Indo Pak Relation

মিলাবে মিলিবে

এ বছরের জানুয়ারিতেই ভাইরাল হয়েছিল সাদিক খান ও সিক্কা খান দুই ভাইয়ের আবেগঘন সাক্ষাৎ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

দেশভাগের কারণে অমৃতসরের গ্রাম ছেড়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন নিসার ধিলোঁর বাবা ও ঠাকুরদা, কোনও দিন ফেরা হয়নি আর। ঠাঁই বদলালেই মুছে যায় না স্বভূমির ইতিহাস, থেকে যায় শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণাই উত্তরপ্রজন্মের যুবক নিসারকে উদ্বুদ্ধ করেছে ‘পঞ্জাব লহর’ গড়ে তুলতে। এমন এক উদ্যোগ যা ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের দু’পারের পঞ্জাবি মানুষদের মিলিয়ে দেয়, ফিরিয়ে দেয় স্বজন-বান্ধবের স্পর্শ। নিসার মুসলমান, তাঁর বন্ধু ভূপিন্দর সিংহ লাভলি পাকিস্তানি শিখ, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে গুরু নানকের জন্মস্থান নানকানা সাহিব-এ তাঁরা দেখতেন অগণিত মানুষকে, দেশভাগ যাঁদের ছিটকে ফেলেছে দুই দেশে, যাঁদের অনেকেরই পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-বন্ধুর খোঁজ নেই গত কয়েক দশক জুড়ে। স্বজনবিচ্ছিন্ন এই সব মানুষের হয়ে গোড়ায় সমাজমাধ্যমে তাঁদের পুরনো ঠিকানা, হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের উদ্দেশে বার্তা দিতেন দুই বন্ধু। তাতেই সাড়া মেলে, খোঁজ পাওয়া যায় অনেকের, প্রযুক্তির দৌলতে কথা ও দেখাও হয়। এ বছরের জানুয়ারিতেই ভাইরাল হয়েছিল সাদিক খান ও সিক্কা খান দুই ভাইয়ের আবেগঘন সাক্ষাৎ। দেশভাগের সময় দুই বালকের ছাড়াছাড়ি, মায়ের সঙ্গে ভারতে থেকে যাওয়া এক জনের, বাবার সঙ্গে পাকিস্তানে আর এক জন— চুয়াত্তর বছর পর করতারপুর করিডরে দুই ‘বৃদ্ধ’ ভাইয়ের মিলন সম্ভব হয়েছিল ‘পঞ্জাব লহর’-এর চেষ্টাতেই। পুরোদস্তুর ইউটিউব চ্যানেল খুলে এখন দেশভাগ-বিচ্ছিন্ন মানুষকে প্রিয়জনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই ব্রত নিসার ও ভূপিন্দরের। সীমান্তের দুই পারে দুই দেশের অজস্র ‘ফলোয়ার’ ও শুভার্থী মানুষই ওঁদের ‘কর্মী’।

Advertisement

সীমান্তের ও-পারের নিতান্ত সাধারণ দুই নাগরিকের এই উদ্যোগ স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তির মহোৎসবে প্রকৃত ‘অমৃত’যোগ, বললে অত্যুক্তি হবে কি? সরকারি মহোৎসব যখন ঘরে বাইরে পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা, নিয়মে বাঁধা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, ১৪ অগস্টকে স্মরণ করতে বলা হচ্ছে জাতীয় ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ হিসেবে অথচ পোশাকি স্মরণের বাইরে দেশভাগের রক্তাক্ত ক্ষতে প্রলেপের আন্তরিক সরকারি প্রয়াসের নমুনাটুকুও খুঁজে বেড়াতে বেগ পেতে হচ্ছে, তখন ‘শত্রু দেশ’-এর সাধারণ নাগরিকেরা বিভেদ বিদ্বেষের সীমানা পেরোচ্ছেন অকৃত্রিম মানবিকতা, সহমর্মিতা আর মানুষের শুভবুদ্ধির উপর অটল বিশ্বাসকে সম্বল করে, তাঁদের উদ্যোগকে কুর্নিশ করছেন দুই দেশের অগণিত সাধারণ মানুষ। স্বাধীনতা দিবস-আবহে এ বছর পাকিস্তানি শিল্পীর রবাব-বাদনে ‘জনগণমন’ ভাইরাল হয়েছে, দুই দেশের শান্তি ও বন্ধুতায় বছর বারো আগে ভারত ও পাকিস্তানের দু’টি সংবাদপ্রতিষ্ঠানের শৈল্পিক উদ্যোগও স্মরণীয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের রোজকার সাধারণ জীবনে দেশভাগের গভীর শূন্যতা ও বিষাদকে ছোঁয়ার, এবং তা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার কাজের কাজটি করে েদখালেন নিসার-ভূপিন্দররা। পঞ্জাব ছাড়া আর যে অঞ্চলটি দেশভাগের রক্তাক্ত শিকার, সেই বাংলায় উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে আজ দেশভাগ সাহিত্য পড়ানো হয়; দেশভাগ নিয়ে গবেষণা, আর্কাইভ নির্মাণ দ্রুতি পেয়েছে। দুই বাংলার মানুষ আজও খোঁজেন ছেড়ে আসা গ্রাম, নদী, মেলা, বন্ধু— ফিরে যাওয়া আর ফিরে পাওয়ার নাগরিক মানবিক উদ্যোগ বাংলায় কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন