গোটা দেশে জনগণনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ১১,৭১৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করে ফেলল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখনও রাজ্যে জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি করল না। ফলে জনগণনার প্রথম দফায় গৃহতালিকা তৈরি ও গৃহগণনার যে কাজ হয়, তার মহড়া বা ‘প্রি-টেস্ট’ পশ্চিমবঙ্গে করা যায়নি। দেশের বাকি রাজ্যে নভেম্বর মাসে এই কাজ হয়ে গিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, জট কাটাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষস্তর থেকে নবান্নকে বার্তা পাঠিয়ে জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারির অনুরোধ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জনগণনার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল রাজ্যকে সার্কুলার পাঠিয়ে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জনগণনা আধিকারিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বলেছে। সরকারি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি করছে না। অথচ জনগণনার জন্য ২০২০ সালেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ১৮.৭৩ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছিল। তা রাজ্য সরকারের কোষাগারে পড়ে রয়েছে।
সরকারি ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনগণনা নিয়ে আপত্তির কথা না বললেও রাজ্যের আমলাদের মত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-এনপিআর-এনআরসি-র বিরুদ্ধে। জাতগণনা নিয়েও তাঁর আপত্তি রয়েছে। সেটাই জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি না করার কারণ। আজ মন্ত্রিসভা যে অর্থ মঞ্জুর করেছে, তাতে অবশ্য এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার তৈরির জন্য আলাদা ভাবে বাজেট বরাদ্দ করা হয়নি। যেমনটা ২০১৯-এ করা হয়েছিল। এনপিআর-ই দেশ জুড়ে এনআরসির আগের ধাপ। এনপিআর-এর জন্য অর্থ বরাদ্দ না করে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সদর্থক বার্তা দিতে চাইছে কেন্দ্র? না কি বিধানসভা ভোটের আগে বিতর্ক এড়াতে চাইছে? এর উত্তর মেলেনি।
কোভিডের জন্য নির্ধারিত ২০২১ সালে জনগণনা হয়নি। মোদী সরকার ১৬ জুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে, ২০২৭-এ জনগণনা হবে। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রের পরে রাজ্যগুলিকেও বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। তাতে জেলাশাসক, পুর-কমিশনার থেকে বিডিও পর্যন্ত আধিকারিকদের নিজের এলাকায় জনগণনা আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বাকিরা সে কাজ সারলেও পশ্চিমবঙ্গ তা করেনি।
আজ রেজিস্ট্রার জেনারেল দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ আইনি ভাবে বাধ্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে। আমরা চলতি সপ্তাহে ফের সব রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে সার্কুলার পাঠিয়েছি যাতে, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জনগণনা আধিকারিক নিয়োগ করে ফেলা হয়। এর পরে যাঁরা জনগণনার মূল কাজ করবেন, সেই এনুমারেটর ও সুপারভাইজ়ার নিয়োগ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ বাদে সবাই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।’’ আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জনগণনার জন্য ১১,৭১৮ কোটি টাকা মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছে। পরে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘‘যে সব রাজ্য জনগণনা আধিকারিক নিয়োগ করেনি, তাদের সঙ্গে দৌত্যের কাজ চলছে।’’
জনগণনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৭-এর ১ মার্চ ভোররাত ১২টাকে জনগণনার হিসেবের নির্দিষ্ট দিন হিসেবে ধরা হবে। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে জনগণনার কাজ হবে। তার আগে প্রথম দফায় ২০২৬-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে গৃহতালিকা তৈরি ও গৃহগণনার কাজ হবে। এই সংক্রান্ত সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নভেম্বরে দেশ জুড়ে মহড়া হয়েছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। ফলে পশ্চিমবঙ্গে আসল কাজের সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা। বিশেষত এ বার অ্যাপের মাধ্যমে জনগণনার তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এ বার জনগণনার সঙ্গে জাতগণনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে ২০২৭-এ ফেব্রুয়ারিতে জনগণনার সময় কী কী প্রশ্ন করা হবে, তা পরে সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে, জানান বৈষ্ণব।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)