Houthi attacks in Red Sea

সাগরসঙ্কটে

বাধা প্রধানত দুই দিক থেকে। এক, নিরাপত্তা। দুই, অপরিশোধিত খনিজ তেলের মূল্যবৃদ্ধি। পশ্চিম এশিয়ার যে কোনও সঙ্কটের একেবারে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বিশ্বব্যাপী খনিজ তেলের বাজারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ওই দেখ, পশ্চিমে মেঘ ঘনালো। ভারতীয় বৈদেশিক দফতরের কর্তাদের মানসিক পরিস্থিতি এখন এই রকমই। সচকিত আশঙ্কায় তাঁরা এখন পশ্চিমপানে তাকিয়ে আছেন। কেবল প্যালেস্টাইন নয়, একের পর এক অঘটন ঘটে চলেছে পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, সুয়েজ় ক্যানাল অঞ্চলে, যাতে ভারতের বিলক্ষণ উদ্বেগের কারণ আছে। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি চলে এই লোহিত সাগর পথ দিয়ে। ইয়েমেনি হুথি গোষ্ঠীর আক্রমণে এখন সেখানে বিপদ ও অশান্তির ঘোর কালো ছায়া। হুথিদের গোলাগুলির প্রধান লক্ষ্যই হল বাণিজ্যজাহাজ। একে তো কোভিড পর্বে বাণিজ্য চালনায় বিরাট বাধা তৈরি হয়েছিল, তার উপরে কোভিড-উত্তর পর্বে পশ্চিম এশিয়ার উপর্যুপরি অশান্তি বাণিজ্যিক আদানপ্রদান এখনও বিপন্ন করে রেখেছে। বহু দেশ এতে ক্ষতিগ্রস্ত, তবে ভারতের ক্ষতির পরিমাণই সর্বাধিক, কেননা ভারত এই অঞ্চলে বৃহত্তম বাণিজ্য-চালক। সম্প্রতি জলদস্যু দমন অভিযানে সফল হয়ে ভারতের নৌসেনা বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার, পাকিস্তানের ১৯ জন নাগরিক উদ্ধার হয়েছেন ভারতের নৌ-সেনাবাহিনী কর্তৃক। কিন্তু তা সত্ত্বেও পণ্যবাহী জাহাজের চলাচল বিষয়ে নিরাপদ বোধ করার সময় এখনও দূর অস্ত্ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

Advertisement

বাধা প্রধানত দুই দিক থেকে। এক, নিরাপত্তা। দুই, অপরিশোধিত খনিজ তেলের মূল্যবৃদ্ধি। পশ্চিম এশিয়ার যে কোনও সঙ্কটের একেবারে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বিশ্বব্যাপী খনিজ তেলের বাজারে। প্যালেস্টাইনের সঙ্কট পার্শ্ববর্তী বহু অঞ্চলে ইসলামি জঙ্গিদের আরও বেশি করে আক্রমণপরায়ণ করে তুলতে পারে, সেই সম্ভাবনা রয়েছেই। সঙ্কট এড়ানোর লক্ষ্যে আমেরিকা ইতিমধ্যে সামুদ্রিক অক্ষ তৈরি করতে শুরু করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন, বৃহৎ বাণিজ্য কোম্পানিগুলি স্থির করেছে আফ্রিকার উপকূল ঘুরে আসাই নিরাপদ। কিন্তু কোনও ভাবেই আর্থিক ক্ষতি এড়ানোর পথ এখনও মেলেনি। মনে রাখতে হবে, এখনও পর্যন্ত হুথিরা সরাসরি আমেরিকান জাহাজে আঘাত হানেনি, ফলে আমেরিকাও সরাসরি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করেনি। কিন্তু যে ভাবে তারা নির্বিচারে আক্রমণ শাণাচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতেই বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত আসে স্থলসঙ্কটের কথাও। জর্ডন সীমান্তে আপাত ভাবে ইরানের ড্রোনহানার ফলে কয়েক জন আমেরিকান সেনার নিধনে অতীব ক্ষুব্ধ আমেরিকা। ইরান অবশ্য এই হানার দায়িত্ব অস্বীকার করছে। ইরানের সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, আমেরিকা ‘নিশ্চিন্ত’ থাকতে পারে, গাজ়ার পরিস্থিতি দেখে আমেরিকার সেনাশিবিরের উপর ড্রোন আক্রমণ চালানোর জন্য বহু ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইতিমধ্যেই ধনেপ্রাণে প্রস্তুত— ইরানের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় তারা বসে নেই! বাস্তবিক, পরিস্থিতি যে কতখানি আতঙ্কজনক, ইজ়রায়েল ও তার অমিত-অভয়দায়ী বন্ধুবর আমেরিকা সে বিষয়ে যথেষ্ট অবহিত কি না, জানা নেই। এ তো কেবলমাত্র মানবিক সঙ্কট নয়— তার চেয়ে অনেক বেশি। দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও শান্তিস্থাপনের প্রয়াস যদি না নেওয়া হয়, এক সুবৃহৎ অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মুখোমুখি হতে চলেছে বিশ্ব।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন