লন্ডন ডায়েরি

পাঁচ সপ্তাহ পরেও টিকে আছেন বাঙালি তরুণ, দু’বার পেয়েছেন ‘স্টার বেকার’ শিরোপা। ২৩ বছর বয়সে রাহুল কলকাতা থেকে ব্রিটেনে আসেন পিএইচ ডি করতে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০৪
Share:

কলকাতার ছেলের কেকে মেতেছে শো

Advertisement

কলকাতার বছর ত্রিশের এক বাঙালি ছেলের নাম এখন ব্রিটেনের ঘরে ঘরে। কারণ, তিনি জিভে জল-আনা কেক বানান। রাহুল মণ্ডল সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া শো ‘দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ’ (জিবিবিও)-এর বারো জন প্রতিযোগীর অন্যতম। পাঁচ সপ্তাহ পরেও টিকে আছেন বাঙালি তরুণ, দু’বার পেয়েছেন ‘স্টার বেকার’ শিরোপা। ২৩ বছর বয়সে রাহুল কলকাতা থেকে ব্রিটেনে আসেন পিএইচ ডি করতে। সেই সময়েই নতুন সব রন্ধনশৈলীর দরজা খুলে যায় তাঁর কাছে। তাঁর বেকিং পদ্ধতিতে পুব-পশ্চিমের হাত ধরাধরির শুরুও তখনই। থাকতেন রদারহাম-এ। তাঁর কেক বানানোর কারণটাও মজার: কেকের সূত্রে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা! সাড়া পড়ে গিয়েছিল তাতে। তবে পাঁচ বছর আগেও কিন্তু ‘জিবিবিও’ নিয়ে রাহুলের কোনও ধারণা ছিল না। এক সহকর্মীর পীড়াপীড়িতেই তাঁর এই শোয়ে আসা। এখন নিয়মিত কলকাতায় মাকে রেসিপি পাঠান। জিবিবিও-তে রাহুলের তৈরি ‘বনফায়ার নাইট সিনামন’ আর ‘জিঞ্জার কেক’-এ বিচারকরা মাত। কলকাতার দুর্গাপুজো মাথায় রেখে রাহুল বানিয়েছেন সিনামন বিস্কুট দিয়ে তৈরি এক অভিনব ঝাড়বাতি। ১৫০টা বিস্কুট ঠিক যেন ফুলের পাপড়ির মতো ছড়ানো। পাই তৈরির প্রতিযোগিতায় রাহুল এক বার পাই বানিয়েছিলেন মাংসের ঝোল আর ভাত দিয়ে! বানিয়েছেন কলকাতার শিঙাড়াও।

রাঁধুনি: ‘গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ’ শোয়ের টেন্ট-এ রাহুল মণ্ডল

Advertisement

লন্ডনে ‘ছোট্ট কলকাতা’

কলকাতা থেকে লন্ডনে যাওয়া তরুণ বাঙালিদের অনেকেই রীতিমতো রন্ধনপটু। ১৪ বছর আগে যখন প্রবীর চট্টোপাধ্যায় লন্ডনে আসেন, বাঙালি খাবার খুব মিস করতেন। তাই উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের কিলবার্ন-এর ছোট্ট কিচেনে রান্না শুরু করলেন, নিজের আর বন্ধুদের জন্য। খুব শীঘ্রই শুরু হল ‘সাপার ক্লাব’গুলোতে খাঁটি বাঙালি রান্না জোগান দেওয়া; প্রবীর তত দিনে বুঝে গিয়েছেন, কোন কোন স্বাদ ভাল ব্রিটিশদের প্রিয়। প্রবীর লন্ডনের কেন্দ্রে কোভেন্ট গার্ডেনে ওঁর নিজের বাঙালি রেস্তরাঁ খুলেছেন সম্প্রতি, নাম ‘লিটল কলকাতা’। মেনুতে পাওয়া যাচ্ছে ‘রয়্যাল বেঙ্গল মোচার চপ’, ‘ইলিশ মাছের ডিমভাজা’, ‘কলেজ স্ট্রিটের মাছের চপ’, ‘মুর্শিদাবাদের চিকেন মোগলাই’, ‘বাওয়ালি রাজবাড়ি সরষে মাছ’, ‘কালীঘাটের কষা মাংস’, ‘গলদা চিংড়ি মালাইকারি’, ‘লুচি-ছোলার ডাল’। ‘গড়িয়াহাটের ঘুগনি চাট’ আর ‘পাড়ার পেঁয়াজি’-ও পাওয়া যাবে। প্রবীরের ইচ্ছে, রেস্তরাঁর দেওয়াল সাজাবেন কলকাতার ছবি, আলপনা আর সিনেমার পোস্টারে। পুজো এসে গেল, ক্যামডেন-এর দুর্গাপুজোতে ভোগ রাঁধার বরাতও পেয়েছেন। ওঁর রেস্তরাঁর মেনুতেও আছে ‘ঠাকুরবাড়ি খিচুড়ি’। স্বাভাবিক, কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের প্রধান পূজারির পদটা তাঁর পরিবার-পরম্পরাসূত্রে বাঁধা যে!

স্বাধীনতা মানে কী

সান্নিধ্য: নুর-এর মূর্তির পাশে অরুন্ধতী

১৯৯৭-এ বুকার পুরস্কার পেয়েছিল ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’, পরের কুড়ি বছর অরুন্ধতী রায় কাটিয়েছেন ভারতের সমস্যাদীর্ণ নানান জায়গা ঘুরে, প্রান্তিক মানুষের জন্য লড়াই করে। এ সপ্তাহে লন্ডনে এসেছিলেন এ বছরের ‘নুর ইনায়েত খান স্মারক বক্তৃতা’ দিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিজ়মের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নুর জীবন দিয়েছিলেন, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তাঁর মৃত্যু হয়। নুরের শেষ বলা শব্দ ছিল ‘মুক্তি’। মুক্তির প্রসঙ্গেই অরুন্ধতী বললেন, এখনকার ভারতে মুক্তি বা ‘আজ়াদি’র নানান অর্থ। কাশ্মীরিদের কাছে ভারতীয় সেনা ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার চিৎকার। দলিত মানুষের কাছে স্বাধীনতার কী মানে, যখন সে বিয়েতে ঘোড়ায় চড়ে যেতে পারে না? মুসলমান মানুষটির কাছে মুক্তি কী, যখন সে কী খাচ্ছে না খাচ্ছে তার জন্য তাঁকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে? অরুন্ধতী কথা বলেছেন গাঁধী, অম্বেডকর নিয়েও।

নব রূপে মনদীপ

৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে ‘ডক্টর হু’, ব্রিটেনে সব চেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ়গুলোর একটি। এই রোববারেই বিবিসি-তে শুরু হল একাদশতম সিজ়ন। বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন হয়েছে এ বার: নতুন ডক্টর হু-র ভূমিকায় এক নারী, জোডি হুইটেকার। ডক্টর-এর সঙ্গীটিও এক এশীয় নারী, ইয়াসমিন খান নামের এক পুলিশ। অভিনয়ে মনদীপ গিল। বছর ত্রিশের মনদীপ থাকেন লিডস-এ। ডক্টর হু-র সূত্রে দর্শকপ্রিয়তা পাবেন মনদীপ, আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন