ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রথম পর্বের শেষে যে খসড়া ভোটার তালিকা বেরোবে, তাতে নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের বড় অংশের। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে এই রাজ্যে বাস করছেনএবং ভোটও দিয়েছেন, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার আর্জি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল সিপিএম।
মতুয়া সম্প্রদায়ের কিছু প্রতিনিধিকে নিয়ে শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল এবং বিশেষ তালিকা পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্তের সঙ্গে দেখা করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) যাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছেন, তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রাখার দাবি আগে উঠেছিল। সিএএ শিবির খুলে বিজেপি নেতারাও দাবি করছিলেন, ভোটার তালিকায় নাম বাদ গেলেও মতুয়ারা নাগরিকত্ব আইনের বলে ফের ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু সিএএ-তে কেবল আবেদন করলেই ভোটার তালিকায় নাম রাখার জন্য তা বিবেচনা করা যায় না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রেক্ষিতে কমিশনের কাছে সিপিএমের দাবি, স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী মতুয়া এবং কাগজহীন নাগরিকদের ‘নিঃশর্ত’ ভাবে ভোটার তালিকায় রাখা হোক। সিইও দফতরের তরফে তাদের কাছে এই মর্মে লিখিত প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সিপিএম নেতা সুজনের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক বার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইন সংশোধন করেছে। শেষমেশ বলা হয়েছে, মতুয়া বা হিন্দু সম্প্রদায়ের যাঁরা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের বিতাড়িত করা যাবে না। তা হলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের নাম আপাতত শর্ত ছাড়াই তালিকায় রাখা হোক।’’ সুজনদের মতে, মতুয়ারা দেশের আইন অনুযায়ী ‘গণ্য’ (ডিম্ড) নাগরিক বটেই। তাঁদের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হবে এবং শুনানির নামে হেনস্থা করা চলবে না। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরীরও দাবি, ‘‘এই দেশে ৫০ বছর বসবাস করছেন, এমন অনেক মতুয়া আছেন। অনেক বার ভোটে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা। আজ হঠাৎ তাঁদের কার্যত বিদেশি চিহ্নিত করে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ারর চক্রান্ত মেনে নেওয়া যায় না।’’ প্রসঙ্গত, প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে অমিতাভ চক্রবর্তীরাও এর আগে পর্যবেক্ষক সুব্রতের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছেন, কেন্দ্রের নিয়মেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মতুয়ারা অনুপ্রবেশকারী নন। তা হলে তাঁদের আপাতত ভোটার তালিকায় নাম রাখা হোক।
এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কত জন সিএএ-র আওতায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তা জানতে তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন ‘বাংলা পক্ষে’র তরফে মহম্মদ সাহিন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এমন কোনও নির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে নেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)