লন্ডন ডায়েরি

বইটির মূল চরিত্র মীরা নামে বছর বারোর এক মেয়ে, যে সদ্য তার দিদিমা নানা জোসিকে হারিয়েছে। দিদিমার চরিত্রটি সীতার শাশুড়ি, শিল্পী রোজি হ্যারিসন অবলম্বনে সৃষ্ট। এই সিরিজে সীতার দ্বিতীয় বই জেসমিন স্কাইজ-এর প্রেক্ষাপট কলকাতা।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ১২:৩০
Share:

স্বদেশ-বিদেশ মিলিয়ে দিলেন সীতা

Advertisement

হাস্যমুখে: বই-প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক স্কুলপড়ুয়ার সঙ্গে সীতা ব্রহ্মচারী

Advertisement

সীতা ব্রহ্মচারীর নতুন বই টেন্ডার আর্থ প্রকাশিত হল এ সপ্তাহে ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস’-এ। বাঙালি বাবা ও ইংরেজ মায়ের মেয়ে সীতা ২০১১-তে তাঁর আর্টিচোক হার্টস বইয়ের জন্য ‘ওয়াটারস্টোনস চিলড্রেন’স বুক অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। সেই বইয়েও ছিল এক ইংরেজ-বাঙালি পরিবারের গল্প, দুই সংস্কৃতির মিশ্র পরিবেশে বড় হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা। বইটির মূল চরিত্র মীরা নামে বছর বারোর এক মেয়ে, যে সদ্য তার দিদিমা নানা জোসিকে হারিয়েছে। দিদিমার চরিত্রটি সীতার শাশুড়ি, শিল্পী রোজি হ্যারিসন অবলম্বনে সৃষ্ট। এই সিরিজে সীতার দ্বিতীয় বই জেসমিন স্কাইজ-এর প্রেক্ষাপট কলকাতা। ভালবাসা, বিচ্ছেদ পেরিয়ে নিজের শেকড় খোঁজার গল্প। আর টেন্ডার আর্থ-এ গল্প ডালপালা মেলেছে লন্ডনে— মীরার ছোট বোন লায়লা আজকের লন্ডনে শরণার্থী সমস্যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বিপন্ন সময়ে দাঁড়িয়ে এক মেয়ের নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়ার গল্প। লন্ডনের আর্চার অ্যাকাডেমি-র পড়ুয়ারা বই-প্রকাশ অনুষ্ঠানে ব্যানার তৈরি করে এনেছিল, তাতে প্রতিবাদ আর আশার কথা লেখা। সীতা এই বই উৎসর্গ করেছেন তাঁর কিশোরী মেয়ে আর ‘নরম মাটি থেকে নতুন পথ খুঁজে নেওয়া তরুণদের’।

গরমের ছাড়

জুন মাসে ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মে বড় অনুষ্ঠানগুলো কী কী, যদি প্রশ্ন করেন, তা হলে চেলসি ফ্লাওয়ার শো, উইম্বলডন, আর লর্ডসের মাঠে ক্রিকেটের পাশে আসবে ‘রয়াল অ্যাসকট’-এর কথাও। চার দিনের এই ঘোড়দৌড়ে রানি ও রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ধরাবাঁধা। মেয়েরা ডে-ড্রেসের সঙ্গে মাথায় বাহারি হ্যাট পরেন, পুরুষরা জ্যাকেট আর টাই। কিন্তু এ বার তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি ছুঁতেই এই সব ‘পোশাকি’ বিধিও শিথিল। সদস্যদের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল জ্যাকেট খুলে ফেলার। অনুষ্ঠানের ইতিহাসে এই ঘটনা এই প্রথম। এমনকী রাজ-সদস্যদের জন্য নির্ধারিত জায়গায় যাঁরা বসেছিলেন, তাঁরাও পরনের টেল-কোট খুলে ফেলার অনুমতি পেয়েছিলেন।

রাজকীয় প্রতিবাদ

পার্লামেন্টের অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক শুরুটা এ বার একটু কমসম হল, প্যারেডের জন্য ঘোড়াগুলোকে ট্রেনিং দেওয়ার তত সময় হাতে ছিল না বলে। রানিও এলেন চিরাচরিত ঘোড়ার গাড়িতে নয়, মোটরগাড়িতে। গাউন পরেননি, একটা মর্নিং-ড্রেসে এলেন। মাথায় মুকুট নেই, বদলে হ্যাট, তাতে নীল ফুল বসানো। নীলরঙা ফুল নাকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর প্রতীক, গুঞ্জন। ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম রাজকীয় প্রতিবাদ?

সঙ্গে আছি

সংহতি: হাতে গোলাপ, হাতে হাত

এমন দৃশ্য আগে কেউ দেখেননি। উত্তর লন্ডনের ফিন্সবেরি পার্ক মসজিদের গেটে শয়ে শয়ে মানুষ, সবার হাতে গোলাপের গুচ্ছ। সবাই স্থানীয় অ-মুসলিম, মসজিদে প্রার্থনায় আসা মুসলিম মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন গোলাপগুলো। ফেজ টুপি আর লম্বা সাদা পোশাক পরা এক জন লোকের হাতে যেমন ফুলের তোড়া তুলে দিলেন শর্টস-টপ পরা অল্পবয়সি একটি মেয়ে। চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি, রমজানের উপবাস ভঙ্গের পর মসজিদ-ফেরত মুসলিমদের ওপর দিয়ে একটি লোক তার গাড়ি চালিয়ে দেয়। সে দিন গোলাপেরাই হয়ে উঠেছিল ভরসা আর সংহতির প্রতীক। গোলাপি, হলদে, সাদা, লাল গোলাপের সমুদ্র— যেন বহুবর্ণ, বহুভাষী লন্ডন! সন্ধের আলোয় চকচক করছিল সবার মুখগুলো। ফিন্সবেরি পার্ক স্টেশনে একটা বোর্ডে লেখা, ‘কঠিন সময় বেশি ক্ষণ থাকে না, থেকে যায় দৃঢ়চেতা মানুষগুলোই। একসঙ্গে থাকুন। সব্বাই।’ পাতাল রেলের এক যাত্রী টুইট করেছিলেন লেখাটা। মুহূর্তে ভাইরাল।

আপ্লুত রোওলিং

ফিন্সবেরি পার্কে জঙ্গি হানার সন্দেহভাজনকে উন্মত্ত জনতার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন এক ইমাম, জেনে জে কে রোওলিং আপ্লুত। ভ্যানের চালককে জনরোষ থেকে বাঁচিয়ে মহম্মদ মাহমুদ নামের সেই ইমাম এখন নায়ক। হ্যারি পটারের স্রষ্টার টুইট, ‘এই অসমসাহসিক ঘটনা জেনে চোখে জল এল। আশা করি ইমাম তাঁর যোগ্য সম্মান পাবেন।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন