শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে পুলকার পুকুরে পড়ে যাওয়ায় উলুবেড়িয়ায় প্রাণহানি হল তিন শিশুর। ঘটনার পরে পুলিশ স্কুলে গিয়ে গাড়িগুলি পরীক্ষা করছে, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মেয়াদ এবং পরিচালকদের যাবতীয় তথ্য জমা দেওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছে। তিক্ত অভিজ্ঞতা সতর্ক করে, কিন্তু আশঙ্কা হয় যে, এই তৎপরতা ও সচলতা সাময়িক। পাঁচ বছর আগে হুগলির পোলবায় পড়ুয়া-বোঝাই পুলকার নয়ানজুলিতে পড়ে যায়, যার ফলে ঝরে গিয়েছিল সাত বছরের এক শিশুর প্রাণ। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী জেলায় জেলায় গাড়ির স্বাস্থ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। তা ছাড়া, সমস্ত ধরনের শংসাপত্র, পরিবহণ দফতরের ছাড়পত্র, বিশেষ রং ও নম্বরপ্লেট, অগ্নিনির্বাপক, গতি বাঁধার যন্ত্র-সহ স্কুলগাড়ি কেমন হবে ও ক’জন যাত্রী নেবে তার স্পষ্ট নিয়ম ও সরকারি বিজ্ঞপ্তিও ইতিমধ্যেই জারি আছে। কিন্তু তার পরেও যখন মুহুর্মুহু দুর্ঘটনা ঘটছে, চলন্ত স্কুলগাড়িতে আগুন লাগার, বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারার খবর মিলছে— তাতেই স্পষ্ট কোনও নির্দেশ, নিয়ম মানা হচ্ছে না।
সেই কারণেই মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেস বা দূষণ সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক শংসাপত্রবিহীন উলুবেড়িয়ার এই গাড়িটি শিশু পরিবহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবাধে ব্যবহৃত হতে পেরেছে। কঠোর নজরদারি করার কথা পরিবহণ দফতর ও পুলিশের। তা নিয়মিত হলে কি ব্যবসায়ীরা নিয়ম ভাঙার সাহস করতেন? বহুমুখী ব্যস্ততার চাপে বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়া-নেওয়ায় সমস্যাক্রান্ত অভিভাবকের সংখ্যা বাড়ছে এবং এ ক্ষেত্রে মুশকিল আসান পুলকারগুলি। সাধারণত, স্কুল কর্তৃপক্ষের পরিবর্তে সরাসরি অভিভাবকদের সঙ্গেই পুলকার এজেন্সিগুলি যোগাযোগ রাখে। গোটা পদ্ধতিটিই চলে বৈধতা-অবৈধতার মধ্যবর্তী ধূসর অঞ্চলে। নির্দেশিকা-অনুসারী গাড়ির বদলে পুরনো গাড়িগুলি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, বাড়তি মুনাফার লোভে পুলকারে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই গ্যাস সিলিন্ডারের মতো বিপজ্জনক বস্তু পরিবহণ, এক স্কুলের ‘ডিউটি’ যথাসম্ভব দ্রুত সমাধা করে অন্য স্কুলে পৌঁছতে গতিসীমা ভাঙার, এমনকি তার জন্য পড়ুয়াদের মাঝরাস্তায় নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এমনই কোন কোন বিধি ভঙ্গ হচ্ছে তা নাবালক যাত্রীরা বুঝতে পারবে না মনে করেই মোবাইল কানে স্টিয়ারিং হাতে নেওয়ারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। সড়কপথে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যে তাঁদেরই হওয়ার কথা ছিল— অধিকাংশ চালকই সে বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।
প্রশ্ন উঠবে যে, গাড়িটি আসলে বাতিল, অন্য গাড়ি বা অচেনা চালক এসেছিলেন, চাকা খারাপ— এই তথ্যগুলি কেন দুর্ঘটনার পরেই জানা যায়? আগে জানা গেল না কেন? গাড়ির স্বাস্থ্যপরীক্ষাকে নিশ্ছিদ্র নজরদারির আওতায় না আনলে ব্যবসায়ীরা মুনাফার লোভে অসহায় শিশুর প্রাণকে বিপন্ন করার এই অভ্যাস ত্যাগ করবেন কি না সন্দেহ। পথেঘাটে সন্তানকে অন্যের হাতে ছাড়ার সময় অভিভাবকদেরও ভাবতে হবে, সামান্য কিছু সময় বাঁচাতে নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে কি না। সন্তানের সঙ্গে কথা বলে চালকের আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা, কার গাড়ি, চালকের লাইসেন্স আছে কি না, প্রতি দিনই বৈধ গাড়ি, ঠিক চালক হাজিরা দিচ্ছেন কি না— জানতে হবে। শিশুশিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবহণ যে কিছুতেই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, এই পরিস্থিতি অকল্পনীয়।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে