Interest Rates

খিড়কি

সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বাড়লে, মানুষ শেয়ার বাজারে যোগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হয়ে উঠলে তা অর্থব্যবস্থার পক্ষে সুসংবাদ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৮
Share:

সুদের হার বাড়ুক বা কমুক, সেই অনুসারে সঞ্চয় করা বা না-করার উপায় সঞ্চয়কারীর নেই। প্রতীকী ছবি।

দফায় দফায় সুদের হার বাড়ছে। এমনকি কোনও কোনও ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টেও সুদের হার পৌঁছে গিয়েছে আট শতাংশে। কিন্তু, দু’টি অতি তাৎপর্যপূর্ণ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়ল না। এমপ্লয়িজ় প্রভিডেন্ড ফান্ডে (ইপিএফ) সুদের হার বাড়ল ০.০৫ শতাংশ-বিন্দু, পাবলিক প্রভিডেন্ড ফান্ডের (পিপিএফ) ভাগ্যে সেটুকুও জুটল না— সে ক্ষেত্রে সুদের হার অপরিবর্তিত থাকল। কেন, তার একটি সহজ উত্তর আছে— সরকারের হাতে টাকার অভাব। কিন্তু, প্রকৃত উত্তরটি সম্ভবত এতখানি সহজ নয়। ইপিএফ-এর সঞ্চয় চাকরিজীবীর ইচ্ছাধীন নয়— বেতনের একটি অংশ এই খাতে জমা পড়বে, নিয়োগকর্তাও সমপরিমাণ টাকা জমা দেবেন, এটাই নিয়ম। অর্থাৎ, এই সঞ্চয় বাধ্যতামূলক, এবং তাতে সরকারের অখণ্ড অধিকার। সে খাতে সুদের হার বাড়ুক বা কমুক, সেই অনুসারে সঞ্চয় করা বা না-করার উপায় সঞ্চয়কারীর নেই। অনুমান করা চলে, গত্যন্তরহীন এই পুঁজির জন্য সরকার ব্যয় বাড়াতে চায়নি। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, বহু চাকরিজীবীর ক্ষেত্রেই ইপিএফ একমাত্র সঞ্চয়। এই টাকাটি বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারের ঘরে জমা না করতে হলে যে ক্ষেত্রে বেশি সুদ পাওয়া যায়, সেখানে টাকাটি রাখা সম্ভব হত। ফলে, তাঁদের পুঁজির পরিমাণও বাড়ত। বিশেষত স্বল্প আয়সম্পন্ন চাকরিজীবী মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এমন সিদ্ধান্ত কি নৈতিক? বর্তমান অনিশ্চিত আর্থিক অবস্থায় প্রশ্নটির গুরুত্ব বিপুল।

Advertisement

পিপিএফ-এর ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের বাধ্যবাধকতা নেই— কেউ চাইলে এই খাতে টাকা না জমিয়ে অধিকতর সুদ পাওয়া যায়, এমন সম্পদে টাকা লগ্নি করতেই পারেন। অনুমান করা চলে, সরকারও তা-ই চায়। সে কারণেই পিপিএফ-এর সুদ আটকে রইল বার্ষিক ৭.১ শতাংশ হারে। অন্য ক্ষেত্রটি কী? ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজ়িটে সুদের হার পিপিএফ-এর তুলনায় বেশি, কিন্তু এত বেশিও নয় যে, অর্জিত সুদের উপর আয়কর দেওয়ার পরও তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে। বহু মানুষের কাছেই সম্ভবত শেয়ার বাজারে লগ্নিই হবে সেই গ্রহণযোগ্য, আকর্ষণীয় বিকল্প। তাতে দোষের কিছু নেই— শেয়ার বাজারে সাধারণ মানুষের লগ্নি এই বাজারকে অনেক বেশি বিস্তৃত করে তুলতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল, শেয়ার বাজারে টাকা লগ্নি করে তার থেকে লাভ করতে গেলে যে আর্থিক শিক্ষার প্রয়োজন, দেশের কত শতাংশ মানুষের তা রয়েছে? যথাযথ প্রশিক্ষণ বা জ্ঞান ছাড়াই সেই বাজারে প্রবেশ করা বহু মানুষের ক্ষেত্রেই হয়ে উঠতে পারে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। অতএব, ভেবে দেখা প্রয়োজন, সরকার দেশের মানুষকে সেই পথেই ঠেলে দিতে চাইছে কি না।

সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বাড়লে, মানুষ শেয়ার বাজারে যোগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হয়ে উঠলে তা অর্থব্যবস্থার পক্ষে সুসংবাদ। সরকারেরও যদি তেমনই ইচ্ছা হয়, তাতেও আপত্তি করার কারণ নেই। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে ইচ্ছাটি স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন। এবং, সেই অনুযায়ী নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন— সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক বাজার সম্বন্ধে সচেতনতা ও শিক্ষা বৃদ্ধি যথাযথ নীতি ব্যতীত সম্ভব নয়। কিন্তু, এই স্বচ্ছতার পথ না মাড়িয়ে সরকার যদি সুদের হারের ‘নাজ’ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে আর্থিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চায়, তবে তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন