Aravali Hills

বিপন্ন আরাবল্লী

একই উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা অরণ্য বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আরাবল্লী পাহাড় ও পাহাড়শ্রেণির যে সংজ্ঞা কেন্দ্র পেশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের কাছে, তা অনুমোদিত হল। আশেপাশের এলাকার চেয়ে অন্তত একশো মিটার উচ্চতার ভূখণ্ডই কেবলমাত্র ‘আরাবল্লী পাহাড়’ বলে গণ্য হবে— এই ছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা। আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও বলা প্রয়োজন, এই সংজ্ঞাটি গৃহীত হওয়ায় উদ্বেগের কারণ আছে। কারণ, অনেকে হিসাব কষে দেখাচ্ছেন, এত দিন যে ভূখণ্ড আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণি বলে গণ্য হয়ে এসেছে, তার ৯০ শতাংশই আর পরিবেশ সংরক্ষণ বিধির অধীনে সুরক্ষাযোগ্য থাকবে না। বারো হাজারেরও বেশি পাহাড়ের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক আদালতের শর্ত পূর্ণ করতে পারবে। ফলে এই সব এলাকায় খনন করা যাবে, পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কারণে নির্মাণ করা যাবে। অথচ পরিবেশ সুরক্ষার নিরিখে ছোট পাহাড়, ঝোপ-গুল্ম আবৃত জমির গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নয়। ভূগর্ভের জল পূরণ করতে, মাটির ক্ষয় রুখতে, মরুকরণ নিবারণে, ধুলো-বালির ঝড় আটকে দিতে, বন্যপ্রাণীর আবাস এবং যাতায়াতের পথ হিসাবে, ক্ষুদ্র জলবায়ু পরিমণ্ডল ধরে রাখতে এগুলি অপরিহার্য। এই কারণেই অতীতের নানা সমীক্ষা কুড়ি ফুট উচ্চতার পাহাড়, সেগুলির ঢালু অংশ এবং আনুষঙ্গিক ভূখণ্ডকেও আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণির বলেই ধার্য করে এসেছে। সমুদ্রতল থেকে উচ্চতার পরিমাপ না করে আশেপাশের এলাকার থেকে উচ্চতার পরিমাপও ভূগোলের প্রচলিত প্রথার বাইরে। এটা ঠিক যে, রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানা, দিল্লি— নানা রাজ্য নানা ভাবে আরাবল্লীকে সংজ্ঞায়িত করত। কিন্তু, প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে গিয়ে যে সংজ্ঞা নির্মাণ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। একটি এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ, জীবসম্পদ এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে সার্বিক ভাবেই তাকে দেখতে হবে।

একই উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা অরণ্য বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে। গত নভেম্বরে একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট একত্রিশ হাজার হেক্টর জমিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা বলে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, এবং ওই এলাকা, এবং তার সংলগ্ন আরও এক কিলোমিটার এলাকায় খনন নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে অরণ্য এলাকাকে সুরক্ষিত না করে, একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে অভয়ারণ্য বলে নির্দিষ্ট করায় সংরক্ষণ কতখানি কার্যকর হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে। সংরক্ষিত এলাকার বাইরে নির্বিচারে গাছ কাটা হলে, ভূগর্ভের জলের ক্ষয় হলে, বন্যপ্রাণীর আসা-যাওয়ার পথ অবরুদ্ধ হলে— বিশেষত খনিজ উত্তোলনের মতো কাজ চালু থাকলে— পরিবেশের সুস্থায়ী সংরক্ষণ কি আদৌ সম্ভব? আবার, শিমলায় দোতলার বেশি উচ্চতার বাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু গত বছর হিমাচল প্রদেশ সরকারের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে সুপ্রিম কোর্ট, যা সেই নিষেধাজ্ঞা অপসারিত করেছে। যে ক্ষেত্রে সরকার বা প্রশাসনের কাছে পরিবেশের স্বার্থরক্ষার গুরুত্ব আপাতভাবে কম, সে ক্ষেত্রে আদালতের এমন রায়গুলির অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকেই যায়।

শীর্ষ আদালত আরাবল্লীর সুরক্ষার জন্য সুস্থায়ী খননের নিয়মবিধি বিষয়ক একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা (ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ফর সাসটেনেবল মাইনিং) তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে, যা চূড়ান্ত হওয়ার আগে খননের নতুন ইজারা দেওয়া হবে না। এই সতর্কতা জরুরি, কিন্তু বিলম্বিত নয় কি? সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত একটি কমিটি ২০১৮ সালে জানিয়েছিল যে, রাজস্থানের আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণির ২৫ শতাংশই বিনষ্ট হয়েছে। অরণ্য ধ্বংসের হারের নিরিখে ভারতের স্থান ব্রাজ়িলের পরেই। প্রশাসক যেখানে উন্নয়নের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টি গ্রহণ করছে, সেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণ রক্ষা ও বাস্তুর নিরাপত্তার জন্য সরকারি সংজ্ঞা কতটা নির্ভরযোগ্য, সে প্রশ্ন বার বার উঠতে বাধ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন