Supreme Court

খারিজ

সংবিধানের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, জীবনের অধিকারের মতোই, স্বাধীন ও মুক্ত থাকা নাগরিকের মৌলিক অধিকার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫৬
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।

জামিনই নিয়ম, পুলিশ বা জেল হেফাজত ব্যতিক্রম, এ কথা ফের মনে করাতে গিয়ে কঠোর হতে হল সুপ্রিম কোর্টকে। তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ সম্প্রতি হাই কোর্টগুলিকে নির্দেশ দিল, নিম্ন আদালতের যে বিচারকরা যথেষ্ট বিবেচনা না করেই জামিনের আবেদন খারিজ করছেন, অভিযুক্তকে পুলিশ বা জেল হেফাজতে পাঠানো প্রায় নিয়মে পরিণত করেছেন, তাঁদের বিচারের কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় আইন শিক্ষালয়ে পাঠাতে। এই কথাগুলিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে প্রশাসন, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে। ব্যক্তির স্বাধীনতার সুরক্ষা করা যে রাষ্ট্রের এক প্রধান কর্তব্য, সে কথাটা যেন গুরুত্ব হারাচ্ছে। সংবিধানের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, জীবনের অধিকারের মতোই, স্বাধীন ও মুক্ত থাকা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। আক্ষেপ এই যে, সংবিধানের এই সুরক্ষাকবচ অতি সামান্য কারণে, অকারণে, ক্রমাগত নস্যাৎ করছে রাষ্ট্র। নিরপরাধ হয়েও কেবল মামলার খরচ জোগাতে না-পারায় বহু বছর জেলবন্দি থেকে অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন— এমন নিদর্শন প্রচুর। সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলা এবং গ্রেফতার করে জেলবন্দি করার ঘটনা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। তাই শীর্ষ আদালতকে ক্রমাগত মনে করাতে হচ্ছে যে, বিশেষ কারণ না থাকলে ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না পুলিশ, আদালত। নিম্ন আদালতগুলি আইন মেনে কাজ করছে কি না, তার প্রতি নজর রাখা হাই কোর্টেরই কাজ, তা মনে করিয়েছে আদালত।

Advertisement

বিচারাধীন বন্দিদের সংখ্যায় বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সঞ্জয় কিশন কউল এবং এম এম সুন্দরেশ সংবিধান এবং বিভিন্ন আইনের নানা ধারা বিশ্লেষণ করে জামিন দেওয়ার বিষয়ে এক বিস্তারিত নির্দেশরেখা বা ‘গাইডলাইন’ তৈরি করে দিয়েছেন (১১ জুলাই ২০২২)। অকারণ গ্রেফতারি যে কোনও দেশকে পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত করে। গ্রেফতার করা বা জামিন খারিজ করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে রায়গুলিতে বিশদে বলা হয়েছে, সেগুলিকে আইনের পাঠ্যক্রমে রাখার নির্দেশও দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজ্যে নিম্ন স্তরের আদালতগুলি জামিনের আবেদন খারিজ করাকেই নিয়মে পরিণত করেছে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, অসম এবং তামিলনাড়ুর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। কারণ, এর ফলে যেমন অকারণে বন্দি হচ্ছেন অনেকে, তেমনই জামিনের আবেদন জমা পড়ছে বলে মামলার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাই জামিন দেওয়ার শর্তাবলি সুনির্দিষ্ট করে জামিন আইন তৈরি করার সুপারিশ করে সুপ্রিম কোর্ট।

তাতেই বা কী লাভ? বিরোধীকে শায়েস্তা করতে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা ঠুকতে হাত পাকিয়েছে প্রায় সব দলের সরকার। সরকার রুষ্ট হলে পুলিশ অকারণে গ্রেফতার করবে, এবং আদালতে জামিনের আবেদন খারিজ হবে, এমন ভাবতে আজ অভ্যস্ত হয়েছেন নাগরিকও। ফলে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা কেবলই বাড়বে, তাতে আর আশ্চর্য কী? সরকারি তথ্য অনুসারে ১৯৭৫ সালে জেলগুলোতে বিচারাধীন বন্দি ছিল ৫৬ শতাংশ, এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ শতাংশ (২০২১)। স্বাধীনতার পঁচাত্তর পার করা দেশের নাগরিকের স্বাধীনতা হরণ করা আরও সহজ হয়েছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন