Arsenic contamination

বিষের বিপদ

দূষিত জল থেকে আর্সেনিক ঢুকে পড়ে চালের মধ্যে। তবে শুধু চাল নয়, আনাজ, মাংস, দুধ ও মাছের মতো দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমেও এই বিষ ঢুকছে মানবদেহে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ০৫:৫৪
Share:

অল্পবয়সিদের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে স্বল্পমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিও। প্রতীকী চিত্র।

অতিরিক্ত মাত্রায় আর্সেনিক সংক্রমিত ভূগর্ভস্থ জলের কারণে নানাবিধ দুরারোগ্য রোগের কথা আগেই জানা ছিল। সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে, অল্পবয়সিদের মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে স্বল্পমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিও। ফলে, লিটার প্রতি আর্সেনিকের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রামের কম হলে তা বিপদসীমার নীচে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ-হেন মাপকাঠিকে পুনর্মূল্যায়নের মুখে ঠেলে দিয়েছে এই গবেষণা। আর্সেনিক-সমৃদ্ধ হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলির কারণে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমতল এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অংশে ভূগর্ভস্থ জলে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক থাকার সতর্কবার্তা বহু দিন ধরেই দিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে চর্মরোগ এবং ক্যানসার হওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে উল্লিখিত হয়েছে। এমনকি মেক্সিকো, কম্বোডিয়া এবং আমেরিকার গবেষণায় মস্তিষ্ক প্রভাবিত হওয়ার কথাও জানা গিয়েছে।

Advertisement

তাই, পরিস্থিতি উদ্বেগের। বিশেষত, যেখানে আর্সেনিকের তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব বোঝা যায় না। মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতে শিশুর মানসিক গঠন কেমন হবে, তা নির্ধারিত হয়ে যায় পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই। যদিও জিনগত এবং পরিবেশগত— এই দু’টি বিষয়ের প্রভাব থাকে মানসিক গঠনের উপরে। উক্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মস্তিষ্কের ধূসর অংশ প্রভাবিত হয় আর্সেনিকের কারণে। পরিবর্তন ঘটে এর গঠনে। প্রভাব পড়ে এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের সংযোগ স্থাপনে। ফলে, মনোযোগ, বুদ্ধি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি, শিক্ষার মতো হরেক কাজ বিঘ্নিত হয়। তাই মস্তিষ্কের বিকাশের ত্রুটিতে জিনের পাশাপাশি যে পরিবেশ দূষণকারী উপাদানও দায়ী, তা অনেকাংশে স্পষ্ট গবেষণায়। এবং, এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করে আর্থসামাজিক পরিস্থিতিও। আর্সেনিক দূষিত জল জমিতে থাকলে ধান গাছ অতি দ্রুত সেই আর্সেনিক টেনে নেয়। আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকায় অগভীর নলকূপের জল চাষে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি সেই জলেই ধান সিদ্ধও করা হয়। দূষিত জল থেকে আর্সেনিক ঢুকে পড়ে চালের মধ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই চাল বিক্রি হয় দূরবর্তী স্থানেও। ফলে যে সব এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক নেই, সেখানেও মানুষ পরোক্ষ আর্সেনিক দূষণের শিকার হন। তবে শুধু চাল নয়, আনাজ, মাংস, দুধ ও মাছের মতো দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমেও এই বিষ ঢুকছে মানবদেহে। অর্থাৎ, আর্সেনিক বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা থাকছে খাদ্যাভ্যাসের। ফলে, একটা দীর্ঘস্থায়ী বিষক্রিয়ার মধ্যে যে আমরা ইতিমধ্যেই রয়েছি, এই গবেষণাটি তারই ইঙ্গিতবাহী।

ইঙ্গিত স্পষ্ট— আর্সেনিকের মতো দূষণ উপাদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিপদসীমা বলে কিছু হয় না। তাই নতুন ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন। কারণ, প্রশাসনের সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে চালের মতো খাদ্যসামগ্রী বিতরণ জনসাধারণ, বিশেষত শিশু ও অল্পবয়সিদের মধ্যে এই বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে, যা একমাত্র হ্রাস করা সম্ভব খাদ্যাভ্যাস বদলে। সেই সঙ্গে চাষে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বহুলাংশে কমিয়ে বাড়াতে হবে সেচের জলের ব্যবহার। আর্সেনিক দূষণ এ রাজ্যের এক দীর্ঘকালীন জনস্বাস্থ্য সঙ্কট। সমস্যার নিরসনে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে। আগামী প্রজন্মের ভাল থাকা অনেকটাই নির্ভর করবে এর উপর।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন