Summer Vacation

ছুটির পাঠ

পরিস্থিতি যখন অ-স্বাভাবিক, তখন বিকল্প ভাবনা ভাবিতে হইবে বইকি। সরকারের পক্ষ হইতেও দ্রুত নির্দেশিকা দেওয়া প্রয়োজন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৪
Share:

ফাইল চিত্র।

ছুটি শুধুই ছুটি নহে। দীর্ঘ ছুটি যাহাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করিতে না পারে, তাহার জন্য গ্রীষ্মাবকাশেও অনলাইনে ক্লাস লইবার পরিকল্পনা করিয়াছে শহরের বেশ কিছু স্কুল। গত বৎসর মার্চ মাস হইতেই অতিমারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ। মাঝে নবম-দ্বাদশ শ্রেণিতে শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠন শুরু হইলেও পুনরায় তাহা বন্ধ হইয়াছে। কোভিডের কারণে ২০ এপ্রিল হইতে রাজ্যের স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি শুরু হইবার ঘোষণা করিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রীষ্মাবকাশ চলিবে জুন মাস পর্যন্ত। এই দীর্ঘ বিরতি প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে বহু ছাত্রছাত্রীর যোগসূত্রটি ছিঁড়িয়া ফেলিতে পারে। সুতরাং, অনেক শিক্ষক স্বেচ্ছায় ছুটিতে অনলাইন ক্লাস লইতে ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন।

Advertisement

পরিস্থিতি যখন অ-স্বাভাবিক, তখন বিকল্প ভাবনা ভাবিতে হইবে বইকি। সরকারের পক্ষ হইতেও দ্রুত নির্দেশিকা দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত, যাহারা নানা কারণে ইতিপূর্বে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করিতে পারে নাই, তাহাদের চিহ্নিত করিয়া এই সময় আলাদা ক্লাস লওয়া যায়। জুনে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও সময়টুকু কাজে লাগানো প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ হইতে কোনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশ না আসিলেও শিক্ষকদের উদ্যোগী হইতে হইবে। অতিমারিতে যে ক্ষেত্রগুলি সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত, তাহার মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। সমীক্ষা দেখাইয়াছে, অতিমারির প্রথম বৎসরেই স্কুলছুটদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। দ্বিতীয় বৎসরেও অবস্থা অপরিবর্তিত থাকিলে তাহা বহুগুণ বৃদ্ধি পাইবে। সর্বোপরি, গ্রীষ্মাবকাশের পর কী হইবে, সেই প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতির অসাধারণ উন্নতি হইয়া স্কুল খুলিয়া যাইবার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। এমতাবস্থায় দীর্ঘ বিরতিকে গঠনমূলক কাজে লাগানোই বিচক্ষণতার পরিচয়। ইতিমধ্যেই অতিমারির কারণে শিক্ষাজগতে এক সুস্পষ্ট বিভাজন ঘটিয়া গিয়াছে। সেই বিভাজন রেখা যাহাতে আরও প্রশস্ত না হয়, সেই প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একাংশ যে কথাটি উপলব্ধি করিয়াছেন, তাহা স্বস্তিদায়ক।

সরকারেরও উচিত এই বিষয়ে আরও উদ্যোগী হওয়া। গত এক বৎসরে সর্বস্তরে অনলাইন শিক্ষার প্রসার ঘটাইবার জন্য যে পরিকাঠামোগত উন্নতির প্রয়োজন ছিল, তাহা যথেষ্ট হয় নাই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু পড়ুয়ার নিকট এখনও ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা স্মার্টফোনটুকুও না থাকিবার ফলে, এবং ইন্টারনেট পরিষেবা ধীর গতি হইবার কারণে তাহারা পিছাইয়া পড়িতেছে। ইতিপূর্বে সরকারের পক্ষ হইতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সুবিধার্থে ট্যাব কিনিবার টাকা দিবার ঘোষণা হইলেও অনেকের কাছে সেই অর্থ সময়ে পৌঁছায় নাই বলিয়া অভিযোগ। কোথাও ট্যাব আসিলেও ডেটা প্যাক-এর অর্থ জোগাড় করিতে পারা যায় নাই। ফলত, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার কমিয়াছে। এই ক্ষেত্রে কেরলের মডেলটি অনুসরণযোগ্য। সেখানে সমীক্ষায় উঠিয়া আসিয়াছিল যে, গ্রামাঞ্চলে স্মার্টফোন অপেক্ষা টিভি সেট অধিক কার্যকর। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতি লইয়া গত বৎসর কেরলে প্রাথমিক হইতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর পাঠদানের ব্যবস্থা করা হইয়াছিল। এই পথেও হাঁটা যায় কি না, ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন