Russia Ukraine War

জীবনযুদ্ধ

ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ একশো দিন পেরোল, এ আদৌ আনন্দবহ উপলক্ষ নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২২ ০৫:৪২
Share:

একশো সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব আছে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ঘটনা একশোর মাইলফলক ছুঁলে তা উদ্‌যাপন বা স্মরণের যোগ্য হয়ে ওঠে। ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ একশো দিন পেরোল, এ আদৌ আনন্দবহ উপলক্ষ নয়। পুতিনের সেনার আক্রমণে কিভ ও খারকিভ কী ভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ইউক্রেনে কী পরিমাণ প্রাণহানি ও সম্পদহানি হয়েছে এবং এখনও হয়ে চলেছে, সমগ্র বিশ্ব তার সাক্ষী। যুদ্ধ এখনও চলছে, কিন্তু যুদ্ধ নিয়ে গোড়ার দিকে বিশ্ববাসীর যে সচেতন আগ্রহ— ইউক্রেনের জন্য উৎকণ্ঠা, রাশিয়ার আগ্রাসনবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ— একশো দিন পরে তা কি একই রকম প্রগাঢ়? এ যুগের প্রবণতাই হল অতি দ্রুত ঘটনান্তরে সরে যাওয়া, সেই নিষ্ঠুর নিয়মেই কি পৃথিবী ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকেও চোখ ও মন সরিয়ে নিল? শিরোনাম থেকে ক্রমে ভিতরের পাতায় সরে যাওয়া সংবাদের ভবিতব্য, কিন্তু এই মুহূর্তে যখন পৃথিবীর এক প্রান্তে যুদ্ধের কারণে ক্রমাগত ঘটে চলেছে মৃত্যু ও ধ্বংস, তারই পরিণামে আরও অজস্র মানুষ পরিণত হচ্ছেন অসহায় শরণার্থীতে— তখনও বাকি বিশ্ব তা সয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছন্দে? এ ভাবেই সব সয়ে যায়?

Advertisement

একশো দিন অতিক্রান্ত যুদ্ধ আর একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, তা হল যুদ্ধের নীতিগত কৌশল ও প্রকরণ। অভিযানের ঢক্কানিনাদে নয়, কূটনীতিকে কৌশলে রণনীতিতে পাল্টে নিয়ে, সময় ও সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রশক্তিকে রাতারাতি সামরিক শক্তিতে পরিণত করা— এই হল একুশ শতকীয় যুদ্ধের গোড়ার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার পিছনে উদ্দেশ্যই ছিল এই, যাতে এক জন বা কয়েক জনের ক্ষমতালিপ্সা, দম্ভ ও আগ্রাসন যেন আর মাথাচাড়া না দেয়, শান্তি ও গণতন্ত্রের আবহ যেন বজায় থাকে। কিন্তু তা যে বাস্তবে সফল হয়নি, বিশ্বায়ন-উত্তর একুশ শতকেও যে এক জন রাষ্ট্রপ্রধানের বেলাগাম আত্মগর্ব অন্য এক রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আগ্রাসনের মূলে ক্ষমতার আনখশির লোভ আছে সত্য, সেই সঙ্গে আছে সূক্ষ্ম সমরনৈতিক পরিকল্পনা: শুরুতেই কত জোরালো আঘাত হানতে হবে, প্রতিরোধের চরিত্র ও ঘনত্ব বুঝে নিয়ে কখন কতটা ধৈর্য ধরতে হবে, যুদ্ধের খবর এমনকি ক্ষয়ক্ষতির তথ্যকেও কোন কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের দিকে হাওয়া টানতে কাজে লাগানো যাবে, আক্রান্ত রাষ্ট্রের সমর্থনে অন্যান্য রাষ্ট্র এক হয়ে আক্রমণকারী রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করলে তখনই বা কী করণীয়, সমস্ত কিছু। যুদ্ধটা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে হলেও, তা ‘শিক্ষা’ দিচ্ছে সকল রাষ্ট্রশক্তিকেই।

একুশ শতকের বিশ্বে যুদ্ধের আঁচ গায়ে লাগছে অন্য ভাবে। শুধু বিবদমান দুই দেশের মানুষই ভুক্তভোগী নন, যুদ্ধের অপ্রত্যক্ষ পরিণাম সঙ্কটে ফেলছে এশিয়া থেকে আফ্রিকা সব মহাদেশের মানুষকেই। অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত, খাদ্য ও বিবিধ পণ্য, পেট্রলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। অতিমারিতে দু’টি বছর বিপর্যস্ত, এ বার জীবন ছন্দে ফেরার পথেই ফের যুদ্ধের আঘাত। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির কাছে এই বিপর্যয় সামলানো এক মস্ত চ্যালেঞ্জ। দৃষ্টির অগোচরে ঘটে চলা এক যুদ্ধ বাকি পৃথিবী, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বকে দুঃসহ জীবনযুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন