সম্পাদকীয় ১

গণিত ও রাজনীতি

পাটিগণিতের সহিত রাজনীতির মিশ্রণ ঘটাইতে পারিলে সাফল্যের মাত্রা বাড়ে, গভীরতাও। কর্নাটকের উপনির্বাচনে তেমন জোরদার সাফল্যের সঙ্কেত রহিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

পাটিগণিতে ভুল করিয়াও নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায়, কিন্তু তাহা সহজসাধ্য নহে। আবার শুধুমাত্র পাটিগণিতের জোরে যে নির্বাচনী সাফল্য, তাহার ভিত দুর্বল। পাটিগণিতের সহিত রাজনীতির মিশ্রণ ঘটাইতে পারিলে সাফল্যের মাত্রা বাড়ে, গভীরতাও। কর্নাটকের উপনির্বাচনে তেমন জোরদার সাফল্যের সঙ্কেত রহিয়াছে। আপাতত সঙ্কেতমাত্র, কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে সঙ্কেতের মূল্য কম নহে, বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের উদ্যোগপর্ব যখন শুরু হইয়া গিয়াছে। তিনটি লোকসভা ও দুইটি বিধানসভা আসন মিলাইয়া এই উপনির্বাচনে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের প্রাপ্তি ৪, বিজেপির ১। কিন্তু এই ৪-১ পরিসংখ্যান দিয়া জোটের সার্থকতার সম্পূর্ণ পরিমাপ হয় না। প্রথমত, বল্লারির লোকসভা আসনটি বিজেপির দীর্ঘ দিনের দখল হইতে বিপুল ব্যবধানে ছিনাইয়া লইয়াছে প্রতিদ্বন্দ্বী জোট, বিজেপি প্রতিপক্ষের হাতে থাকা কোনও আসন দখল করিতে পারে নাই। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ আসনেই জয়পরাজয়ের ব্যবধান বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়াছে, অর্থাৎ যেখানে তাহারা হারিয়াছে সেখানে ব্যবধান বাড়িয়াছে, যেখানে জিতিয়াছে সেখানে ব্যবধান কমিয়াছে। তৃতীয়ত, বিজেপির নিজস্ব ভোটেও ভাটার টান, বল্লারিতে সেই টান বিশেষত তীব্র। সামগ্রিক বিচারে, কর্নাটকে জোট সফল।

Advertisement

এই সাফল্যের একটি মাত্রা নিছক পাটিগণিতের। কংগ্রেস এবং জেডিএস ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে লড়িয়াছিল, এখন তাহারা জোট বাঁধিয়াছে, সুতরাং উভয়ের ভোট একত্র হইয়াছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই দল জোট না বাঁধিবার ফলে বিধানসভা ত্রিশঙ্কু দশা প্রাপ্ত হয়। তাহার পরে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে অ-বিজেপি সরকার গঠনের তৎপরতা, মধ্যরাত্রে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ এবং কংগ্রেসকে শরিক করিয়া জেডিএস নেতা কুমারস্বামীর গদিলাভ। সেই অভিজ্ঞতাই এই দুই দলকে জোট বাঁধিয়া ভোটে লড়িবার প্রেরণা দিয়াছে। ফলও মিলিল হাতে হাতে। লক্ষণীয়, ইহা কেবল দুই শরিকের নিজস্ব ভোটের যোগফল নহে। দুই দল গত পাঁচ মাসে যে ভাবে সরকার চালাইয়াছে, তাহার সুপ্রভাবও পড়িয়াছে ভোটারদের মনে। বিজেপি আপন স্বার্থেই কংগ্রেস-জেডিএস জোটকে সাময়িক এবং ভঙ্গুর বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে তৎপর ছিল, জোট ভাঙিতে অন্য ভাবেও যে তৎপর ছিল না বা থাকিবে না, তাহাও হলফ করিয়া বলা যায় না। কিন্তু এ যাবৎ তাহাতে লাভ হয় নাই। দৃশ্যত, আগামী লোকসভা নির্বাচনে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য দুই দলই প্রস্তুত।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহত্তর ছবিটিও বিশেষ প্রাসঙ্গিক। কেবল কর্নাটকে নহে, অন্ধ্রপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যেও বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা অগ্রসর। এবং ক্রমশ বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতার বয়ানে রাহুল গাঁধী সেই জোটের স্বাভাবিক কেন্দ্রীয় শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করিতেছেন। কুমারস্বামী এবং চন্দ্রবাবু নায়ডু সেই স্বীকৃতি স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়া দিয়াছেন। ইহা মূলত রাজনৈতিক বাস্তবের স্বীকৃতি। ক্ষমতাসীন দল তথা জোটের বিরুদ্ধে জোট বাঁধিয়া লড়িতে চাহিলে বিরোধী জোটেরও একটি ‘কেন্দ্র’ আবশ্যক। অতীতের তুলনায় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় গুরুত্ব নিশ্চয়ই এখন অনেক কম, কিন্তু তাহাকে বাদ দিয়া একটি কার্যকর নির্বাচনী সংহতি নিশ্চিত করা কঠিন। শেষ অবধি সেই সংহতি বিরোধীরা খুঁজিয়া পাইবেন কি না, এখনই বলা শক্ত— কিছু রাজ্যে আঞ্চলিক নানা দল বা নেতা-নেত্রী কংগ্রেসকে বাদ দিয়াই ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ গঠনের কথা ভাবিতেছেন, কখনও কখনও বলিতেছেনও। এই টানাপড়েন হইতে বিরোধী শিবিরের কোন রূপ ও চরিত্র উঠিয়া আসে, আগামী কয়েক মাসে, হয়তো বা কয়েক সপ্তাহে তাহাই ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন