Tawang

চৈনিকীকরণ

ঐতিহাসিক অবিচারের অভিযোগ তুলিয়া প্রতিবেশীর এলাকায় উঁকি দিবার অভ্যাস বেজিংয়ের নূতন নহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

বম্বে যদি মুম্বই হইতে পারে, অথবা মাদ্রাজ চেন্নাই, তবে তাওয়াং শহরের নাম ও’গিয়াইনলিং হইলে আপত্তি কিসের? প্রশ্নটি তুলিয়াছেন চিনের এক প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি। কূট প্রশ্ন, সন্দেহ নাই, কেননা আপনার সার্বভৌম অঞ্চলে স্থাননামের বদল আর প্রতিবেশী দেশের শহরের নাম পাল্টাইয়া দেওয়া কোনও মতেই তুলনীয় নহে। দ্বিতীয়টি এক অ-স্বাভাবিক ঘটনা। সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের পনেরোটি স্থানের ‘মান্য’ নাম ঘোষণা করিয়াছে চিন। ইতিপূর্বে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল অরুণাচলের ছয়টি স্থানের ‘নামকরণ’ করিয়াছিল চিনের অসামরিক মন্ত্রক। ‘তথাকথিত অরুণাচল প্রদেশ’কে বারংবারই ‘জাংনান’ (দক্ষিণ তিব্বত) বলিয়া থাকে বেজিং। তাহাদের যুক্তিতে উহা চিনেরই অংশ, এবং সেই যুক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করিতেই ৯০,০০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলে সার্বভৌম কর্তার ন্যায় আচরণের চেষ্টা। অতএব, ভারতের অঙ্গরাজ্যে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতির পদার্পণ ঘটিলেও অসন্তুষ্টি প্রকাশে তাহারা কালক্ষেপ করে না, দলাই লামার ন্যায় ভারতীয় অতিথির (এবং বেজিংয়ের রাজনৈতিক শত্রুর) কথা নাহয় বাদই থাকিল।

Advertisement

এই অস্বাভাবিক আচরণের— বস্তুত সীমা লঙ্ঘন— কারণটি চিনের রাজনৈতিক ইতিহাসে নিহিত। ১৯১৪ সালে ‘গ্রেট ব্রিটেন, চিন ও তিব্বতের সম্মেলন’-এ (শিমলা চুক্তি) সরকারি স্বীকৃতি পাইয়াছিল ‘ম্যাকমাহন লাইন’— তিব্বত ও ব্রিটিশ ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত। চিন তখন ‘চিনা প্রজাতন্ত্র’, এই চুক্তির স্বাক্ষরকর্তা তাহাদেরই প্রতিনিধি। বর্তমান কমিউনিস্ট জমানার জন্ম ১৯৪৯-এ, যাহারা ক্ষমতাসীন হইয়া তিব্বত দখল করে, এবং তাহাকে ঐতিহাসিক ভাবে অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে ঘোষণা করে। সেই যুক্তিতে স্বাধীন তিব্বতের সার্বভৌম কর্তৃত্ব কখনওই থাকিতে পারে না। ১৯১৪ সালের চুক্তিও, অতএব, বর্তমান ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চিন’ কর্তৃক অস্বীকৃত। বস্তুত, আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ আন্দোলনের সম্মুখে তিব্বত দখলদারিকে প্রতিষ্ঠিত রাখিতে হইলে চিনকে যে যে পন্থায় সক্রিয় থাকিতে হয়, তাহারই একটি ভারতের এই চলমান অশান্তি। বহুলাংশে চিনের ঘরোয়া রাজনীতিই তাহার বিদেশনীতিটি নিয়ন্ত্রণ করিতেছে।

ঐতিহাসিক অবিচারের অভিযোগ তুলিয়া প্রতিবেশীর এলাকায় উঁকি দিবার অভ্যাস বেজিংয়ের নূতন নহে। ইহাকে চিনের বিদেশনীতির হাতিয়ারও বলা চলে। মূল চিনা ভূখণ্ডের প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের সহিত তাহার বিবাদটি ঐতিহাসিক, দুই দেশই নিজেকে সমগ্র চিনের ‘আইনানুগ’ শাসক বলিয়া মনে করে, সেই স্থলেও তাইওয়ানের এলাকার প্রতি আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করে বেজিং। দক্ষিণ চিন সাগরের যে সকল দ্বীপ লইয়া তাহাদের এলাকাগত বিবাদ, সেইখানে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করিয়া ‘বাস্তবের হিসাবনিকাশ’ পাল্টাইয়া ফেলিবার প্রচেষ্টার অভিযোগ উঠে। সুতরাং লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যে দেশের সহিত তাহাদের সংঘাত চলমান, তাহাদের সহিত এতাদৃশ ঝঞ্ঝাট বেজিংয়ের পক্ষে অতি স্বাভাবিক। অনুমান করা যায়, তিব্বতের উপর আপনার সার্বভৌমত্বের মান্যতা প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ তিব্বতের সহিত তাহার নানা রূপে ‘বন্ধন’ জ্ঞাপন চলিতেই থাকিবে। সুতরাং সীমান্তরেখা বরাবর উদ্বেগ— ইহাই ভারতের দুর্নিয়তি।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন