Coronavirus

মারি ও মিথ্যা

হাস্যরস অতি উত্তম বস্তু, কিন্তু যে কোনও বিষয় লইয়াই কাণ্ডজ্ঞানহীন হাসাহাসি, আমাদের লঘু-গুরু জ্ঞান গুলাইয়া দেয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০০:২৪
Share:

করোনাভাইরাসের আতঙ্ককে কাজে লাগাইয়া বহু ফেক নিউজ় বা ভুয়া সংবাদ ছড়াইতেছে, আর ভারত যে হেতু বিশ্বে সর্বাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর আস্তানা, এই দেশের ক্ষেত্রে তাহার প্রকোপ সর্বাধিক হইবার সম্ভাবনা। যদিও মন্ত্রীরা শাস্তির ভয় দেখাইতেছেন, ইতিমধ্যে পুলিশ কয়েক জনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করিয়া দিয়াছে, কিন্তু নিরন্তর আসিতেছে তথাকথিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞপ্তি, যাহাতে বলা হইতেছে, আইসক্রিম বা শীতল খাদ্য খাইবেন না, বা ঘন ঘন উষ্ণ নুনজলে গার্গল করিলেই ভাইরাসটি হইতে সুরক্ষিত থাকিবেন। অবশ্য ইটালিতে হ্যান্ডবিল পর্যন্ত বিলি করা হইয়াছে, যেখানে লেখা, কেহ এই ভাইরাসের টিকার ছয়টি ডোজ় (যাহাতে এক বৎসরের সুরক্ষা নিশ্চিত) কিনিতে পারেন, অমুক ঠিকানায় ৫০ ইউরো পাঠাইলে। ভারতে ব্যাপারটি এমন স্থূল অর্থলোভী নহে। এখানে মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে মিথ্যা রটাইয়া থাকে। কেহ বলিতেছে ঘন ঘন কাপড় কাচিতে হইবে, কেহ বলিতেছে ভিটামিন-সি ও লেবুর রস খাইতে হইবে। গোমূত্র ও গোবর খাইবার নিদান তো রহিয়াছেই, কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের খাদ্যাভ্যাসের বাপান্ত করা হইতেছে ও পরিশেষে অবশ্যই হিন্দুত্বের জয়গান। কিছু ইউটিউব ভিডিয়োতে দেখা যাইতেছে, চিনে ভাইরাসাক্রন্তদের গুলি করে হত্যা করা হইতেছে। ভিডিয়োগুলি হয় প্রাচীন, বা প্রকৃত গুলিবর্ষণের ঘটনাই নহে, ‘মক ড্রিল’ বা মহড়ামাত্র। অথবা ছায়াছবির দৃশ্য। কোনও ভিডিয়োর দাবি, চিনের এক গবেষণাগার হইতে এই ভাইরাস ছড়াইয়াছে, সেইখানে এইটিকে ‘তৈয়ার’ করা হইতেছিল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির উপর প্রয়োগ করিবার জন্য। এই নীচ রটনাগুলির উদ্দেশ্য ঘৃণা ছড়াইয়া দেওয়া, যাহা মারণ-ভাইরাসের ন্যায়ই ভয়াবহ।

Advertisement

করোনাভাইরাস লইয়া বহু রসিকতাও চলিতেছে। হাস্যরস অতি উত্তম বস্তু, কিন্তু যে কোনও বিষয় লইয়াই কাণ্ডজ্ঞানহীন হাসাহাসি, আমাদের লঘু-গুরু জ্ঞান গুলাইয়া দেয়। যদি আমরা অতিমারির কালেও তাহা লইয়া খুব কৌতুকের সঞ্চার ঘটাই, তাহা ফেক নিউজ়ের ন্যায় ক্ষতিকারক নহে বটে, কিন্তু তাহা আমাদের সঙ্কটমুহূর্তের গুরুত্ব হইতে মনোযোগ সরাইয়া দিতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের মূল কর্তব্য সচেতনতা ও বিপদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। অস্ট্রেলিয়ায় টয়লেট পেপার ফুরাইয়া যাওয়া লইয়াও মিম হইতেছে, মাস্ক বা মুখোশ লইয়া সর্বত্র এমন মিম হইতেছে, বুঝা দায় কে সত্যই ঘরোয়া বস্তুর সাহায্যে মুখোশ নির্মাণের পরামর্শ দিতেছে, কে রসিকতা করিতেছে। সর্বোপরি, এই প্রকারের রসিকতা আক্রান্তের ও তাহার প্রিয়জনের প্রতি, আক্রান্ত হইবার ভয়ে বেপথু মানুষের প্রতি, অত্যন্ত অসংবেদনশীল চিত্তবৃত্তির পরিচায়ক। যাহা বহু মৃত্যুর, তীব্র ভীতির, উদ্বেগের কারণ, যাহার কারণে বিশ্বব্যাপী ক্ষতির পরিমাপ করা দুঃসাধ্য, তাহা লইয়া হাসিয়া লুটাইয়া পড়া খুব সভ্য কর্ম নহে। অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দল ছাত্রছাত্রী করোনাভাইরাস থিমের পার্টি আয়োজন করিবার পরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এশীয়-মার্কিন জোট’ হইতে এটিকে ‘হেট ক্রাইম’ বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। ঠিক ঘৃণাবাচক অপরাধ না হইলেও, শ্রাদ্ধবাসর বা দুর্ভিক্ষ উপলক্ষে আমোদ-মজলিশ বসাইয়া দিলে, সে কার্যটিকে অনুভূতিহীন ও অশিষ্ট তো বলা যাইতেই পারে। ইহা ভাইরাসের ন্যায় না ছড়াইলেই মঙ্গল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন