রূপকথা

জাপানে রাজকুমারদের বিবাহে কিন্তু এই নিয়ম নাই। বরং সাধারণ নাগরিক যদি রাজবধূ হন, তিনি পর দিন হইতেই রাজপরিবারের অধিকার এবং সুযোগসুবিধা ভোগ করিবেন। ইহা অবশ্য নূতন কিছু নহে, অজানা কিছুও নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

স্বপ্নে দেখা রাজকন্যারা বাস্তবেই থাকেন। প্রমাণিত হইল সম্প্রতি। জাপানের রাজকুমারী মাকো তাঁহার বাগদান পর্ব সারিয়া ফেলিলেন। পাত্র কোমুরো রাজকুমার তো নহেনই, কোনও রাজপরিবারের সহিত তাঁহার কোনও রকম সম্পর্ক নাই। তিনি নিতান্ত সাধারণ নাগরিক। রাজকুমারী মাকো জানাইয়াছেন, তিনি ভালবাসিতে পারিয়াই খুশি। পাত্র রাজপরিবারের কি না, তাহা লইয়া কোনও দিনই তাঁহার কোনও মাথাব্যথা ছিল না। তিনি সাধারণ এক জন নাগরিককে ভালবাসিয়া, তাঁহাকে বিবাহ করিয়া সুখে ঘর করিতে চাহেন। দেশের নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণ নাগরিককে বিবাহ করিলে রাজকুমারী মাকোকে রাজপরিবারের সমস্ত অধিকার ও সুযোগসুবিধা ত্যাগ করিতে হইবে। ইহাকে এক রকম শাস্তি বলা যাইতে পারে— সাধারণ নাগরিককে বিবাহ করিয়া রাজবাড়ির মর্যাদা কমাইবার ‘শাস্তি’। সেই শাস্তি রাজকুমারী সানন্দে গ্রহণ করিয়াছেন। জানাইয়াছেন, রাজপরিবারের সুখসুবিধা তাঁহার বিবাহিত জীবনে অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইবে না। অতি উত্তম।

Advertisement

জাপানে রাজকুমারদের বিবাহে কিন্তু এই নিয়ম নাই। বরং সাধারণ নাগরিক যদি রাজবধূ হন, তিনি পর দিন হইতেই রাজপরিবারের অধিকার এবং সুযোগসুবিধা ভোগ করিবেন। ইহা অবশ্য নূতন কিছু নহে, অজানা কিছুও নহে। এই নিয়ম কেবল জাপানে নহে, বহু দেশেই। ভারতে তো বটেই। স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি— এই দেশে পরিচিত বিধান। জাপানের রাজপরিবারের রীতির কথা শুনিয়া সনাতন ভারতের মানুষ তাই বিস্মিত হইবেন না। লক্ষণীয়, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-ও বলিয়াছেন, রাজপরিবারের নিয়ম অলঙ্ঘনীয়। এই উক্তিও অপ্রত্যাশিত নহে। তিনি ব্যক্তি-পুরুষ। তাহার উপর পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি বিপরীত গতিতে যাইবেন কী করিয়া? আরও লক্ষণীয়, সব সমাজে সব নিয়ম মানিবার দায় মেয়েদের। পুরুষদের সচরাচর সেই দায় নাই, থাকিলেও তাহা শিথিল এবং পুরুষ নিয়ম ভাঙিয়া যথেচ্ছাচার করিলেও সমাজ তাহাকে স্নেহ-কটাক্ষ করিবে মাত্র। নিয়মের বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াইয়া দেওয়া হয় মেয়েদেরই। তাহারা জাল কাটিয়া মুক্তি চাহিলেই সমাজে গেল গেল রব ওঠে।

অতএব জাল কাটিবার দায়ও মেয়েদেরই বেশি থাকে। সাহসও। সাহস সংগ্রহ না করিয়া তাহার উপায় নাই। পৃথিবীর সহিত লড়াই করিয়া তাহাকে আপন মর্যাদা ও স্থান প্রতিষ্ঠা করিতে হয়। আপন অধিকার কাড়িয়া লইতে হয়। নিয়মের নিষেধাজ্ঞাকে চৌকাঠের ও পারে ফেলিয়া নূতন পৃথিবীকে গ্রহণ করিবার সাহস না থাকিলে তাহাদের চলে না। পুরুষ জীবন বাঁচে একটি শর্তে, পৌরুষের শর্তে। কিন্তু মেয়েরা জীবন বাঁচে জীবনের শর্তে, রূপ-রস-গন্ধ-পিতৃতন্ত্রের শাসানি, সব আস্বাদ গ্রহণ করিতে করিতে। এবং, সম্ভবত, সেই কারণেই রূপকথা এখনও মেয়েরাই তৈয়ারি করিতে পারে। যেমন আফগানিস্তানের সেই তরুণীরা, যাঁহারা ফুটবল খেলিয়া আপন স্বাধীনতা দাবি করিতেছেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গের সেই কিশোরীরা, যাহারা অভিভাবকের মুখের উপর বলিতেছে: বিবাহ নয়, এখন লেখাপড়া করিব। যেমন জাপানের রাজকুমারী মাকো। তিনি এ কালের কন্যা। স্বেচ্ছায় রাজ-ঐশ্বর্য ত্যাগ করিয়া প্রেমকে বরণ করিলেন। আশা করা যায়, ইহার পর ‘সাধারণ’ সুখী দম্পতি সুখে ঘরকন্না করিতে থাকিবেন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন