লন্ডন ডায়েরি

কয়েক বছর পর লিডস-এ একটা বক্তৃতায় শান্তনু যখন ওই জিনিসগুলোর ছবি দেখাচ্ছেন, দর্শকাসনে এক ইংরেজ প্রায় লাফিয়ে উঠে, শান্তনুকে থামিয়ে বললেন, এ ছবি তো ‘জন সেন’-এর!

Advertisement

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রথম বাঙালি শহিদ তিনি

Advertisement

২০০৫ সালে লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক শান্তনু দাস চন্দননগরে দুপ্লে হাউস ও মিউজ়িয়াম ঘুরে দেখছিলেন। একটা ঘরে ক্যাবিনেটের মধ্যে হঠাৎ নজরে পড়ল একটা চশমা। চশমার মালিক ‘জে এন সেন, এম বি, প্রাইভেট, ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট’। ১৯১৬-র ২২-২৩ মে ফ্রান্সে যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া প্রথম বাঙালি তিনিই। আরও কয়েকটা জিনিস ছিল: একটা রেজ়র, এক ইউরোপীয় তরুণীর ছবি, একটা বই, চামড়ার মানিব্যাগ। শান্তনু বুঝলেন, এ সবের মধ্যেই লুকিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতের যোগসূত্র। শুরু হল দীর্ঘ গবেষণা। কয়েক বছর পর লিডস-এ একটা বক্তৃতায় শান্তনু যখন ওই জিনিসগুলোর ছবি দেখাচ্ছেন, দর্শকাসনে এক ইংরেজ প্রায় লাফিয়ে উঠে, শান্তনুকে থামিয়ে বললেন, এ ছবি তো ‘জন সেন’-এর! তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন, এখানে বিশ্বযুদ্ধের স্মারক প্যানেলে শহিদ-তালিকায় তাঁর নামও আছে! শান্তনু আরও জানলেন, জে এন সেন ছিলেন ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের একমাত্র অ-শ্বেতাঙ্গ সদস্য। যুদ্ধ-শুরুর দিকে তিনি যোগ দেন লিডস প্যালস ব্যাটেলিয়নে। সহযোদ্ধা আর্থার ডালবির স্মৃতিচারণায় তিনি ব্যাটেলিয়নের সব চেয়ে শিক্ষিত মানুষ, সাতটা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। তাঁর মৃত্যুর পর, ২ জুন ১৯১৬ ইয়র্কশায়ার ইভনিং পোস্ট-এ শোকবার্তা বেরিয়েছিল। এই সব নিয়েই শান্তনুর নতুন বই ‘ইন্ডিয়া, এম্পায়ার অ্যান্ড ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার’, প্রকাশিত হবে ২ নভেম্বর।

সাহসী: জে এন সেনের ছবি ও তাঁর চশমা। ডান দিকে, শান্তনু সেন

Advertisement

হঠাৎ নুরের জন্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ‘নায়ক’ তিনি, মরণোত্তর ‘জর্জ ক্রস’ পেয়েছিলেন। ব্রিটেনে নতুন ৫০ পাউন্ডের নোটের পিছনে নুর ইনায়েত খানের মুখ বসানোর দাবি জোরদার। সমর্থন জানিয়েছেন রাজনীতিক ও ইতিহাসবিদরাও। যদি সত্যিই তা হয়, ব্রিটিশ পাউন্ডের নোটে এই প্রথম সংখ্যালঘু জাতিভুক্ত কোনও মানুষের মুখ স্থান পাবে। অনলাইন আবেদনে এরই মধ্যে ৭০০০-এরও বেশি মানুষ সই করেছেন। ২০২০-তে চালু হবে ৫০ পাউন্ডের প্লাস্টিক নোট, সেখানে কার মুখ বসতে পারে, ব্রিটেনের মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিল ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। নুরের সমর্থনে প্রথম এগিয়ে আসা মানুষদের মধ্যে ছিলেন কনজ়ার্ভেটিভ পার্টির সাংসদ টম টুগেন্ডহ্যাট, ব্যারনেস ওয়ারসি। টিপু সুলতানের বংশধর নুরের জন্ম মস্কোতে, বড় হয়ে ওঠা লন্ডন আর প্যারিসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তিনি উইমেন’স অক্সিলিয়ারি এয়ারফোর্স-এ যোগ দেন। গুপ্তচর হিসেবে নাৎসি-অধিকৃত প্যারিসে তাঁকে নিয়োগ করা হয়। নুর পরে ধরা পড়েন, অকথ্য নির্যাতনের পর তাঁকে মেরে ফেলা হয় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে।

মালালার ছবি

লন্ডনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে উদ্বোধন হল ২০১৪ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের একটি ছবি। ছবির শিল্পী শিরিন নেশাত। এ বছর মার্চে শিরিন মালালার এই ছবিটি তুলেছিলেন। ছবির উপরে শিরিন হাতে লিখে দিয়েছিলেন ‘মালালা টু’ নামে পেশওয়ারের কবি রহমান শাহ সায়েল-এর লেখা একটা কবিতা। মালালা বলেছেন, ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে ব্রিটেনের বরেণ্য ও প্রভাবশালী লেখক, শিল্পী ও দেশনেতাদের সঙ্গে তাঁরও ছবি রাখায় তিনি খুবই সম্মানিত বোধ করছেন। মালালা এখন বার্মিংহামের বাসিন্দা, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে।

প্রতিকৃতি: নিজের ছবির সামনে মালালা

দানব ও দেশভাগ

বিবিসি জানিয়েছে, তাদের জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন টিভি সিরিজ় ‘ডক্টর হু’-তে কাহিনিসূত্রে দেখানো হবে ভারত-পাকিস্তান ভাগও। সিরিজ়ের ষষ্ঠ পর্ব ‘ডেমনস অব দ্য পঞ্জাব’-এ দেখা যাবে, ডক্টর হু আসছে ১৯৪৭-এর ভারতে, কারণ তাঁর সহকারী ‘ইয়াজ়’ তথা ইয়াসমিন খান তাঁর ঠাকুমার গোপন অতীত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। এই পর্বটি লিখেছেন এশীয় লেখক বিনয় পটেল। এতে দেখা যাবে, ’৪৭-এ দেশভাগের টালমাটাল পরিস্থিতিতে ইয়াসমিন তাঁর ঠাকুমাকে খুঁজছে, আর সেই সময়েই এসে হাজির হচ্ছে দানব আর ভিনগ্রহীরাও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন