#মিটু আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের সর্বত্র।
বিশ্বকে কাঁপাইয়া দিয়াছে #মিটু আন্দোলন। পুরুষতন্ত্র সম্প্রতি এত বড় আঘাত আর পায় নাই। মহীরুহপ্রতিম ক্ষমতাবান পুরুষেরা লজ্জায় মুখ ঢাকিয়া নিজ ক্ষেত্র হইতে বহিষ্কৃত হইতেছেন, তাঁহাদের পদ কাড়িয়া লওয়া হইতেছে, কীর্তি কালিমালিপ্ত হইতেছে। কেহ বলিতেছেন, এই আন্দোলন অচিরে বিপ্লবের রূপ ধরিবে, কেহ বলিতেছেন ইহার মাধ্যমে নারীবাদ বহু পথ অগ্রসর হইল। কিন্তু এই মিটু-র অভিঘাত স্বরূপ, ওয়াল স্ট্রিটে এমন ত্রাহি ত্রাহি রব পড়িয়া গিয়াছে যে, একটি অলিখিত চুক্তি বহু সংস্থাতেই বলবৎ: নারী কর্মী নিয়োগ যথাসম্ভব এড়াইয়া চলো। বহু সংস্থায় নিয়ম জারি করা হইতেছে: নারী সহকর্মীর সহিত পুরুষ সহকর্মী রেস্তরাঁয় খাইতে যাইবে না, বিমানে চড়িয়া একত্রে কোথাও যাইতে হইলে পাশাপাশি বসিবে না, হোটেলে থাকিতে হইলে ভিন্ন তলে দুই জনের ঘর বুকিং হইবে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলিয়াছিলেন, তিনি তাঁহার স্ত্রী ব্যতীত কোনও নারীর সহিত আর বাহিরে খাইতে যান না, তাঁহার ন্যায়ই ‘রক্ষণ-পরিকল্পনা’ করিয়াছেন বহু ক্ষমতাবান মানুষ বা সংস্থা। কোনও উচ্চপদাধিকারী পুরুষ বলিতেছেন, জানালাহীন ঘরে নারী কর্মীর সহিত কখনওই মিটিং করা চলিবে না, এক জন বলিয়াছেন মিটিং যত গোপন হউক, কক্ষের দ্বার খোলা থাকিবে। ইহাতে, বলা বাহুল্য, সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছেন মহিলাগণ। এমনিতেই সর্বত্র নারীর তুলনায় পুরুষ অধিক সুবিধা পাইয়া থাকেন, প্রবল অর্থ ও ক্ষমতা যেই ক্ষেত্রগুলিতে ভোগ করা হয় সেইখানে নারীকর্মী চির কালই অপ্রতুল। বস্তুত ইহাও নারী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এই সকল ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির দাবি নারীবাদীদের বহু দিনের। যদি #মিটু-র ন্যায় বেগবতী নারী আন্দোলন করিতে গিয়া নারীদেরই পেশাগত সর্বনাশ হইয়া যায়, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। এক আইনজীবী বলিয়াছেন, এই পুরুষগুলি তো যৌন হয়রানির মামলা হইতে মুক্তি পাইতে গিয়া লিঙ্গবৈষম্যের মামলায় ফাঁসিয়া যাইবে!
কেবল ওয়াল স্ট্রিটে এই প্রবণতা সীমাবদ্ধ নাই, বিশ্বময় বহু কর্মক্ষেত্রেই, পুরুষরা ‘অবাঞ্ছিত’ সমস্যা এড়াইতে গিয়া, নারীদের আর স্বাগত জানাইতেছেন না। অনেক পুরুষের মতে এই আন্দোলন অতিরেক-ভিত্তিক, ইহা অনাবশ্যক নৈতিক শুদ্ধির দাবি জানাইতেছে, কোনও পুরুষের মতে ইহাতে সহকর্মীদের মধ্যে সহজতার বাতাবরণ সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া গিয়াছে। বরং একটি ভীতির মহামারি ছড়াইয়া পড়িতেছে। তাহা লইয়া বহু নারীবাদী সাতিশয় উল্লসিত, কারণ ভীতির আবহাওয়ায় নারীরা রহিয়াছেন বহু যুগ, আজ পুরুষেরা ভয় পাইলে তাহা এক প্রকার উচিত-প্রতিশোধ ও ন্যায়বিচার হিসাবে প্রতিভাত হইতেই পারে। বড় বড় সভায় কীর্তিমতী মহিলারা বিদ্রুপ করিয়া বলিতেছেন, এই বার পুত্র বাহিরে যাইবার পূর্বে মাতা সতর্ক করিয়া বলিবেন, রাত নয়টার পূর্বে বাড়ি ফিরিয়ো, নহিলে মিটু ধরিয়া লইবে। তাহাতে করতালি পড়িতেছে বিস্তর, কিন্তু বাস্তবে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অধিক পিছাইয়া পড়িবার এই ঘোরতর সমস্যার সমাধান সহজ হইতেছে না। যদি সত্যই নারী দেখিয়া পুরুষেরা ‘‘ওই মিটু, বাপ রে!’’ সুরে বাজিতে থাকেন, তাহা স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্কগুলিকেও হাস্যকর পর্যায়ে লইয়া ফেলিবে।
কিন্তু তাহা বলিয়া তো একটি সঙ্গত আন্দোলন প্রত্যাহার করিবার প্রশ্ন উঠিতে পারে না। পুরুষের এই ভীতি ও পলায়ন দেখিয়া মনে হয়, নারীরা নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করিতেছেন দেখিয়া, নিগ্রহকারী হিংস্র পুরুষের বিরুদ্ধে গর্জাইয়া উঠিতেছেন বলিয়া, পুংতন্ত্র ঘাবড়াইয়া দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হইয়া নিজ শিবিরের দ্বার রুদ্ধ করিবার সিদ্ধান্ত লইতেছে। সুস্থ মানবিক ও নৈতিক পরিবেশে, নারীর ন্যায্য আপত্তির কারণে নারীকেই শাস্তি দেওয়া চলিতে পারে না। এই পরিবেশ সুস্থ করিবার দায় পুরুষের। যে আন্দোলন সাম্যের পক্ষে কথা বলে, তাহাকে ঢাল খাড়া করিয়া বৃহৎ অসাম্যের পানে যাওয়া যাইতে পারে না। পুরুষকে বুঝিতে হইবে, তাহার ব্যবহারের খুঁত ধরিতে ও যেন তেন প্রকারেণ তাহাকে ফাঁসাইতে নারীরা বসিয়া নাই, নারীরা কাজ করিতে ও সহজ ভাবে শ্বাস লইতেই অফিসে আসিয়াছে। ফলে, পুরুষদেরই এমন ব্যবহার করিতে হইবে, যাহাতে নারীর অভিযোগের কোনও কারণ না থাকে। প্রতিবাদীগণকে দেউড়িতে নির্বাসিত করিয়া দাও— ইহা পুংতন্ত্রেরই প্রতিবর্ত ক্রিয়া। ইহার বিরুদ্ধে আরও একটি আন্দোলনের জন্ম হওয়া আবশ্যক।
যত্কিঞ্চিত্
কেরলে বিজেপি হরতাল ডাকল, কিন্তু এমন দিনে, যে শুক্রবার মোহনলালের নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। ব্যস, এমনি লোকে তো বটেই, এমনকী বহু বিজেপি সমর্থকও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপিকে থুড়ে দিয়েছে। অনেকে বলছে, এটা মোহনলালের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, যাতে সিনেমাটা ৫০০ কোটির ক্লাবে না ঢুকতে পারে। আসলে কোন জায়গায় কোন ধর্ম প্রধান, তা বুঝে রাজনীতি করতে হয়। সিনেমার ধর্মে আঘাত করলে রাজনীতির হিরোর ভিলেন বনতে এক সিনও লাগবে না!