Myanmar

জিগীষা

সেনাশাসন-বিরোধী আবেগ এই বার সু চি-র অহিংস আন্দোলনকে পার করিয়া সমাজের সর্বস্তরকে অভিভূত করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৪৫
Share:

অভ্যুত্থান এবং তৎপরবর্তী স্বৈরাচারে মায়ানমারের সেনাবাহিনী দেশের উপর সার্বিক দখলদারি সম্পন্ন করিয়াছে। তাহারা এখন ভবিষ্যৎটিও নিশ্ছিদ্র করিতে সচেষ্ট। ২০১১ সালে ভূতপূর্ব সেনা-জমানার অবসান ঘটিলেও নবজাতক গণতন্ত্রে তাহাদেরই দখল ছিল, ২০১৫-র নির্বাচনে আউং সান সু চি-র দল জয়ী হইবার ফলে যাহা রাজনৈতিক ভাবে খর্ব হয়। ২০২০-র নির্বাচনেও যখন তাহারাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করিল, তখন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুসারেই সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ হইল— উহা আইনগত পথে সেনাকে ক্ষমতাবলয় হইতে অপসৃত করিবার কৌশল। শেষতম অভ্যুত্থান তাহারই প্রতিক্রিয়া। অতঃপর সু চি-কে এগারোটি মামলায় অভিযুক্ত করিয়াছে সেনা, সম্প্রতি যাহাতে চার বৎসরের কারাদণ্ড ঘোষিত হইয়াছে। সেনাও কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করিয়া সন্তুষ্ট নহে। তাহারা জানে, গণ-আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখে জুন্টার কর্তৃত্বকে চিরস্থায়ী করিতে হইলে আইনি ফাঁকগুলি বুজাইতে হইবে।

Advertisement

এই পর্বে যদিও সেনাকর্তাদের কাজটি সহজ নহে। ১৯৪৮-এ স্বাধীনতার পর হইতে মায়ানমারে গৃহযুদ্ধের আগুন কদাপি সম্পূর্ণ নিবে নাই। কিন্তু অধিকাংশ পর্বে সেনার যে একাধিপত্য ছিল, সেই বজ্রমুষ্টি এখন আলগা হইয়াছে, এক বার গণতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া নাগরিক আর একচ্ছত্র কর্তৃত্বের সম্মুখে মাথা নোয়াইতে রাজি নহেন। অতএব, ইয়াঙ্গনের রাস্তায় গণতন্ত্রপন্থীদের শান্তিপূর্ণ জমায়েতে সেনার গাড়ি তিন জনকে পিষিয়া মারিলেও পিছু হটেন নাই প্রতিবাদীরা, প্রথম বার গ্রামগঞ্জেও অভ্যুত্থানের প্রকাশ্য প্রতিরোধ দৃশ্যমান। বস্তুত, সেনাশাসন-বিরোধী আবেগ এই বার সু চি-র অহিংস আন্দোলনকে পার করিয়া সমাজের সর্বস্তরকে অভিভূত করিয়াছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন সেনাকর্তারাও, অতএব সু চি-কে নিশানা করিয়াও তাঁহার দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের সহিত বৈঠকে বসিয়াছেন তাঁহারা। রাষ্ট্রব্যবস্থার সার্বিক নিয়ন্ত্রণ আকাঙ্ক্ষা করিলে রাজনীতি ও আইন দুইটি পথেই সমান সক্রিয়তা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক হিসাবনিকাশও ইতিমধ্যে অনেকখানি পাল্টাইয়াছে, এবং পাল্টাইতেছে। জুন্টার সহিত চিনের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত, অভ্যুত্থানের পশ্চাতেও তাহাদের ভূমিকাটি উপেক্ষা করিবার নহে, নূতন জমানায় মায়ানমারের উপর বেজিংয়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত প্রভাব ক্রমবর্ধমান। অপর পক্ষে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে সেনাজমানার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে জো বাইডেনের প্রশাসন। প্রতিবেশী ভারতকে অবশ্য ভারসাম্যের হিসাবটিই কষিতে হইতেছে। আমেরিকা আয়োজিত ‘গণতন্ত্র শীর্ষসম্মেলন’-এ যোগ দিবার পূর্বে সু চি-র কারাদণ্ডকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দেয় নয়াদিল্লি। কিন্তু প্রতিবেশী শাসকগোষ্ঠীকে এতখানি দূরে ঠেলিলেও তাহাদের চলিবে না, তাহাতে বেজিংয়ের সহিত কূটনীতির খেলায় পরাজয়ের আশঙ্কা বাড়িবে। চলতি সপ্তাহে তাই জুন্টার সহিত আদানপ্রদানে মায়ানমারে পাড়ি জমাইয়াছিলেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। আপাতত এই ভাবেই ভূ-রাজনীতির অঙ্ক কষিতেছে নানা দেশ। এবং, শাসনের ভিত পোক্ত করিতে অভ্যন্তরীণ হিসাবের সহিত ইহাতেও সতর্ক আপন দেশ জয়ে ইচ্ছুক সেনাকর্তারা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন