গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পার্ক স্ট্রিটের ক্যাথিড্রাল অথবা ময়দানে পিকনিক, চিড়িয়াখানা দেখা থেকে নিক্কো পার্কের রোমাঞ্চ অথবা প্রেক্ষাগৃহে ভিড়। বাঙালির কাছে একসময় বড়দিন ছিল এমনই। তখন রিল্স-যুগের সঙ্গে পরিচিত ছিল না বাঙালি। ভিড় এ়ড়িয়ে ‘ইনস্টাগ্রামেব্ল’ কফিশপের আড্ডার সঙ্গেও অভ্যস্ত ছিল না তারা। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলাই নিয়ম। টলিপাড়ার জেন-জ়ি এই দিনটি কী ভাবে উদ্যাপন করেন? তাঁরা কি সান্টাক্লজ়ের উপহারের অপেক্ষায় থাকেন আজও?
ইতিমধ্যেই টলিপাড়ার পরিচিত মুখ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-কন্যা হিয়া চট্টোপাধ্যায়। বড়দিনের মরসুম অর্থাৎ এই ডিসেম্বর খুব পছন্দের তাঁর। কী ভাবে উদ্যাপন করেন এই সময়টা? অভিনেত্রী বলেন, “দুর্গাপুজোর পরে ক্রিসমাস আমার সবচেয়ে প্রিয় উৎসবের সময়। বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করার পরিকল্পনা আছে। ছোটবেলা থেকে মা ভীষণ সুন্দর করে বড়দিন উদ্যাপন করতেন। ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম খাটের চারপাশে যে যে খেলনা প্রয়োজন, সব রয়েছে। দারুণ স্মৃতি রয়েছে ওই সময়ের। একবার মনে আছে একটা ব্যাডমিন্টন র্যাকেট আনা হয়েছিল, সেটা আগেই খুঁজে পেয়ে গিয়েছিলাম। তার পরেই ধীরে ধীরে বুঝতে পারি যে সান্টা আসলে মা-বাবাই। আর সেটা তো সত্যিই, মা-বাবার থেকে বড় উপহার আর কেউ দেয় না।”
‘সিক্রেট সান্টা’র থেকে কোন উপহার পেলে সবচেয়ে খুশি হবেন হিয়া? অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি, “এই বছরের সবচেয়ে বড় উপহার পেয়ে গিয়েছি, আমার প্রথম ছবি। বড়দিনের কয়েক দিন পরেই, ফেব্রুয়ারিতে আমার প্রথম ছবি মুক্তি পাবে। এর থেকে বড় উপহার তো আর হতে পারে না এই বছর।”
বড়দিন বলতেই নাটকের মরসুম বোঝেন টলিপাড়ার জেন-জ়ি অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। পর পর এই সময় জুড়ে নাটকের অনুষ্ঠান থাকে তাঁর। তা নিয়েই দিনভর মহড়া চলেছে গত কয়েক দিন। একজন মঞ্চাভিনেতা হিসাবে তাই এই সময়টা তাঁর খুব কাছের। নতুন প্রজন্মের হলেও চারপাশে ঘটে চলা সমস্ত কিছু নিয়ে সব সময়ে সচেতন থাকেন তিনি। স্পষ্ট মতামতও রাখেন। তাই সান্টার থেকে কী চান, প্রশ্ন করতেই ঋতব্রত বলেন, “সত্যিই যদি কিছু চাওয়া যেত, একটাই জিনিস চাইতাম। মানুষজনকে যেন ভাল ও সুস্থ রাখেন তিনি। বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) দিন দিন যে দিকে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই চিন্তার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর ‘একিউআই’-এর ‘কিউ’ সরিয়ে দিলে ‘এআই’ অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও যে দিকে যাচ্ছে, সেটাও চিন্তার। মানুষ কত দিন কর্মক্ষম থাকবে সেটা সত্যিই উদ্বেগের। মানুষ যেন মানুষ থাকে। রোবট না হয়ে যায়।”
উপহারে ভরিয়ে রাখে সান্টাক্লজ়। টলিপাড়াতে কি কারও মধ্যে সান্টার গুণাবলি দেখতে পান ঋতব্রত? অভিনেতার উত্তর, “আমার চোখে ইন্ডাস্ট্রির সেরা সান্টাক্লজ় হলেন দর্শক। তাঁদের ছবি দেখাই আমাদের কাছে উপহার।” তবে অভিনেত্রী সৃজা দত্তের চোখে ইন্ডাস্ট্রির সান্টাক্লজ় একজনই। তিনি হলেন দেব। কারণ জানতে চাইলে ‘বাঘাযতীন’ ছবির অভিনেত্রী বলেন, “আমার ধারণা দেবদা-ই হবে আমার ‘সিক্রেট সান্টা’। কারণ ওঁর সঙ্গেই আমার কাজের শুরু। দেবদা-ই আমার সান্টা হয়ে আরও দুটো ছবি দিয়েছে, আমার ডেবিউ ছবি দিয়েছে।” এমনকি নিজে ‘সিক্রেট সান্টা’ হলেও দেবকেই উপহার দিতে চান সৃজা। ২৫ ডিসেম্বর দেবের জন্মদিন। তাই সৃজা এই দিন তাঁকেই উপহার দিতে চান। কিন্তু কী উপহার, তা বলতে চাননি। তাঁর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “বলব না, সিক্রেট। জন্মদিন তো, সিক্রেট উপহার পাঠাব।”
বেড়াতে ভালবাসেন অভিনেত্রী শ্রীমা ভট্টাচার্য। ২০২৫ জুড়েও তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু বড়দিন নিয়ে তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই। বরং বাড়িতে পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন। পাশাপাশি, ছোটবেলার স্মৃতিতে ডুব দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সকাল থেকেই মনে হচ্ছে, খুব তা়ড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলাম। একটা সময়ে মোজার জায়গায় বড় বাজারের ব্যাগ ঝুলিয়ে দিতাম যাতে বেশি উপহার পাওয়া যায়। পরে বুঝলাম এই উপহারগুলো আসলে বাবা দেয়। আমি কিছুটা বড় হওয়ার পরে ভাইয়ের ‘সিক্রেট সান্টা’ হতাম। টাকা জমিয়ে ওর জন্য উপহার কিনতাম। এখন সব কিছু বদলে গিয়েছে কেমন। তবে বড়দিনে মা ভালমন্দ রান্না করছে। তাই বাড়িতেই থাকছি।”
একটা সময়ে উপহারের প্রত্যাশা থাকলেও, আজ শুধুই সান্টার থেকে জীবনে শান্তি চান শ্রীমা। অভিনেত্রীর কথায়, “এই বছর ওড়িশা থেকে বেড়ানো শুরু করেছিলাম। তার পরে মহাকুম্ভ, মেঘালয়, মুম্বই, পুরী, তাইল্যান্ড, হৃষীকেশ, উত্তরবঙ্গ-সহ অনেক ঘুরেছি। কোনওটাই পরিকল্পনা করে যাইনি। খুব ভালই কাটিয়েছি। তাই আলাদা করে কিছু আর চাই না। শুধু চারপাশে শান্তি আর মানবতা বজায় থাকুক।”