Yogi Adityanath

একমাত্র পথ

অতীত অভিজ্ঞতাকে নির্দেশক মানিলে এতখানি আশাবাদী হইতে ভয় করে। কিন্তু, এই মুহূর্তে এই আশাটুকুই সম্বল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৫:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কখনও অর্ধসত্য, কখনও নির্জলা মিথ্যা— মোটামুটি এই মন্ত্রেই কোভিড যুদ্ধ লড়িতেছে ভারতের প্রশাসন। টিকা প্রদান আরম্ভ হওয়ার পর ছয় মাসের অধিক সময় কাটিয়া গেল; কত টিকার জোগান আছে, অদূর ভবিষ্যতে কত টিকা মিলিবে, বর্তমান হারে চলিলে দেশের সকল নাগরিকের টিকাকরণে মোট কত সময় লাগিবে— এমন বহুবিধ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মিলিল না। সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে প্রভূত গরমিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, বর্তমান হারে টিকাকরণ চলিলে গোটা দেশকে টিকা দিতে আরও দুই বৎসরের অধিক সময় লাগিবে। কোন রাজ্য কী পরিমাণ টিকা পাইবে, কোন সূত্র ব্যবহার করিয়া তাহা নিরূপণ করা হইবে— এখনও সে বিষয়ে প্রভূত ধোঁয়াশা। কোভিড-নিরাপত্তা বা টিকাকরণ যে দেশের শাসকদের নিকট মূলত রাজনৈতিক অস্ত্র, সে বিষয়ে কখনও কোনও সন্দেহ ছিল না। বিহার এবং বাংলার ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপির নেতারা বলিয়াছিলেন, জয়ী হইলেই বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করিবেন। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়িতেই প্রধানমন্ত্রী জানাইলেন, কোভিড পরিস্থিতি সামলাইতে যোগী আদিত্যনাথের সাফল্যের তুলনা গোটা দেশে নাই! গঙ্গায় ভাসিয়া আসা, অথবা নদীতীরে মাটিচাপা দেওয়া কোভিড-শবের ছবি সাক্ষ্য দিবে, প্রধানমন্ত্রী এখনও নেহাতই রাজনীতি করিতেছেন। কেন কোভিড মোকাবিলায় ভারত পিছনের সারিতে, তাহার একটি কারণ এই রাজনীতিতে মিলিবে।

Advertisement

ইতিমধ্যেই কোভিডের তৃতীয় প্রবাহের আশঙ্কা প্রকট হইতেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন। তৃতীয় প্রবাহকে কতখানি সামলানো যাইবে, তাহা বহুলাংশে নির্ভর করিতেছে রাষ্ট্রচালকদের সদিচ্ছার উপর। তাঁহারা যদি মুখে জগৎ মারিবার, এবং ক্ষুদ্র রাজনীতির চমশায় দুনিয়া দেখিবার প্রবণতা ত্যাগ করিতে পারেন, তবে আশা আছে। প্রথমেই নিজেদের খামতিগুলি স্বীকার করিয়া তাহা সংশোধনের চেষ্টা করিতে হইবে। গোটা প্রক্রিয়াটিতে স্বচ্ছতা আনিতে হইবে। টিকার জোগান বাড়ানোর জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহাতে দ্বিধা করিলে চলিবে না। এবং, টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক বিবেচনা বিষবৎ পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয় প্রবাহটি এমন মারাত্মক হইবার পিছনে কুম্ভমেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে লাগামছাড়া প্রচারের মস্ত ভূমিকা ছিল। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি কোনও মতেই চলিবে না। অতীত অভিজ্ঞতাকে নির্দেশক মানিলে এতখানি আশাবাদী হইতে ভয় করে। কিন্তু, এই মুহূর্তে এই আশাটুকুই সম্বল।

তবে, দায়িত্ব শুধু সরকারেরই নহে। সাধারণ মানুষেরও। গত দেড় বৎসরে অসংখ্য বার বলা কথাটি আরও এক বার স্মরণ করাইয়া দেওয়া জরুরি— সাধারণ মানুষ সচেতন না হইলে এই অতিমারিকে রুখিবার উপায়মাত্র নাই। সংবাদে প্রকাশ, দ্বিতীয় প্রবাহের ধাক্কা কমিতেই সিংহভাগ মানুষ মাস্ক পরা বন্ধ করিয়াছেন। পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে বেপরোয়া ভিড়; শহরের দোকান-বাজারে ভিড় উপচাইয়া পড়িতেছে। দীর্ঘ দিন ঘরে বন্দি হইয়া থাকিতে বাধ্য হইলে অবসাদ জন্মায়, সত্য। সামান্য ফাঁক পাইলেই বাধানিষেধ ভুলিয়া পথে নামিতে ইচ্ছা করে, তাহাও সত্য। কিন্তু, বিপদ কাটিয়া যায় নাই— সাময়িক ভাবে স্তিমিত হইয়াছে মাত্র। এই অবস্থায় সুরক্ষাবিধি ভুলিলে পরবর্তী বিপদের মাত্রা আরও বাড়িবে। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাহির না হওয়া, সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা, হাত ধোয়া, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা, এবং অতি অবশ্যই মাস্ক পরা— এই কয়েকটি সাধারণ কাজ যদি বিনা গাফিলতিতে করিয়া চলা যায়, একমাত্র তাহা হইলেই তৃতীয় প্রবাহ হইতে সুরক্ষা মিলিবে। সরকার নিজের কাজ করিবে, এবং নাগরিক নিজের— কোভিডের বিরুদ্ধে এই দ্বিমুখী যুদ্ধই একমাত্র পথ।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন