লন্ডন ডায়েরি

ওয়েস্টমিনস্টার-এ খালিদ মাসুদের হামলার এক সপ্তাহ পর, গোটা লন্ডন এখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, জঙ্গিদের জিততে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। পার্লামেন্ট আর ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের বাইরে ফুলের তোড়া আর কার্ডের সমুদ্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৪
Share:

আমরা হারব না, লন্ডন ভয় পাবে না

Advertisement

ওয়েস্টমিনস্টার-এ খালিদ মাসুদের হামলার এক সপ্তাহ পর, গোটা লন্ডন এখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, জঙ্গিদের জিততে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। পার্লামেন্ট আর ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের বাইরে ফুলের তোড়া আর কার্ডের সমুদ্র। একটায় লেখা: ‘আমরা হারব না! লন্ডন ভয় পাবে না।’ প্রতি দিন জানা যাচ্ছে বহু সাধারণ মানুষ আর ডাক্তারদের বীরত্বের কাহিনি, সে দিন যাঁরা আক্রান্তদের সাহায্যে ছুটে এসেছিলেন। প্রথম যে ডাক্তার এসেছিলেন, তিনি শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত ডাক্তার জিভ্‌স বিজয়সূর্য। জিভ্‌স সে দিন ওই এলাকাতেই ছিলেন, চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে পুলিশ কনস্টেবল কিথ পামার আর আততায়ী খালিদ মাসুদ, দুজনকেই বাঁচিয়ে তুলতে হাত লাগান। ছবিতে ওঁকে দেখা গিয়েছে জামার হাতা গুটোনো, আহতদের সেবা করছেন। সেন্ট টমাস হাসপাতালে ওঁর সহকর্মীরা খুব প্রশংসা করেছেন ওঁর, বলেছেন, ‘জিভ্‌স আমাদের নায়ক।’

গত রবিবার বিকেলে, বিগ বেন-এ যখন চারটে বাজল, ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর নেমে এসেছিল এক অখণ্ড নীরবতা। প্রায় একশো জন মহিলা— অনেকেই হিজাব আর শান্তির প্রতীক নীলরঙা পোশাক পরা— সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথা নিচু, পরস্পরের হাত ধরা। নেপথ্যে ব্যাগপাইপ বাজছিল। টুরিস্টরাও দেখে, দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পথে। বছর পঁচিশের কেরেনা শিথ বলছিলেন, ‘একটা লোক আমাদের ছন্নছাড়া করে দিতে চেয়েছিল, হাতে হাত ধরে আমরা ঠিক তার উলটোটা করছি।’

Advertisement

সংহতি: ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর শান্তিকামী মানবশৃঙ্খল

টিনটিন আর ব্রেক্সিট

ব্রাসেল্‌স-এর ইউরোপিয়ান কাউন্সিল আধিকারিকরা ব্রেক্সিট ইস্যুতে ম্যাসকট খুঁজে পেয়েছেন। কাউন্সিলের ব্রেক্সিট টাস্কফোর্স-এর অফিসের দেওয়ালে একটা পোস্টারে দেখা যাচ্ছে টিনটিনকে। হার্জ-এর অমর সৃষ্টি, জনপ্রিয় বেলজিয়ান রিপোর্টার টিনটিন। পোস্টারে টিনটিনের নতুন অভিযান: ‘টিনটিন অ্যান্ড দ্য ব্রেক্সিট প্ল্যান’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, টিনটিন আর কুট্টুস আতঙ্কিত হয়ে দেখছে, ক্যাপ্টেন হ্যাডক ওদের লাইফবোটে আগুন জ্বালিয়েছে। এখন টিনটিনই ভরসা!

অনীশ কপূরের ছবি

ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিত্রশিল্পী অনীশ কপূরের প্রদর্শনী এই সপ্তাহেই শুরু হচ্ছে লিসন গ্যালারিতে। বিশাল, নির্দিষ্ট অবয়বহীন তিনটি শিল্পকর্ম— কর্তৃপক্ষের মতে, চিত্রকলা, ভাস্কর্য আর নিরবয়ব শিল্পকর্মের মাঝামাঝি যাদের অবস্থান। অনীশকে তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পীদের এক জন মনে করা হয়। ওঁর আঁকা ছবি আর ভাস্কর্যগুলো অতিক্রম করে শিল্পের প্রচলিত ছক, তৈরি করে এমন এক বিভ্রম, দর্শকের মনে হয় যেন তিনি আছেন একটা ঘূর্ণির মধ্যে। অনীশের কাজ ‘ইন্টারনাল অবজেক্টস ইন থ্রি পার্টস’ লন্ডনে আসছে এই প্রথম।

পদে-পদে বিপদ

পদ-কর্তা: থেরেসা মে আর নিকোলা স্টার্জন-এর যে ছবি নিয়ে লন্ডন তোলপাড়

‘ডেলি মেল’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবি নিয়ে লন্ডনে বেজায় হুলুস্থুল। ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে আর স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন একটা মিটিং করেছিলেন গ্লাসগো হোটেলে, ওঁদের দুজনের ছবি কাগজের একেবারে প্রথম পাতায় ছেপে ডেলি মেল যে পাতা-জোড়া শিরোনাম দিয়েছে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়: ‘ব্রেক্সিট ভুলে যান, লেগ্‌স ইট কে জিতল?’ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুজনেই নীল রঙের পোশাক আর টাইট্‌স পরেছেন, পায়ে স্টিলেটো হিল। এই শিরোনামেই লন্ডন তোলপাড়। প্রায় ৯০০ অভিযোগ এসেছে দেশের নানা প্রান্তের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। হ্যারিয়েট হার্মান আর ইভেট কুপার-এর মতো মহিলা এমপি টুইটারে তুলোধোনা করেছেন ‘ডেলি মেল’-কে, লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন-ও। গ্রিন পার্টি-র ডেপুটি লিডার আবার সটান অভিযোগ ঠুকে দিয়েছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রেস স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন’-এর কাছে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে অবশ্য নির্বিকার। সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেছেন, ‘আমাদের পোশাক পরা নিয়ে ওরা একটু মজা করেছে মাত্র।’ তাতেও পালটা এক প্রস্থ টুইট-বন্যা। এ বার অনেকের বক্তব্য, মে আর ডেলি মেল দেখছি একেবারে হরিহর আত্মা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন