National Achievement Survey

দৃষ্টান্ত

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, বেসরকারি স্কুল সবই; পঠনপাঠনের মান, পরিকাঠামো, ছাত্রছাত্রীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের বিচারে যাদের পারস্পরিক ব্যবধান বিস্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কেমন পড়াশোনা শিখছে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির স্কুলপড়ুয়ারা, পড়তে পারছে কি না, বুঝে পড়ছে কি না, তাদের ভাষা ও গণনার মৌলিক দক্ষতা কেমন— বোঝার চেষ্টা করে ‘ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’ (এনএএস), দেশের প্রতিটি রাজ্যে এবং জেলা স্তরে স্কুলশিক্ষার হাল কেমন, তার ইঙ্গিত দেয় বিভিন্ন মাপকাঠিতে মেপে। তাতে কি সার্বিক চিত্রটি মেলে? মেলে না, কারণ, এনএএস-তে সব স্কুল অংশগ্রহণ করে না। ২০২১-এ তিন হাজারের কিছু বেশি স্কুল, প্রায় পনেরো হাজার শিক্ষক ও এক লক্ষের কিছু কম ছাত্রছাত্রী যোগ দিয়েছিল, দেশের মোট স্কুল, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার পাশে যা নিতান্ত কম। আবার এর মধ্যে মিশে থাকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, বেসরকারি স্কুল সবই; পঠনপাঠনের মান, পরিকাঠামো, ছাত্রছাত্রীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের বিচারে যাদের পারস্পরিক ব্যবধান বিস্তর। ফলত স্কুলশিক্ষা নিয়ে তৃণমূল স্তরে কাজ করা অন্য সরকারি-অসরকারি সংস্থার মূল্যায়নে ধরা পড়ে করুণ ছবি: প্রাথমিক স্তর পেরিয়ে যাওয়া অনেক শিশুও অক্ষর বা সংখ্যা চিনতে পারছে না, পড়তে বা গুনতে পারা দূরস্থান।

Advertisement

প্রত্যাশিত শিক্ষণস্তরে পড়ুয়াদের পৌঁছতে না পারা যে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিন্তিত করবেই তা নয়, তবু কেউ কেউ ভাবেন। মহারাষ্ট্রের সাংলি জেলার তরুণ আইএএস আধিকারিক জিতেন্দ্র ডুডী খেয়াল করেছিলেন, এনএএস-তে ফলাফলে জাতীয় গড়ের তুলনায় রাজ্য ভাল জায়গায় থাকলেও, ওই অঞ্চলের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন ভাষা বা অঙ্কের সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। তাঁর সক্রিয় উদ্যোগে শুরু হয় ‘লার্নিং ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’— জেলা পরিষদের অন্তর্ভুক্ত স্কুলগুলির প্রতিটি শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন, রিপোর্ট কার্ড তৈরি করে শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া, ভাষা ও গণনার ক্লাসে সৃষ্টিশীল শিক্ষণের বন্দোবস্ত, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবক বিশেষত মায়েদের সক্রিয় ভাবে যুক্ত করা যার অঙ্গ। ছ’মাস পেরোনো এই প্রকল্প এরই মধ্যে এক লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া, সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষককে একসূত্রে গেঁথেছে। দেখা গিয়েছে উল্লেখযোগ্য সুফল— বই পড়তে পারা, অঙ্কের গুণ-ভাগ, খাতায় উত্তর লেখার মতো সাধারণ কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় ও মৌলিক দক্ষতাগুলি পড়ুয়াদের আয়ত্তে এসেছে।

এ হয়তো কেবল একটি রাজ্যের একটি জেলার কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরই অগ্রগমনের চিহ্ন, কিন্তু তার নিহিত ‘শিক্ষা’টি অতি জরুরি। যা স্রেফ সরকারি সদিচ্ছাতেই আটকে থাকে না, ঠিক যা-যা হলে স্কুলশিক্ষার মৌলিক পাঠগুলি পড়ুয়ারা সাগ্রহে তুলে নিতে পারে, সেই উদ্যোগও করে। একঘেয়ে পাঠ্যক্রম, গয়ংগচ্ছ শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে বদল আনা জরুরি: জিতেন্দ্রর উদ্যোগে শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের পড়ানোর ধরন বদলেছিলেন, রোজকার জীবনের নানা উপকরণ, স্থানীয় লোককথা ইতিহাস আখ্যানের আশ্রয়ে বইয়ের পাঠকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন। বাঁধাধরা শিক্ষা, কিন্তু শিক্ষাদানের পথটি বাঁধাধরা নয়। পেশাদারিত্বের কথা মাথায় েরখে প্রয়োজনে অসরকারি শিক্ষা সংস্থার সাহায্য নেওয়াতেও দোষ নেই কোনও। পড়ুয়াদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে এ-হেন দৃষ্টান্ত স্থাপনেরও বিকল্প নেই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন