নস্যাত্ করলেন বটে, কিন্তু খণ্ডন করতে পারলেন না

তিনি বিদ্রূপ ছুড়লেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন, গুরুত্বই দিচ্ছেন না রাহুল গাঁধীর ছোড়া বাণটাকে। মুখমণ্ডলে সকৌতূক হাস্য এবং জিহ্বায় ব্যঙ্গ নিয়ে তিনি অনুচ্চারিত প্রশ্ন তুলে দিলেন— প্রতিপক্ষের কি আদৌ কোনও রাজনৈতিক ওজন রয়েছে?

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৫
Share:

তিনি বিদ্রূপ ছুড়লেন। তিনি বোঝাতে চাইলেন, গুরুত্বই দিচ্ছেন না রাহুল গাঁধীর ছোড়া বাণটাকে। মুখমণ্ডলে সকৌতূক হাস্য এবং জিহ্বায় ব্যঙ্গ নিয়ে তিনি অনুচ্চারিত প্রশ্ন তুলে দিলেন— প্রতিপক্ষের কি আদৌ কোনও রাজনৈতিক ওজন রয়েছে? কিন্তু তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী একটি শব্দও খরচ করলেন না। একটি বারও বললেন না, অভিযোগগুলি সর্বৈব অসত্য।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর রাজনীতির ধাঁচটা অবশ্য এ রকমই। প্রতিপক্ষকে নস্যাৎ করার ভঙ্গি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ। গাঁধীনগরে হোক বা দিল্লিতে, ক্ষমতার বৃত্তে তিনি যখনই থেকেছেন, তখনই নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য নিজের চেয়ে অনেক কম ওজনের কোনও নামকে সামনে ঠেলে দিয়েছেন। মোদীয় রাজনীতির সেই চেনা নকশা মেনেই এ বারও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দিতে এগিয়ে এলেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, সম্বিৎ পাত্রদের মতো মাঝারি স্তরের নেতৃত্ব। কণ্ঠস্বরে আপ্রাণ আগুন এনে তাঁরা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করলেন বটে, কিন্তু খণ্ডন করতে পারলেন না। রাহুল গাঁধী মিথ্যা বলছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অপরাধে তাঁকে কাঠগড়ায় টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, এমন হুঁশিয়ারি শোনা গেল না।

ভারতের আইন বা সংবিধান অবশ্য কখনোই বলে না যে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে তিনি নিরপরাধ। ভারতীয় সংবিধান বরং বলে, যিনি অভিযোগ করছেন, অভিযোগ প্রমাণের দায়ও তাঁরই। এ কথাও সত্য যে কারও বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপরাধী বলা যায় না। কিন্তু তার পাশাপাশি এও সত্য যে জনমতভিত্তিক রাজনীতির প্রবাহ কোনও সুনির্দিষ্ট বিধি মেনে চলে না। সে প্রবাহ জনসাধারণের চেতনা, আবেগ, বিশ্বাস ইত্যাদির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী এক জন রাজনৈতিক নেতা, নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রনেতা। অন্য যে কোনও রাষ্ট্রনেতার মতো নরেন্দ্র মোদীর জীবন ও ক্রিয়াকলাপ জনপরিসরে উন্মুক্ত। জনমতভিত্তিক রাজনীতির প্রবাহকে নিজেদের অনুকূলে রাখার চেষ্টা নরেন্দ্র মোদীদের করতেই হয়। এ হেন ব্যক্তিত্বের দিকে দুর্নীতির কালিমা ছিটকে এলে, সে অভিযোগের খণ্ডন অবশ্যই জরুরি!

রাজধানী থেকে এক কণ্ঠস্বর মুখর হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। পূর্ব ভারত থেকে আরও এক কণ্ঠস্বর প্রধানমন্ত্রীর উচ্চকিত বিরোধিতা শুরু করেছে। কে বলতে পারে, কাল ভারতের দক্ষিণ প্রান্ত বা উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে আরও অনেক কণ্ঠ সরব হয়ে উঠবে না!

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও নানা অভিযোগ উঠেছে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে। যে ভঙ্গিমায় আজ নস্যাৎ করছেন সব অভিযোগ, সে দিনও সেই ভঙ্গিতেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন সব। কিন্তু সে দিনে আর এ দিনে ফারাক অনেক। দেশের এক প্রান্তে কোনও এক অঙ্গরাজ্যের প্রশাসক হওয়া আর বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্যে ফারাক অনেক। নরেন্দ্র মোদী যদি আগেকার মতো আজও এড়িয়ে যান জবাবটা, এমন একটা বার্তা চারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যার ফলাফল ধ্বংসাত্মক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন