India's Foreign Policy

নতুন মৈত্রী

ভারতের অন্যতম উদ্বেগের কারণ জ্বালানির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, যার জেরে তার অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশই আমদানি করতে হয় বিদেশ, মূলত পশ্চিম এশিয়া থেকে।

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৩১
Share:

গত কয়েক বছর ধরেই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সু-সম্পর্ক গড়ে তোলা ভারতীয় বিদেশনীতির অন্যতম লক্ষ্য। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি-র ভারত সফর সম্ভবত সেই প্রচেষ্টারই ফল। কাতারের রাষ্ট্রনেতার এ-হেন দিল্লি সফরটি সম্পন্ন হল এমন সময়ে যখন ভারত শুধু তার জ্বালানির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আগ্রহী নয়, সংঘর্ষ এবং অশান্তির মাঝে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে উদ্যোগী। মোদী সরকারের তৃতীয় দফার গত নয় মাসে অন্তত তিন বার কাতার সফরে গিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে দুই রাষ্ট্রই নিজেদের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কের পর্যায়ে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও দ্বিগুণ করতে আগ্রহী দুই রাষ্ট্রনেতা। গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের অন্যতম উদ্বেগের কারণ জ্বালানির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, যার জেরে তার অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট চাহিদার ৭০ শতাংশই আমদানি করতে হয় বিদেশ, মূলত পশ্চিম এশিয়া থেকে। সম্প্রতি এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কাতার। গত বছর দুই দেশের মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের কুড়ি বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

অন্য দিকে, পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতির ক্ষেত্রেও ভারতের কাছে কাতারের গুরুত্ব বিলক্ষণ। এক দিকে যেমন আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো একাধিক দেশের সামরিক এবং বিমান ঘাঁটি রয়েছে এই রাষ্ট্রে, তেমনই হামাস, হিজ়বুল্লা ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো একাধিক জঙ্গি ইসলামি গোষ্ঠীর দফতরও অবস্থিত রাজধানী দোহায়। সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক গড়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কাতার নেতৃত্বের উপরে বহুলাংশে নির্ভর করেছিল মোদী সরকার। ২০২৪ সালে দিল্লির সার্বিক প্রচেষ্টায় সে দেশে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ভারতের আট জন প্রাক্তন নৌ-আধিকারিককে কাতারের আমিরের মার্জনা করার সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করেছে। ২০২০ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকা এবং তালিবানদের মধ্যে দোহা শান্তি চুক্তি হোক বা সাম্প্রতিক কালে গাজ়ায় যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টা, আঞ্চলিক শান্তিস্থাপনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সর্বাগ্রে থেকেছে কাতার।

ইজ়রায়েল এবং হিজ়বুল্লার মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা-সহ গাজ়ায় সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় দেখা গেল আপস-আলোচনায় কাতারের দক্ষতা। আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেখানে গাজ়াকে ‘সাফ করা’র এবং ইরানের উপরে পুনরায় ‘সর্বাধিক চাপ’ নীতি আরোপের ভয় দেখিয়েছেন, সেখানে এই সমস্যার সমাধান খোঁজার দায়িত্ব নেওয়া সহজ নয়। কাতার-সহ এই অঞ্চলের একাধিক রাষ্ট্রের উপরই ভরসা। ফলে, শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবাদে পশ্চিম এশিয়ার জটিল রাজনৈতিক ভূ-মানচিত্রে কাতারই দিল্লির উপযুক্ত কৌশলগত সহযোগী বটে। অন্য দিকে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এত কাল চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের সামনেও কাতারের মতো রাষ্ট্রের সঙ্গে সখ্য বিশেষ সহায়ক হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন