লন্ডন ডায়েরি

ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর করা পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, লোকটির ত্বক ছিল কালো। গবেষণা বলছে, ৭০০০ বছর আগে ইউরোপীয়দের ত্বকে পিগমেন্টেশন ছিল।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:০০
Share:

পূর্বসূরি: ‘চেডার ম্যান’

গায়ের রং কালো ছিল ব্রিটেনের আদি মানবের

Advertisement

যাঁরা এত দিন ভাবতেন ব্রিটেনের মানুষজন সব শ্বেতাঙ্গ ছিলেন, তাঁদের ভাবনা-বদলের সময় এসেছে। কারণ ৯০০০ বছর আগে ব্রিটেনে বাস করা মানুষটির গায়ের রং ছিল কালো, চোখ নীল। ১৯০৩-এ সমারসেটের চেডার গিরিখাতের এক গুহায় আবিষ্কৃত হয় প্রথম ‘ব্রাইটন’-এর কঙ্কাল। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চেডার ম্যান’। আজকের ব্রিটেনবাসী সেই একই জিনসমষ্টি থেকে আগত বলে মনে করা হয়। ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর করা পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, লোকটির ত্বক ছিল কালো। গবেষণা বলছে, ৭০০০ বছর আগে ইউরোপীয়দের ত্বকে পিগমেন্টেশন ছিল। চেডার ম্যান-এর উত্তরপুরুষদের মতো যে-সব মানুষ কম সূর্যালোকযুক্ত স্থানে থাকতেন, তাঁদের ত্বকের রং ক্রমশ হালকা হতে শুরু করে। থ্রি-ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তিতে চেডার ম্যান-এর মুখাবয়ব বানিয়ে গবেষকরা বলছেন তাঁর ঘন নীল চোখ, কালো চুল, গালের হাড়ের কথা। চেডার ম্যান-এর পূর্বপুরুষরা ১১,৭০০ বছর আগে ব্রিটেনে এসেছিলেন বলে মনে করা হয়। চ্যানেল ফোর-এ আজই দেখানো হবে এক তথ্যচিত্র, সেখানেই জানা যাবে এই সব।

Advertisement

অগ্রণী স্মরণে

ব্রিটেনে মেয়েদের ভোটদানের অধিকার লাভের শতবর্ষ পূর্তিতে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ঘোষণা করেছেন, এই বসন্তে শ্রদ্ধা জানানো হবে ৫৯ জন নারী-পুরুষকে, যাঁরা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এ-বছরই পার্লামেন্ট স্কোয়ারে বসছে সাফ্রাজেট নেত্রী মিলিসেন্ট ফসেট-এর মূর্তি, সেই মূর্তিতে সম্মান জানানো হবে তাঁদেরও। তালিকায় ভারতীয়দের মধ্যে আছেন ললিতা রায়, ১৯০৮ সাল থেকে লন্ডন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে ইন্দ্রলাল রায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিমানচালক ছিলেন, মরণোত্তর ‘ডিসটিংগুইশড ফ্লায়িং ক্রস’ পান। আছেন মহারাজা দলীপ সিংহের মেয়ে সোফিয়া দলীপ সিংহ। ‘উইমেন’স সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিকাল ইউনিয়ন’-এর সদস্য ছিলেন তিনি, মেয়েদের ভোটদানের অধিকারের দাবিতে এমেলিনা প্যাঙ্কহার্স্ট-এর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট-মুখী ৪০০ জনের বিশাল এক সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাফ্রাজেট আন্দোলনে সোফিয়ার অবদানের কথা মনে রেখে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশিত হয়েছে।

রানি, ডেভিড, প্লাস্টিক

প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযানে এ-বার স্বয়ং রানিও। বন্ধু স্যর ডেভিড অ্যাটেনবরো তাঁর তথ্যচিত্র ‘ব্লু প্ল্যানেট-টু’তে দেখিয়েছেন সমুদ্রপ্রাণের উপর প্লাস্টিকের কুপ্রভাব, তাতেই প্রাণিত রানি। নিজের প্রাসাদগুলিতে প্লাস্টিকের স্ট্র ও বোতল নিষিদ্ধ করেছেন। বছরের পর বছর প্লাস্টিকের স্ট্র থেকে যায় সমুদ্রে, কচ্ছপ বা মাছের নাকে-মুখে আটকে প্রাণ বিপন্ন করে। রানিরই সমবয়সি স্যর ডেভিড তাঁর তথ্যচিত্রের মাধ্যমে প্লাস্টিক-বিরোধী অভিযান শুরু করেছেন, সেগুলি দেখেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এখন থেকে প্রাসাদের সভায় জল দেওয়া হবে কাচের বোতল থেকে, প্রাসাদ চত্বরের কাফে থেকে প্লাস্টিক স্ট্র তুলে নেওয়া হবে।

রাজকীয় সমাধি

অতীত: রানি ভিক্টোরিয়ার সমাধি

উইন্ডসর কাসল-এর কাছে ফ্রগমোর-এ রানি ভিক্টোরিয়ার সমাধি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে এক দশকেরও বেশি সময় পর। ভিক্টোরিয়া ও তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্ট পাশাপাশি সমাধিস্থ এখানে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এই সমাধিস্থলের দরজা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল ২০০৭-এ, এখন সংস্কার করে পুরনো রূপে ফিরিয়ে এনে সবার জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। উইন্ডসরের নিজস্ব প্রাঙ্গণের মধ্যে অবস্থিত এই সমাধিসৌধ বানিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া নিজে, ১৮৬২-তে প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর কয়েক মাস পরে। স্বামীর সমাধি দেখতে যেতেন প্রায়ই। ১৯০১ সালে রানির মৃত্যুর পর তাঁকেও সেখানে সমাধিস্থ করা হয়। ইতালীয় ভাস্কর ব্যারন কার্লো মারোচেত্তি নির্মিত, রানি ও প্রিন্সের মর্মরমূর্তিও আছে এখানে। ফ্রগমোর হাউস-এই প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কল-এর সান্ধ্য রিসেপশন পার্টি হওয়ার কথা। ওঁদের বাগ্‌দানের ছবিও তোলা হয়েছিল এখানেই।

মানুষের পাশে

প্রিন্সেস ডায়ানা ছিলেন ‘পিপল’স প্রিন্সেস’। প্রায়ই চলে যেতেন গৃহহীন, এডস-আক্রান্ত, ল্যান্ডমাইনে আহত মানুষের কাছে। মে মাসে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে যাঁর বিয়ে, সেই মেগান মার্কলও এখন সেবাকাজে মগ্ন। গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের শিকার মানুষের কাছে গিয়েছেন দু’বার, কাউকে না জানিয়ে। হ্যারিও সঙ্গে ছিলেন না। গিয়েছিলেন আল-মানার মসজিদেও, সেখানকার কর্মীরা গ্রেনফেল-কাণ্ডে দুর্গতদের সেবা করছেন খাবার, আশ্রয় দিয়ে। মেগানের প্রশংসায় স্বেচ্ছাসেবকরা তাই পঞ্চমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন