Editorial News

শুধু মুশারফের নয়, পাক নেতৃত্বের কণ্ঠস্বরও এটিই

ট্রাম্পের আফগান তথা দক্ষিণ এশিয়া নীতি নিয়ে অতি সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে দেশের প্রতিরক্ষা দফতর। সেখানেই বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাক সরকারের ভূমিকা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সদর্থক বটে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫২
Share:

লস্করকে দেশপ্রেমী বলে মনে করেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ। ছবি: সংগৃহীত।

রাষ্ট্রপুঞ্জেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এই সংগঠনকে। গোটা পৃথিবী মানে লস্কর-ই-তৈবা এবং জামাত-উদ-দাওয়া সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। কিন্তু পারভেজ মুশারফ জানেন না। বা জানলেও মানেন না। লস্করকে দেশপ্রেমী মনে হয় তাঁর, জানালেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসি়ডেন্ট তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ।

Advertisement

কতখানি দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে লস্করকে দেশপ্রেমী আখ্যা দেওয়া যায়, একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক। ২৬/১১-র মুম্বই জঙ্গিহানা-সহ ভারতে একাধিক ছোট-বড় নাশকতার নেপথ্যে লস্কর। শুধু অভিযোগ নয়, লস্করের একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপের অকাট্য প্রমাণও রয়েছে। লস্কর-প্রধান হাফিজ সইদকে গ্রেফতার করার দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানাচ্ছে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারত। পাকিস্তানের এক সময়ের সবচেয়ে কাছের মিত্র আমেরিকাও এ বিষয়ে ভারতের হয়ে মুখ খুলেছে। লস্কর এবং হাফিজ সইদ প্রসঙ্গে ভারতের যা বয়ান, তা রাষ্ট্রপুঞ্জেরও অনুমোদন পেয়েছে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন সেনাপ্রধান অকাতরে বলে দিলেন, লস্কর দেশপ্রেমী। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান সম্পর্কে ফের যে এক ভয়ঙ্কর বিরূপ বার্তা গেল, তা বলাই বাহুল্য।

আসলে পারভেজ মুশারফের এই মন্তব্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বা কোনও এক জন পাক রাজনীতিকের ব্যক্তিগত মন্তব্য নয়। এই মন্তব্য আসলে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রতি পাকিস্তানি নেতৃত্বের ধারাবাহিক প্রশ্রয় এবং সমর্থনের অংশমাত্র। কখনও পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কখনও সামরিক নেতৃত্ব— জঙ্গি কার্যকলাপে সমর্থন বহাল থাকে কোনও না কোনও পক্ষ থেকে। পাকিস্তানের এই ভূমিকা গোটা পৃথিবীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইদানীং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি খুব একটা সম্মানজনক নয়। জঙ্গি কার্যকলাপ নির্মূল করার লক্ষ্যে এগোতেই হবে পাকিস্তানকে, বার বার এই বার্তা দিচ্ছে প্রায় গোটা বিশ্ব। তাও পাকিস্তানি নেতারা কখনও প্রকাশ্যে, কখনও অন্তরাল থেকে, কখনও প্রত্যক্ষ ভাবে, ছলে-বলে-কৌশলে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন জঙ্গিপনায়।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে এসেছে ভারত ইতিমধ্যেই। তারও অনেক আগেই পাক ভূখণ্ডে ঐতিহাসিক অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে খতম করেছে আমেরিকা। নিজেদের ভূখণ্ডে গজিয়ে ওঠা জঙ্গি পরিকাঠামো পাকিস্তান ভাঙছে না বলে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর অর্থনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ করেছে আমেরিকা। এর পরেও যদি পাকিস্তান জঙ্গি পরিকাঠামো না ভাঙে, তা হলে পাক ভূখণ্ডে হানা দিয়ে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেবে মার্কিন বাহিনী— এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পেন্টাগন। এত কিছু সত্ত্বেও পাকিস্তান সতর্ক হতে নারাজ, সংযত হতে ব্যর্থ। বিপদটা যে আসলে পাকিস্তানেরই বেশি তা সম্ভবত বুঝতে পারছেন না পাক নেতৃত্ব। অথবা বুঝেও বুঝছেন না সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে।

আরও পড়ুন
লস্করই ফের হাতিয়ার মুশারফের

পাক ভূখণ্ডে মার্কিন হানা বা অন্য কোনও দেশের তরফ থেকে অভিযান যে আসলে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। নিজেদের সার্বভৌমত্বের কথা আজকাল পাকিস্তান খুব জোর গলায় মনে করিয়ে দিতে চাইছে গোটা বিশ্বকে। পাকিস্তানের মাটিতে অন্য কোনও শক্তি অভিযান চালানোর চেষ্টা করলে ফল ভাল হবে না, এমন হুঁশিয়ারিও পাক নেতৃত্বকে নানা ভাবে আজকাল দিতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বই জানে, ভয়ঙ্কর জঙ্গি তৎপরতা রুখতে পাকিস্তানের এই সব হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করার কথাও এখন ভাবতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহল। পরিস্থিতি যে ইসলামাবাদের পক্ষে একেবারেই সম্মানজনক বা স্বস্তিদায়ক নয়, তা সকলেই বোঝেন। পরিস্থিতি যে বিপজ্জনকও, তাও কারও না বোঝার কথা নয়। শুধু বুঝতে হবে পাক নেতৃত্বকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন