ছবি: এএফপি।
সাত মণ তেল পুড়ল বটে। তবে রাধা শেষ পর্যন্ত নাচবেন কি না, তা দেখার জন্য এখনও একটু অপেক্ষা করতেই হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন অবশেষে। নিরপেক্ষ ভূখণ্ড হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরকে। সেখানেই ঐতিহাসিক বৈঠকটিতে বসলেন ট্রাম্প ও কিম। আক্ষরিক অর্থেই গোটা বিশ্বের নজর ছিল সিঙ্গাপুরে আয়োজিত এই বৈঠকের দিকে। এমন কোনও বৈঠক পৃথিবীর বুকে কোনও দিন হতে পারবে? বৈঠক হওয়ার আগে পর্যন্ত ঠিক প্রত্যয় হচ্ছিল না অধিকাংশেরই। বৈঠকটা হয়ে যাওয়ার পরেও বোধ হয় অনেকে নিজের গায়ে চিমটি কেটে পরখ করছেন— স্বপ্ন নয় তো?
বৈঠক শেষে দুই নেতা কী বলেছেন? বলেছেন, বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ। বলেছেন, দু’দেশই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করবে। ট্রাম্প বলেছেন, শীঘ্রই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পথে এগোবে উত্তর কোরিয়া। কিম বলেছেন, এই দিনটা সহজে আসেনি।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
সত্যিই সহজে আসেনি এই দিন, সহজে আসা সম্ভবও নয় এমন ঐতিহাসিক ক্ষণ। বৈঠক নির্ধারিত হয়েও বাতিল হয়ে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত যে আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া বৈঠকে বসতে পারল, এতে দু’দেশের তরফেই সদিচ্ছা খুঁজে পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
ট্রাম্প-কিমের বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক একটি অধ্যায়ের সূচনা করে দিল, সংশয়ের কোনও অবকাশই নেই। ফল শেষ পর্যন্ত কী হবে, গোটা পৃথিবীই তা দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু ফল যা-ই হোক, আমেরিকা এবং উত্তর কোরিয়া কোনও দিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে পারবে, এমনটা ভাবাই তো আকাশকুসুম ছিল একটা সময়ে। বৈঠকটা হল আবার কোন জমানায়? যখন উত্তর কোরিয়ার শাসন ক্ষমতায় কিম জং-উন, যিনি নিজের পূর্বসূরি তথা বাবা কিম জং-ইলের চেয়েও বড় স্বৈরাচারী হিসেবে নাম কিনেছেন। আর যখন আমেরিকার শাসন ক্ষমতায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, অত্যন্ত কট্টরবাদী হিসেবে যিনি গোটা বিশ্বে পরিচিত, যাঁর খামখেয়ালিপনা দীর্ঘ দিনের মার্কিন মিত্রদের কাছেও আতঙ্কের কারণ। অতএব যা হল, তা নিয়ে বিস্ময়ের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যা হল, তা নিয়ে উচ্ছ্বাসেরও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবু অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস ধরে রাখতে হবে, উৎকণ্ঠায় থাকতে হবে, যতক্ষণ না ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং-উনের হস্তাক্ষর অঙ্কিত হচ্ছে আমেরিকা-উত্তর কোরিয়া সন্ধিপত্রে। কারণ এমনই একটা প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে, যে প্রক্রিয়ায় না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস করা কঠিন যে, ভোজন সারা হয়েছে।
আরও পড়ুন: উঃ কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ‘শীঘ্রই’, কিমের সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন ট্রাম্প
আরও পড়ুন: ট্রাম্প-কিম বৈঠক: নয়া অধ্যায়ে সঙ্গী সংশয়ও
পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে কমিউনিস্ট শাসন বা কমিউনিস্ট নামধারী কোনও শাসন দেখলেই আমেরিকা ঘোষিত ভাবে তার বিরোধিতা শুরু করে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকার বিরোধের সর্বপ্রথম অবকাশ সেখানেই। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি আমেরিকার আরও বড় মাথাব্যাথার কারণ। সরাসরি মার্কিন ভূখণ্ডে পরমাণু হামলা করা হবে বলে বার বার হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিলেন কিম। আমেরিকার তরফ থেকে পাল্টা হুঁশিয়ারি তো ছিলই। ছিল অত্যন্ত কঠোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধও।
বলাই বাহুল্য, তিক্ততা, বৈরিতা, বিদ্বেষের মহাসমুদ্র পেরিয়ে মুখোমুখি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন। শুধু এই বৈঠকটার জন্যই সমগ্র পৃথিবীর তরফ থেকে সাধুবাদ প্রাপ্য ট্রাম্প ও কিমের। ট্রাম্প ও কিমকে অতএব খেয়াল রাখতে হবে, সমগ্র শান্তিকামী বিশ্ব এ বার অনেক আশা নিয়ে চেয়ে রয়েছে তাঁদের মুখের দিকে। দুই নেতার দায়িত্বই কিন্তু অনেক বেড়ে গেল।