Government hospitals

অচিকিৎসা

না কি, কেবলই দায় এড়াইবার প্রচেষ্টা? ইতিপূর্বে রোগী অন্যত্র পাঠাইবার বিধিনিয়ম বাঁধিবার চেষ্টা হইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৫:৪২
Share:

পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক দুর্মূল্য কী? মরণাপন্ন রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালের একটি শয্যা। এমনকি, ট্রলিও দুষ্প্রাপ্য। শহরের নানা জেলা হইতে ‘রেফার’ হইয়া আসা রোগীর রোগযন্ত্রণাকে ছাড়াইয়া যায় হাসপাতাল-যন্ত্রণা। চার-পাঁচটি হাসপাতালে ঘুরিয়া ফের প্রথম হাসপাতালেই ফিরিতে হয়। প্রতি পদে চিকিৎসকদের হাতে-পায়ে ধরিয়া সাধিতে হয়, দালালদের ঘুষ দিতে হয়, চার-পাঁচ গুণ ভাড়া গনিতে হয় অ্যাম্বুল্যান্সের। অবশেষে হাসপাতাল চত্বর অথবা ফুটপাতে আশ্রয় লইয়া শয্যা পাইবার অপেক্ষা করিতে হয়। কোনও সভ্য দেশ ইহাকে ‘চিকিৎসাব্যবস্থা’ বলিবে না। কিন্তু বঙ্গে ইহাই দস্তুর। রেফার-সমস্যাটি বহু পুরাতন, তাহার জেরে রোগীর যন্ত্রণা, হয়রানি, এমনকি মৃত্যুর সংবাদেও নূতনত্ব হয়তো নাই। কিন্তু, এই পরিস্থিতিকে ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া দেখিবার অভ্যাসটি মারাত্মক। যাহার টিউমার যে কোনও মুহূর্তে ফাটিতে পারে, দুর্ঘটনায় আহত যে ব্যক্তির ত্বক ফুঁড়িয়া হাড় বাহির হইয়া রহিয়াছে, যে বৃদ্ধ পড়িয়া গিয়া অচৈতন্য, তাঁহাদের ‘শয্যা নাই’ বলিয়া একের পর এক হাসপাতাল ফিরাইতেছে— ইহার অপেক্ষা অস্বাভাবিক আর কিছুই হইতে পারে না। হাসপাতালে চিকিৎসা বিনামূল্যে মিলে। কিন্তু কত পরিজনের বিনিদ্র উদ্বেগের মূল্যে, প্রতীক্ষারত রোগীর যন্ত্রণার মূল্যে, কত অকালমৃত্যুর মূল্যে সরকারি শয্যার দাম চুকাইতে হয়, তাহার হিসাব ভুলিলে চলিবে না।

Advertisement


অবশ্য সরকারি চিকিৎসার অর্থমূল্যও কম নহে— হাসপাতালের দালালকুল শয্যার বিনিময়ে কোনও না কোনও উপায়ে টাকা আদায় করিয়া থাকে। আক্ষেপ, এই দুর্নীতিচক্রে চিকিৎসকদের একাংশও শামিল হইয়াছেন। এই অর্থলোলুপ, হৃদয়হীন ব্যক্তিরাই কি সরকারি ব্যবস্থার মুখ? অবশ্যই তাহা নহে। কিছু দিন পূর্বে, অতিমারির দিনগুলিতেই সরকারি হাসপাতালগুলির তৎপর, মানবিক রূপ দেখিয়া চমৎকৃত হইয়াছিল রাজ্যবাসী। কোভিড-আক্রান্তদের ফেরায় নাই, বরং চিকিৎসা ও পরিচর্যায় আন্তরিকতার স্পর্শ সে দিন মিলিয়াছিল। শৈবাল-আচ্ছাদিত জলাশয় হইতে শ্যামল আস্তরণ সরিলে যেমন স্বচ্ছ জল ঝলমল করিয়া ওঠে, তেমনই দুর্নীতি, দুরভিসন্ধির আবরণ মুক্ত করিতে পারিলে সরকারি হাসপাতালও তাহার কর্মশক্তি ও সংবেদনশীলতা প্রকাশ করিতে পারে। আক্ষেপ, স্বাস্থ্য ভবন সেই ব্যবস্থাটুকু করিয়া উঠিতে পারিল না।


রোগী ‘রেফার’ করিবার পদ্ধতি কেন কার্যত রোগী তাড়াইবার কল হইয়া উঠিয়াছে, কেন জেলায় এতগুলি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করিবার পরেও কলিকাতায় পাঠানো হইতেছে রোগীকে, তাহার অনুসন্ধান প্রয়োজন। ইহা কি বাস্তবিকই চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব? না কি, কেবলই দায় এড়াইবার প্রচেষ্টা? ইতিপূর্বে রোগী অন্যত্র পাঠাইবার বিধিনিয়ম বাঁধিবার চেষ্টা হইয়াছে। কোন জেলার রোগী কোন মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো চলিবে, পাঠাইবার পূর্বে শূন্য শয্যার পরিস্থিতি কী রূপে জানা যাইবে, তাহা নির্দিষ্ট করা হইয়াছে। কেন সেই সকল ব্যবস্থা কাজ করে নাই, তাহা দেখিতে হইবে। ব্যবস্থাপনায় বহুবিধ ফাঁক রহিয়াছে। মেডিক্যাল কলেজগুলির স্বাতন্ত্র্য, চিকিৎসক বণ্টনে বৈষম্য হইতে পরিকাঠামোর দুর্বলতা, সকল বিষয়ই বিবেচনা করা প্রয়োজন। রেফার সমস্যার সমাধানে আর বিলম্ব চলিবে না।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন