ফাইল চিত্র।
এ এক অদ্ভুত দুর্ভাগ্যের খেলা। বালুরঘাট থেকে আমাদের নবীন প্রতিনিধি যে প্রতিবেদন পাঠালেন ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে, প্রবীণ সাংবাদিকদের বহু পুরনো অভিজ্ঞতাও তাই। অনেক আগের কোনও নির্বাচনে ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে যে প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়েছিল বালুরঘাটে, এখনও তা প্রতিশ্রুতি হিসেবেই উচ্চারিত হচ্ছে, কথা রাখার নিদর্শন হয়ে উঠতে পারেনি।
ভোট এলেই প্রতিশ্রুতির বান ডাকিয়ে শুরু হয় ভোটদাতাকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা। ভোট মিটলেই বছরের পর বছর কোনও খোঁজ থাকে না প্রতিশ্রুতিদাতাদের। পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন এ দুর্ভাগ্যের। ভোট এলেই বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত রেললাইন পাতার প্রকল্প জীবন্ত হয়ে ওঠে নেতাদের কথায়-বার্তায়। ভোট মিটতেই যাবতীয় প্রতিশ্রুতি নিষ্ফলা হয়ে পড়ে থাকে অগৌরবের অন্ধকারে।
শুধু বালুরঘাট অবশ্য আলোচ্য নয়। বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কথা যেমন ছিল, তেমনই অমুক শহরে রেল ওভারব্রিজ, তমুক জনপদে উড়ালপুল বা অন্য একটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। কথা হিসেবেই রয়ে গেল এখনও। কিছুতেই বাস্তবায়ন ঘটে না প্রকল্পগুলোর। কিন্তু প্রায় প্রত্যেকটা নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে নতুন করে এই কথা না রাখার খেলায় মেতে উঠতে আমাদের দেশের রাজনীতিকরা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেন না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: জমি অধিগ্রহণই হয়নি, ভোট এলেই ‘বেঁচে ওঠে’ বালুরঘাটের রেল প্রকল্প
স্বাধীনতার পরে সাতটা দশক কেটে গিয়েছে। আজও কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় জনতাকে? প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেওয়ার অথবা বাসস্থান গড়ে দেওয়ার অথবা ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ বা পানীয় জল বা এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার অথবা নারীশিক্ষা সুনিশ্চিত করার। কোথায় পড়ে রয়েছি আমরা! এত বছর ধরেও এক বিরাট সংখ্যক নাগরিকের জীবনে এই প্রাথমিকতাগুলোই পূরণ করা যায়নি? একের পর এক নির্বাচন এসেছে, একের পর এক নতুন প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ করে চমকে দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু সে সবের কতটুকু পূরণ হয়েছে, আজকের নির্বাচনে ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলোর বহর দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর কত দিন চলবে? দায়বদ্ধতার কথাও তো ভাবতে হবে রাজনীতিকদের। যা বলছি মুখে, তা কাজে করে দেখানোর চেষ্টা যদি এত কম থাকে, তা হলে নাগরিকের আস্থা কি থাকবে রাষ্টের উপর? যা বলছেন, তা করে দেখাতেও তো হবে। আর কত দিন এই সব নিষ্ফলা প্রতিশ্রুতির অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা হবে রাজনীতিকে? রাজনীতিকরা এ প্রশ্নগুলো নিজেদের করতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হয়।