Economy

সমস্যা যেখানে

আর্থিক অবস্থা অনুসারে বৃদ্ধির হারকে ভাঙলে দেখা যাবে, গত অর্ধশতকে সর্বদাই দরিদ্রতম শ্রেণির ক্ষেত্রে আর্থিক বৃদ্ধির হার থেকেছে ধনীতম আর্থিক শ্রেণির বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৩ ০৫:২৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

জুলাই মাসে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াল ১.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় আদায়ের পরিমাণ ১১ শতাংশ বেশি। সংবাদটি নিঃসন্দেহে আশাপ্রদ। বিশেষত, ভারতে উৎসবের মরসুম এখনও শুরু হয়নি। আগামী তিন-চার মাস উৎসব উপলক্ষে কেনাকাটার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। ফলে, হঠাৎ কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে ভোগব্যয়ের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকবে বলেই অনুমান করা যায়। বিশ্ব অর্থনীতি এই মুহূর্তে এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থায় ভারতীয় বাজার যদি চাঙ্গা থাকে, তবে আন্তর্জাতিক পুঁজিও ভারতমুখী হতে পারে। এই সংবাদটিকে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সার্বিক সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত হিসাবে পাঠ করলে অবশ্য ভুল হতে পারে। মূল্যস্ফীতির হার ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে— জুলাই মাসেই খুচরো পণ্যের মূল্যসূচকের স্ফীতির হার ফের সাড়ে ছয় শতাংশের গণ্ডি অতিক্রম করেছে। আনাজের দাম এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম উদ্বেগের কারণ তৈরি করছে। অন্য দিকে, ভারতে মূলধনি খাতে ব্যয়ের পরিমাণ যথেষ্ট না বাড়ার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাটিও বর্তমান। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সতর্ক অবস্থান থেকে স্পষ্ট যে, আপাতত সুদের হার বাড়ানো না হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা কমানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। কর্মসংস্থানের ছবিটিও আশাপ্রদ নয়। অর্থাৎ, অর্থব্যবস্থার যে উদ্বেগগুলি ছিল, তার সব ক’টিই কম-বেশি বর্তমান। তবুও ভোগ্যপণ্যের বাজারে চাহিদা তৈরি হলে তা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, জাতীয় আয়ের উপাদানগুলির মধ্যে ভোগ্যপণ্যের গুরুত্ব সর্বাধিক, এবং সেই চাহিদা স্থায়ী হলে তা অর্থব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Advertisement

এই চাহিদা আসছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করলে শেষ অবধি ভারতের অসম অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোরগোড়ায় পৌঁছতে হবে। সামগ্রিক অর্থব্যবস্থার জন্য আর্থিক বৃদ্ধির হার বড় জোর একটি গড় পরিসংখ্যান— তা থেকে বোঝার উপায় নেই যে, কোন শ্রেণির মানুষ কেমন আছেন। আর্থিক অবস্থা অনুসারে বৃদ্ধির হারকে ভাঙলে দেখা যাবে, গত অর্ধশতকে সর্বদাই দরিদ্রতম শ্রেণির ক্ষেত্রে আর্থিক বৃদ্ধির হার থেকেছে ধনীতম আর্থিক শ্রেণির বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম। কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। যাঁর আয় ১০০০ টাকা, তাঁর ক্ষেত্রে দশ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটাতে আয় ১০০ টাকা বাড়লেই চলে; কিন্তু যাঁর আয় এক লক্ষ টাকা, তাঁর আয় দশ শতাংশ বাড়াতে হলে ১০,০০০ টাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের তরফে তুলনায় অনেক কম চেষ্টাতেই দরিদ্র মানুষের আয়বৃদ্ধি ঘটতে পারে। ভারতে দৃশ্যতই সেই চেষ্টাটুকুও হয়নি। অন্যান্য পরিসংখ্যান বলছে যে, একটা বড় অংশের মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছিল অতিমারির প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেই। তার পরের ‘আর্থিক পুনরুত্থান’ তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে পারেনি। অর্থাৎ, ভোগ্যপণ্যের বাজারে যে চাহিদা দেখা যাচ্ছে, তার ভিত্তি যথেষ্ট বিস্তৃত নয়। তার ফলে, সেই বৃদ্ধি আদৌ সুস্থায়ী হতে পারে কি না, সে প্রশ্ন থাকছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসাবে পরিষেবার গুরুত্ব গত তিন দশকে বেড়েছে, কৃষির গুরুত্ব এই সময়কালের গোড়ায় হ্রাস পেলেও অন্তত দশ বছর ধরে তা দাঁড়িয়ে আছে একটি নির্দিষ্ট স্তরে; অন্য দিকে, শিল্পের গুরুত্বও গোড়ার দিকে বৃদ্ধি পেয়ে তার পর থমকে দাঁড়িয়েছে। ফলে, বৃদ্ধির উপাখ্যানটি নড়বড়ে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে কি না, খোঁজ করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন