Inflation

উভয়সঙ্কট

গত ফেব্রুয়ারিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল ৪.৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে সেটি হয়েছে ৫.৭ শতাংশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৫:০০
Share:

গত তিন বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। কিন্তু অতিমারির পরে, বিশেষত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে, বিশ্ববাজার-সহ দেশের অর্থনীতি যে ভাবে প্রভাবিত হয়েছে, তাতে সেই নীতি পরিবর্তন এক প্রকার অনিবার্যই ছিল। নতুন অর্থবর্ষের প্রথম ঘোষণায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মনিটরি পলিসি কমিটি জানাল, মূল্যবৃদ্ধির চড়তে থাকা হারে রাশ টানার উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এ বার। সুদের হার আপাতত অপরিবর্তিতই থাকল, কিন্তু আগামী দিনে তা বাড়ানোর ইঙ্গিত মিলল। রিভার্স রেপো রেট অপরিবর্তিত রেখে ব্যাঙ্ক চালু করল ‘স্ট্যান্ডিং ডিপোজ়িট ফেসিলিটি’ (এসডিএফ)। রিভার্স রেপো রেট এবং এসডিএফ-এর সাহায্যে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত নগদ শুষে নিতে পারে আরবিআই। এসডিএফ-এর ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির থেকে টাকা নেওয়ার সময় তাদের সরকারি ঋণপত্র দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আগামী দিনে বাজার থেকে সাড়ে আট লক্ষ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত নগদ সরাতে রিভার্স রেপো রেট-এর বদলে এসডিএফ-কে কাজে লাগানোর উপরে জোর দিচ্ছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এসডিএফ-এর হার রাখা হয়েছে ৩.৭৫ শতাংশে।

Advertisement

গত ফেব্রুয়ারিতেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল ৪.৫ শতাংশ। বর্তমান অনিশ্চিত আর্থিক পরিস্থিতির সাপেক্ষে সেটিকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫.৭ শতাংশ। জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির ৭.৮ শতাংশের পূর্বাভাসকে কমিয়ে করা হল ৭.২ শতাংশ। আর্থিক বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের দাঁড়িপাল্লাটি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গত দু’বছর যাবৎ বৃদ্ধির দিকেই ঝুঁকিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে সে পথে হাঁটার উপায় আর নেই, ব্যাঙ্কের অবস্থানেই স্পষ্ট। মূল্যস্ফীতির সমস্যাটি শুধুমাত্র ভারতের নয়। দুনিয়া জুড়েই সেই প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। আমেরিকায় ভোগ্যপণ্য সূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার চার দশকের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই সুদের হার বাড়াতে আরম্ভ করেছে। ফলে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককেও সুদের হার বাড়াতেই হবে। কিন্তু, ব্যাঙ্ক এত দিন মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখছিল। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ, টানা তিন মাস ভোগ্যপণ্যের সূচকের নিরিখে মূল্যস্ফীতির হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমা ছয় শতাংশের উপরে ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাঙ্ক ব্যর্থ কেন, এই প্রশ্নের জবাবদিহি করার আইনি দায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব শুধু পেট্রো-পণ্যের দামেই নয়, অন্যান্য প্রাথমিক পণ্যের উপরও পড়ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। ফলে, আমদানি খাতে খরচ বাড়ছে, চলতি খাতায় ঘাটতির পরিমাণও। অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে আর্থিক নীতি ক্রমে কঠোরতর হওয়ায় বিদেশি লগ্নিতেও টান পড়ার সম্ভাবনা। ফলে, আশঙ্কা যে, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমানের চেয়ে বেশি পড়বে। মূল্যস্ফীতির উপর তার চাপও পড়বে। সেই ধাক্কা সামলাতে ব্যাঙ্ক আর্থিক নীতিকে আরও কঠোর করলে বৃদ্ধির হারে তার কুপ্রভাব পড়বে। দড়ির উপর হাঁটার এই পরিস্থিতিটির দায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অস্বীকার করতে পারে না। উদ্ধারের পথও তাকেই ভাবতে হবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন