নূতন সূর্য

আসল কথা, কোন ছিদ্রপথে কী ভাবে ‘সুযোগ’ তৈরি করিতে হয়, খুব কম রাজনীতিকই তাঁহার মতো বোঝেন

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৫
Share:

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিষয়ে যাঁহার যেমনই মত হউক, একটি কথা সকলে মানিবেন যে তাঁহার মতো তীক্ষ্ণবুদ্ধি রাজনীতিক এই বিশ্বে মেলা ভার। তীক্ষ্ণতাকে কেহ ধুরন্ধরতা বলিতে পারেন, কেহ বলিতে পারেন সুযোগসন্ধান— কিন্তু আসল কথা, কোন ছিদ্রপথে কী ভাবে ‘সুযোগ’ তৈরি করিতে হয়, খুব কম রাজনীতিকই তাঁহার মতো বোঝেন। তাঁহার আরও একটি গুণ, নীরবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাইয়া যাইবার। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো বহ্বারম্ভে লঘু ক্রিয়া নহে, লঘু আরম্ভে বহু ক্রিয়াই তাঁহার আরাধ্য। সুতরাং আপাতত লঘুপদে পশ্চিম এশিয়ায় তাঁহার বিচরণ দেখিয়া আন্দাজ করিয়া লওয়া সহজ, তিনি সেখানে ‘বড়’ কাজ করিতে আসিয়াছেন, এবং করিতেছেন। তিনি জানেন, এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের ঘরোয়া সমস্যায় রীতিমতো হাবুডুবু, বাহিরের দেশ লইয়া বেশি মাথা ঘামাইবার সময় তাহার নাই। ইহাও জানেন যে, পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি ও কূটনীতিতে যত মার্কিন অংশগ্রহণ কমানো যাইতেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ততই খুশি। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্কগুলি মন্তব্য করিতেছে, পশ্চিম এশিয়ায় কত দ্রুত হারে মার্কিন প্রভাব হ্রাস পাইতেছে। ট্রাম্পের জনমুখী রাজনীতিতে পশ্চিম এশিয়ায় তাঁবু গুটাইয়া লইবার সুফল অনেক। এবং, এই অবকাশে সৌদি আরবে পুতিন আসরে নামিয়া পড়িয়াছেন নূতন বন্ধুত্ব তৈরির প্রয়াস করিতে— সেই সৌদি যাহার সহিত মার্কিন মিত্রতার ইতিহাস অনেক পুরানো। সৌদি একা নহে। সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় পুতিনের রাশিয়ার সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি স্পষ্ট বুঝাইয়া দেয়, পুতিন নীতি পাল্টাইতেছেন। নিজের প্রভাব সেখানে আগের অপেক্ষা বাড়াইবার চেষ্টা করিতেছেন।

Advertisement

একটি বিষয় খেয়াল করিবার। আমেরিকা ছাড়াও পশ্চিম এশিয়ায় আর একটি শক্তির সংবেদনশীলতা এই বিষয়ে গুরুতর। তাহার নাম ইরান। সৌদি আরবের কূটনৈতিক বিপক্ষ, এবং অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞাপিত ‘অশুভ অক্ষ’র অন্যতম অক্ষ ইরান কিন্তু একটি ক্ষেত্রে রাশিয়ার সহগামী— সিরিয়া। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার দুই ঘনিষ্ঠ শক্তির আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে এত বৎসর ক্রিয়াকলাপ চালাইয়াছেন— মস্কো ও তেহরান। এখন হঠাৎ মস্কো যদি রিয়াধের সহিত গলাগলির নীতি লয়, সে ক্ষেত্রে তেহরানের অশান্তির পারদ চড়চড় করিয়া উপরের দিকে উঠিবার কথা। জর্ডন বা লেবাননের মতো দেশগুলির ক্ষেত্রেও স্বভাবতই ইহার প্রভাব পড়িবে। সব মিলাইয়া পশ্চিম এশিয়ার কূটনীতির পাল্লাটিতে ভাল রকমের নাড়াচাড়া পড়িবার সম্ভাবনা।

রাশিয়ার সহিত সৌদির নূতন সহযোগিতার কেন্দ্রে রহিয়াছে— খনিজ তৈল। ওপেক প্লাস বলিয়া যে সাম্প্রতিক বন্দোবস্তের কথা শুনা গিয়াছে, সৌদি ও রাশিয়ার মতো প্রাক্তন প্রতিযোগী এই বার তদ্দ্বারা সহযোগীতে পরিণত হইয়াছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই বারের সফর প্রধানত এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করিয়াই আবর্তিত হইয়াছে। পুতিন সৌদিকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দিয়াছেন। ইরানের বিরুদ্ধে নিজের শক্তি বাড়াইবার জন্যই সৌদির নূতন অস্ত্র দরকার— ফলে তেহরান এই চুক্তিকে কী চোখে দেখিতেছে ভাবিতে কষ্ট হয় না। আমেরিকা পশ্চিম এশিয়া হইতে নিজেকে ক্রমশ প্রত্যাহার করিয়া লইলে এই অঞ্চলে সম্ভবত নূতন সূর্য উঠিবে। এখনই সেই নূতন শক্তির আভা দৃষ্টিপথে আভাসিত।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন