আতঙ্ক বাড়ছে এলাকাবাসীর একাংশের। তাঁদের অন্যতম রাজবাড়ি এলাকার সনৎ মণ্ডলের দাবি, গাড়ি চাপা দিয়ে খুনের ছক কষার অভিযোগ শাহজাহানের বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়। ২০২১ সালে জমি দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁর বাবা সুবলচন্দ্র মণ্ডলকে তুলে নিয়ে যায় শাহজাহান বাহিনী। পরদিন সুবল দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন বলে খবর মেলে। সনতের দাবি, ‘‘পরে জেনেছি, গাড়ি চাপা দিয়ে বাবাকে খুন করা হয়। কিন্তু পুলিশে অভিযোগ জানাতে সাহস পাইনি। আমাদের শাসানো হয়েছিল।’’

সিবিআইয়ের চার প্রতিনিধি এ দিনও সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়ায় যান ছ’বছর আগে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ওঠা তিন বিজেপি কর্মী খুনের তদন্তে। ভাঙ্গিপাড়ার নলকোড়া বেসিক প্রাইমারি স্কুলে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। নিহতদের বাড়িতেও যান। নিহত প্রদীপ মণ্ডলের স্ত্রী পদ্মা বলেন, ‘‘সিবিআই আসায় মনোবল বাড়ছে। তবে শাহজাহান কোনও সাক্ষীকেই রাখতে চাইছে না, ভোলা ঘোষের অবস্থায় সেটা স্পষ্ট। আসল অপরাধীরা যেন সাজা পায়।’’

সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, ‘‘অপরাধীরা নিশ্চয় ধরা পড়বে। আমার কাছে খবর, পুলিশ দ্রুত তদন্ত করছে।’’ পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মতো অনেক পকেট তৈরি করেছে তৃণমূল, যেগুলি মুক্তাঞ্চল। সেখানকার মানুষ ত্রাহি-ত্রাহি করছেন। ২০২৬-এর ভোটে এ সবের হিসেব হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sandeshkhali Incident Sheikh Shahajahan sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy