Editorial News

সদিচ্ছা বোঝাতে প্রমাণ দিতে হয় বিশ্বাসযোগ্যতার

শান্তি স্থাপন বা সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর সদিচ্ছা রয়েছে বোঝাতে হলে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৪
Share:

পাকিস্তানের কার্যকলাপ কি ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পক্ষে ইতিবাচক? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সদিচ্ছা, শান্তি, সহাবস্থান— শব্দগুলোর মধ্যে যে ইতিবাচকতা রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই কোনও। কিন্তু শব্দগুলোর উচ্চারণ কতখানি সততার সঙ্গে করছে পাকিস্তান, তা নিয়ে সন্দেহ যথেষ্ট।

Advertisement

ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির প্রশ্নে তাঁর সদিচ্ছা প্রশ্নাতীত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে তিনি আসীন হওয়ার পরে দু’মাস কাটতে না কাটতেই মনে হচ্ছে, ইমরানের ওই ‘সদিচ্ছা’ শুধু দেখানোর জন্যই, বাস্তবায়নের জন্য নয়।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির দিকে ভারত যদি এক ধাপ এগোয়, পাকিস্তান তা হলে দু’ধাপ এগোবে— ইমরান খানের এমনই এক মন্তব্য নানা মহলে প্রশংসিত হয়েছিল। তখন সদ্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পর থেকে ঘটনাপ্রবাহ কোন পথে এগোল? ভারত-পাক সীমান্তে এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেল। অনুপ্রবেশের চেষ্টা বেড়ে গেল। ভারতীয় জওয়ানের মুণ্ডচ্ছেদ করা হল।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

সীমান্তে বা নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি বাড়তে দেখে ভারত জানাল, প্রয়োজনে আবার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হবে। তার জবাবে পাক সেনার এক উচ্চপদস্থ কর্তা শাসালেন— ভারত একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করলে পাকিস্তান দশটা করবে।

সর্বশেষ সংযোজন পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কিছু মন্তব্য। এক ভাষণে তিনি দাবি করলেন যে, ভারতীয় বহিনীতে নানা মারণাস্ত্রের অন্তর্ভুক্তি ঘটছে এবং পাকিস্তানের প্রতি ভারতের আচরণ আক্রমণাত্মক। বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ভারতের প্রতি পক্ষপাত প্রদর্শন করছে এবং পরমাণু প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ভারতকে হস্তান্তর করছে বলে মন্তব্য করলেন পাক প্রেসিডেন্ট। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ছে বলেও প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি দাবি করলেন।

আরও পড়ুন
একতরফা শক্তি বাড়ছে ভারতের, আচরণও আক্রমণাত্মক: পাক প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে অস্বস্তি স্পষ্ট

পাকিস্তানের কার্যকলাপ থেকে মন্তব্য, হুঁশিয়ারি থেকে উদ্বেগ প্রকাশের ধরন— কোনওটাই কি ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পক্ষে ইতিবাচক? পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী, সেনা থেকে কূটনীতিক— ভারত সম্পর্কে যে ধরনের মন্তব্য বা মূল্যায়ন এঁরা প্রকাশ করছেন, সেগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে ঠিক কী ভাবে সাহায্য করবে, ইসলামাবাদ তার ব্যাখ্যাটা দিয়ে দিলে বড় ভাল হয়। কারণ ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পাকিস্তান কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে? ভারতের সঙ্গে একের পর এক বৃহৎ শক্তি যে ভাবে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে, ভারতের সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ যে ভাবে ঘটছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের গুরুত্ব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পাকিস্তান কি কম্পিত বা শিহরিত? যদি না হয়, তা হলে তৃতীয় কোনও দেশের সঙ্গে ভারতের সামরিক চুক্তি নিয়ে পাকিস্তান বিচলিত বোধ করছে কেন? ভারতের আচরণকে ‘আক্রমণাত্মক’ই বা ভাবছে কেন? ভারতীয় বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং সশক্তিকরণের যাবতীয় প্রচেষ্টা বা ভাবনা কিন্তু শুধুমাত্র পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না। পাকিস্তান বা পশ্চিম সীমান্তের প্রতিবেশীর দিকে সতর্ক নজর রাখা ভারতীয় বাহিনীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ঠিকই। কিন্তু ভারতের সামরিক বাহিনীকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করতে হয়, আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখার লক্ষ্যেও কাজ করতে হয়। তাই ইসলামাবাদের ভেবে নেওয়া উচিত নয় যে, নয়াদিল্লির যে কোনও সামরিক পদক্ষেপই পাকিস্তান।

শান্তি স্থাপন বা সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর সদিচ্ছা রয়েছে বোঝাতে হলে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। সম্পর্কের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হবে, আবার যে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে গালমন্দ করা হবে— এ কোনও পরিণত কূটনীতির পরিচয় নয়।

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে পাকিস্তান যে পথে চলছে, সে পথে ধৈর্যের অভাব, স্থৈর্যের অভাব এবং প্রজ্ঞার অভাব প্রকট। এই পথে কোনও গন্তব্যেই পৌঁছতে পারবেন না ইসলামাবাদের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন