Delhi High Court

উদ্বেগ

সেই ভরসার কারণেই উন্নাও মামলার অভিযুক্ত, বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের সাজা স্থগিত রেখে তাঁকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:১২
Share:

ভারতে উগ্র গৈরিক রাজনৈতিক বাস্তুতন্ত্র আইনের শাসনকে ঠিক কী চোখে দেখে, মহম্মদ আখলাক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের আবেদন তারই এক মোক্ষম নিদর্শন। ফ্রিজে গোমাংস আছে, এই অভিযোগে ২০১৫ সালে আখলাককে হত্যা করে হিন্দুত্ববাদীরা। ভারতে বড় মাপের গোসন্ত্রাসের সূচনা এই ঘটনা থেকেই— গোটা দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীদের এই ভয়ঙ্কর আচরণ। দশ বছর পরে, ২০২৫-এর অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশ সরকার কিছু যুক্তি সাজিয়ে এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চায়— বলা হয়, ঘটনাটি নিয়ে সাক্ষীদের বক্তব্যের মধ্যে গরমিল রয়েছে, ঘটনাস্থলে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, অভিযুক্তদের সঙ্গে নিহতের কোনও পূর্ব শত্রুতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি ইত্যাদি। বছর আটেক আগে এই মামলায় অভিযুক্তদের আইনজীবী তাদের জামিনের আবেদনে যে যুক্তি প্রয়োগ করেছিলেন— এবং আদালতের নথি অনুযায়ী তখন বাদী পক্ষের আইনজীবী যে যুক্তির ‘তীব্র বিরোধিতা’ করেছিলেন— এখন উত্তরপ্রদেশ সরকার কার্যত সে যুক্তি প্রয়োগ করেই মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে উদ্‌গ্রীব। যোগী রাজ্যে সরকারের নৈতিক সমর্থন কোন পক্ষে, তা নিয়ে দেশবাসীর মনে সংশয়ের কোনও অবকাশ থাকার কথা নয়। তবুও এই মামলাটি বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করল তার আব্রুহীনতার জন্য। নিরপেক্ষ থাকা যে রাষ্ট্রের নৈতিক কর্তব্য, উত্তরপ্রদেশ সরকার এই কথাটির প্রতি বিশ্বস্ততার কোনও ভানও করেনি। স্বস্তির বিষয় যে, আদালত সরকারের এই আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে। জানিয়েছে, মামলাটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, অতঃপর প্রতি দিনই তার শুনানি হওয়া বিধেয়। গণতন্ত্রের বাকি স্তম্ভগুলি যখন দ্বিধাহীন ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে চলেছে, তখন আদালতই কেন মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত তার একটি নিদর্শন।

সেই ভরসার কারণেই উন্নাও মামলার অভিযুক্ত, বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের সাজা স্থগিত রেখে তাঁকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই নাবালিকাকে ধর্ষণের পাশাপাশি পরবর্তী কালে তাঁর বাবাকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। তাঁর সাজা হয়েছিল পকসো আইনে— কোনও ‘পাবলিক সারভেন্ট’ বা সরকারি কর্মী শিশু নিগ্রহ করলে এই আইন অনুসারে সেই অপরাধের গুরুত্ব বেশি, শাস্তির পরিমাণও বেশি। শুনানি আদালত সেঙ্গারকে বিধায়ক হিসাবে ‘পাবলিক সারভেন্ট’ রূপে চিহ্নিত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। দিল্লি হাই কোর্ট জানিয়েছে, পকসো আইন অনুসারে বিধায়ককে ‘পাবলিক সারভেন্ট’ বলা চলে না, কারণ এই আইন ‘পাবলিক সারভেন্ট’-এর সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য যে আইনগুলির উপরে নির্ভর করে, সেখানে বিধায়কের পদটি এই তালিকার অন্তর্গত নয়। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখে, এবং আদালত যে আইনের বয়ান রচনা করতে পারে না বা তা পাল্টে নিতে পারে না, এই কথাটি স্মরণে রেখেও বলা প্রয়োজন, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা দার্শনিক ভাবে শুধুমাত্র আইনের অক্ষরকে গুরুত্ব দেয় না, তার অন্তর্নিহিত অবস্থানটিকেও অতি প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে। ‘পাবলিক সারভেন্ট’-দের ক্ষেত্রে পকসো আইনের অবস্থান কঠোরতর, কারণ এ-হেন পদাধিকারীরা এক দিকে বিশেষ ক্ষমতাবান; আর অন্য দিকে, আইনের শাসন মেনে চলার ক্ষেত্রে তাঁদের আচরণ দৃষ্টান্তস্বরূপ হওয়া বিধেয়। তেমন কোনও ব্যক্তি যদি কোনও শিশুকে যৌন নিগ্রহ করে, তখন তার কঠোরতর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়াই বিধেয়। ক্ষমতা এবং দায়িত্বের নিরিখে কোনও বিধায়ক এক জন সরকারি কর্মীর চেয়ে যখন কম নন, তখন তাঁর ক্ষেত্রেও অবস্থান কঠোর হওয়াই বিধেয় নয় কি? এই মামলায় সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচারে শেষ পর্যন্ত সেঙ্গারের কী শাস্তি হবে তা দেখার, কিন্তু তত দিন অবধি তাঁর অবাধ বিচরণ নির্যাতিতার পক্ষে সম্ভবত সুসংবাদ নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন