The Ganges

অ-মান্য

প্রশ্ন যেখানে গঙ্গাদূষণ, সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্যে এমন সুবিশাল ফাঁক কেন? পরিবেশবিদদের একাংশ একদা জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গার জলের সঙ্গে নর্দমার জলের তফাত করা যায় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

এই রাজ্যে দূষণজনিত বেনিয়মের সংখ্যা অগুনতি। কোথাও আইন থাকলেও তা পালনে বিন্দুমাত্র সদিচ্ছা দেখা যায় না, আবার কোথাও বেআইনি ঘোষণার পরেও নজরদারির অভাবে পূর্বাবস্থাই বজায় থাকে। এই বিস্তীর্ণ তালিকার মধ্যে হাওড়ার চাঁদমারি ঘাট সংলগ্ন ন’টি হোটেলকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাদের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল গঙ্গাদূষণের। হোটেল-নিঃসৃত কঠিন ও তরল বর্জ্য গঙ্গায় মিশে দূষণমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ২০০৭ সালে হোটেলগুলি স্থানান্তরের নোটিস দিয়েছিল খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। অতঃপর ১৬ বছর অতিক্রান্ত। আজও তারা বহাল তবিয়তে বিনা বাধায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। হোটেল বন্ধের নোটিসের বিরুদ্ধে মালিকদের এক জন কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও করেছিলেন। পরিবেশ সংক্রান্ত সেই মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হয় জাতীয় পরিবেশ আদালতের ‘প্রিন্সিপাল বেঞ্চ’-এ। পরিবেশ আদালতও পর্ষদের নোটিসে হস্তক্ষেপ না করে ২০১৩ সালেই মামলার নিষ্পত্তি করে। তার পরেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত।

Advertisement

প্রশ্ন যেখানে গঙ্গাদূষণ, সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্যে এমন সুবিশাল ফাঁক কেন? পরিবেশবিদদের একাংশ একদা জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গার জলের সঙ্গে নর্দমার জলের তফাত করা যায় না। গঙ্গার সেই মাত্রাতিরিক্ত দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে, বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও শোনানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা এবং বেআইনি কাজে চোখ বুজে থাকার দীর্ঘলালিত অভ্যাসটি ছাড়া যায়নি। প্রসঙ্গত, বছর দুয়েক আগে জাতীয় পরিবেশ আদালত কলকাতার গঙ্গা এবং সংলগ্ন ঘাটের দূষণ রোধ, ঘাটগুলির সংরক্ষণ, এবং ভবিষ্যতে দূষণ রোধের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানানোর জন্য রাজ্য সরকারকে ‘কড়‌া’ নির্দেশ দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছিল আদালত। সমগ্র বিষয়টিতে নোডাল এজেন্সি করা হয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে। নির্দেশটি কলকাতা-কেন্দ্রিক হলেও প্রকৃত উদ্দেশ্যটি বুঝে নিয়ে অন্যত্রও সেইমতো ব্যবস্থা করাই হত রাজ্য প্রশাসনের বিচক্ষণতার পরিচয়। গঙ্গার দূষণের বিষয়টি শুধু কলকাতা সংলগ্ন ঘাটগুলিতেই সীমাবদ্ধ নেই, এবং দূষণের কারণগুলিও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে একই রকম। এ রাজ্যে পরিবেশ বিষয়ে যে সেই বিচক্ষণতার অভাব যথেষ্ট, হাওড়ার হোটেলগুলিই তার প্রমাণ।

কেন বেআইনি হোটেলগুলিকে উচ্ছেদ করা গেল না, তার ব্যাখ্যা হিসাবে হাওড়া জেলার পুলিশ কিছু পরিসংখ্যান হাজির করেছে। ওই এলাকায় কমপক্ষে দশটি হোটেল অর্ধশতক ধরে চলছে। প্রতি দিন পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ ওই হোটেলে খাওয়াদাওয়া করেন। উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা। আশঙ্কাটি অমূলক নয়। কিন্তু জটিল পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তার রূপরেখাটি স্থির করার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের। সেই কাজে কি দশ বছর অতিক্রান্ত হতে পারে? অবশ্য নিষিদ্ধ বাজি বিক্রয় বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে যখন সরকারের পক্ষ থেকে রুজি-রোজগারের প্রসঙ্গটি টানা হয়, তখন এ জাতীয় ব্যাখ্যায় আশ্চর্য বোধ হয় না। মূল প্রশ্নটি এখানে গঙ্গাদূষণের নয়, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির। সেই দূষণ ঠেকাবে কে?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন