India-Pakistan relation

পাক-চক্রে

পাকিস্তানের কাশ্মীর কার্ড এবং ভারতের নদীচুক্তি কার্ড, দুইয়ে মিলে এখন পশ্চিম সীমান্তমঞ্চ উত্তেজনায় জমজমাট। দুর্ভাগ্য— দুই দেশের অধিবাসী সমাজের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:০৫
Share:

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ছবি: রয়টার্স।

কিছু দিন আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক স্থিত ও সহজ করা জরুরি। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ কেবল ‘দুঃখ, দারিদ্র এবং বেকারত্ব’ই এনে দিতে পেরেছে। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি বার্তা দিচ্ছিলেন যে, আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। এই বার্তার পর পরই এল সংশোধনী: না, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হতে পারে, একমাত্র যদি কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্ত রদ করা হয়। বুঝতে অসুবিধা নেই, ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির উচ্চকর্তাদের ক্ষমতাশীল অংশের কাছে পাক প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক বার্তা না-পসন্দ হওয়াতেই এই শর্ত আরোপ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সময়েও দেখা গিয়েছে ভারত বিষয়ক মৈত্রী বার্তা এ ভাবে দ্রুত ‘সংশোধন’ করার প্রয়াস। প্রবণতাটি পরিচিত। বস্তুত, বহুপরিচিত। দুই দেশের মধ্যেই ‘বন্ধুত্ব’-এর বার্তার চেয়ে রাজনৈতিক ভাবে বেশি কার্যকর হয় চ্যালেঞ্জ-এর বার্তা: ভারত-পাক সম্পর্কের ধারাটি এত দিনে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। বিশেষত পাকিস্তানে যখন সামাজিক ভারসাম্য নিম্নগামী এবং অর্থনৈতিক অস্থিতি ক্রমবর্ধমান, এবং সামনেই নির্বাচন, তখন মৈত্রী বার্তার কোনও ‘উপযোগিতা’ সে দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক উচ্চ কর্তারা দেখবেনই বা কেন।

Advertisement

ভারতের দিক থেকেও যে উচ্চতারে বার্তা বাঁধার চেষ্টা চলছে, তা স্পষ্ট সিন্ধুজল বিষয়ক সাম্প্রতিকতম প্রস্তাবে। সিন্ধু উপত্যকার ভারতীয় অংশে সেচ প্রকল্প বা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা উত্থাপিত হলেই পাকিস্তান বাধা দেয়, সুতরাং ভারতীয় সরকার ২৫ তারিখ একটি চড়া তারে বাঁধা বার্তা পাঠাল: ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তির সংশোধন চায় দিল্লি। িতন মাসের মধ্যে এর স্বীকৃতি দাবি করা হয়েছে, যার নিহিতার্থ, ভারত বলতে চায় যে এই অসহযোগের দায় সম্পূর্ণ পাকিস্তানের, ইসলামাবাদকেই অতিরিক্ত পথ এগিয়ে আসতে হবে বোঝাপড়ার জন্য। স্পষ্টতই কঠোর অবস্থান: জল-কূটনীতিকে কয়েক ধাপ চড়িয়ে কূটনৈতিক লড়াইতে পরিণত করার দিকে এগোনো। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দুই দেশের সম্পর্ক আর এক বালাকোট-মুহূর্তে উপনীত।

পাকিস্তানের কাশ্মীর কার্ড এবং ভারতের নদীচুক্তি কার্ড, দুইয়ে মিলে এখন পশ্চিম সীমান্তমঞ্চ উত্তেজনায় জমজমাট। দুর্ভাগ্য— দুই দেশের অধিবাসী সমাজের। প্রতিবেশী দেশদ্বয়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির এই প্রণালী শেষ অবধি অস্থিরতা, সংঘর্ষ এবং মানবিক ক্ষয় বাড়াবে, যেমন প্রতি বারই হয়। কোনও বারই এর থেকে শিক্ষা নেয় না দুই দেশের সরকার, এ বারও নেবে না। ভারতের দিকে নিশ্চয়ই জল নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আছে, কিন্তু পাকিস্তানও একান্ত ভাবে সিন্ধুজলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং দর কষাকষির এমন চরম পন্থার থেকে আলাপ-আলোচনার উপর ভরসা রাখা উচিত ছিল। জরুরি ছিল। দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতে এমনিতেই শান্তিপূর্ণ আলোচনার কোনও বিকল্প থাকতে পারে না, তদুপরি যেখানে এত মানুষ সরাসরি কূটনৈতিক উত্তেজনার ফলে প্রত্যক্ষত বিপন্ন হতে পারেন, সেখানে তো অনেক বেশি সংযম ও ধৈর্য প্রত্যাশিত। তবে এত দিনে এই প্রত্যাশা যে নিতান্ত অলীক ও একান্ত অবাস্তব, তাও বহুপ্রমাণিত।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন