Siddique Kappan

মুক্তি কোথায়

প্রশাসন ও আইনের বিরুদ্ধতা, বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা পেরিয়ে সিদ্দিক কাপ্পানের কারামুক্তি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই সুসংবাদ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:২৪
Share:

সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। ফাইল ছবি।

সিদ্দিক কাপ্পান জেল থেকে বেরোলেন দু’বছর চার মাস বাদে। মুক্তি মেলেনি, জামিন মিলেছে। জামিন পেতেই এত সময় কেটে গেল, এবং দেশকে সাক্ষী হতে হল এক অসম্ভব অমানবিক অগণতন্ত্রের— ক্ষমতা হাতে পেলে প্রশাসন ও সরকার কী করতে পারে তার ভয়ঙ্কর নমুনা। জামিন পাওয়া বন্দির অধিকার, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে নিরপরাধ বিবেচনাই ভারতীয় বিচারব্যবস্থার নীতি— শাসকের কাছে এই সবই যে অসার, প্রতি পদে তা বুঝিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সরকার, যে রাজ্যে খবর করতে গিয়ে কেরলের সাংবাদিকের গ্রেফতারি, এবং দীর্ঘ যন্ত্রণাপর্বের শুরু। গত আটাশ মাসে যা হয়েছে তাকে আইন ও বিচার নিয়ে প্রশাসনের ছেলেখেলা বলা চলে: মানবাধিকার, ন্যায়বিচারের মতো শব্দ সেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।

Advertisement

এমন নয় যে, এই প্রথম বিনা বিচারে বা অপরাধে কেউ কারারুদ্ধ হলেন। এর আগে অন্য কোনও সরকারের আমলেও যে এমন হয়নি তা-ও না, দল-জমানা-সরকার নির্বিশেষে ক্ষমতার রক্তচক্ষু দেখে এসেছেন ভারতের সাধারণ নাগরিক থেকে সমাজকর্মী শিক্ষক শিল্পী সাংবাদিক, সকলেই। কিন্তু সিদ্দিক কাপ্পানের ঘটনা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে খোদ শাসকের ‘আইনের শাসন’ লঙ্ঘন করার নির্লজ্জ ঔদ্ধত্যে। ২০২০-র অক্টোবর থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গোটা ঘটনাক্রম খতিয়ে দেখলেই তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। হাথরসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁর গ্রেফতার হওয়াটাই ছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তথা সরকারের তরফে অনৈতিক এক কাজ, সাংবাদিকের পেশাগত দায়বদ্ধতায় হস্তক্ষেপ। তার পর থেকে তাঁর সঙ্গে যা-যা হয়েছে সবই আইনের প্রহসন মাত্র: গোড়ায় জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ অচিরেই পাল্টে যায় ভারতীয় দণ্ডবিধি, আইটি অ্যাক্ট ও সর্বোপরি ইউএপিএ-র মতো ভয়ঙ্কর আইনের একাধিক ধারায় অভিযোগে, যাতে জামিনের সমস্ত সম্ভাবনা নির্মূল করা যায়। জঙ্গি বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা, রাষ্ট্রদ্রোহ থেকে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ, ভুয়ো সাংবাদিক তকমা, চাপ দিয়ে মাওবাদী-যোগ স্বীকার করানোর চেষ্টা— সবই হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কথা না-ই বা বলা হল।

প্রশাসন ও আইনের বিরুদ্ধতা, বিচারপ্রক্রিয়ার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা পেরিয়ে সিদ্দিক কাপ্পানের কারামুক্তি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই সুসংবাদ। তবে তা কতটা আশাপ্রদ, সে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, কারণ বিজেপি-শাসিত ভারতে এ ঘটনা ঘটছে নিয়ম করে, সরকারের অপ্রিয় কথা বললে বা কাজ করলেই নেমে আসছে উদ্যত খড়্গ। সিদ্দিক কাপ্পান, ভারাভারা রাও, উমর খালিদ, তিস্তা শেতলবাড়, আরও বহু নাম জ্বলন্ত উদাহরণ যাঁরা স্রেফ শাসকের সুরে সুর মেলাননি বলে রাষ্ট্রযন্ত্র তাঁদের আঘাত করেছে, যত বেআইনি অসাংবিধানিক অমানবিক পদ্ধতি সম্ভব তার সব দিয়ে। বিরোধীদের প্রতিবাদ, বিদ্বজ্জনদের অনুরোধ, বিশ্ব স্তরে মানবাধিকার সংগঠনগুলির বিবৃতি, কোনও কিছুতেই এই শাসকের বজ্রমুষ্টি শিথিল হয় না। রাষ্ট্রের চূড়ান্ত হেনস্থা ও পীড়নের পর এক দিন বিচারব্যবস্থার কল্যাণে মানুষটির শর্তাধীন মুক্তি ঘটে বটে, কিন্তু গণতন্ত্রের মুক্তি সুদূরপরাহতই থাকে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন