School Boards

বিষ বিষয়ক চেতনা

চেতনতা আনতে উদ্যোগী জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। তাদের পরামর্শে, সিবিএসই ও সিআইএসসিই-র বোর্ডের স্কুলগুলিতে ‘শুগার বোর্ড’ লাগানো হয়েছে। কোন খাবারে কতটা চিনি তার মাপ ও ঝুঁকি বিষয়ে লেখা হবে, স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্পের হদিস থাকবে।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৪:৪৯
Share:

কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই নয়, ক্রমে শিশু-কিশোরদের মধ্যেও ‘টাইপ টু ডায়াবিটিস’ নামক নীরব ঘাতক ব্যাধিটির প্রবণতা বাড়ছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, ভারতে প্রতি এক লাখ অপ্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৩৯৭ জন এই রোগের কবলে, যা আন্তর্জাতিক বিপদতালিকায় দেশকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে তুলেছে, চিনের ঠিক পরে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক খাবার বাদে, ১৮ বছরের কমবয়সিদের দৈনিক খাদ্যতালিকায় চিনি ছ’চা-চামচের নীচে রাখাই বিধেয়। কিন্তু, তাদের পাতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি, ও তার প্রধান উৎস মিষ্টি জলখাবার। যেমন, বোতলজাত নরম পানীয়র প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৯-১০ গ্রাম চিনি। আম্রজাত পানীয়ের মাত্র ১২৫ মিলিলিটারের প্যাকেই চিনির পরিমাণ ৫ চা-চামচ। শিশুমহলে চকলেট, পেস্ট্রি, লজেন্সের এত কদরেরও কারণ চিনি। সহজ, সুলভ মুখরোচকে যে চিনির এত বাড়বাড়ন্ত, গ্রাহক-অভিভাবক কেউই ওয়াকিবহাল নন। ব্যবসায়ীরাও তথ্য প্রকাশে ‘ইতি গজ’ পন্থায় চলে।

অবশেষে, সচেতনতা আনতে উদ্যোগী জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন। তাদের পরামর্শে, সিবিএসই ও সিআইএসসিই-র বোর্ডের স্কুলগুলিতে ‘শুগার বোর্ড’ লাগানো হয়েছে। কোন খাবারে কতটা চিনি তার মাপ ও ঝুঁকি বিষয়ে লেখা হবে, স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্পের হদিস থাকবে। অতিরিক্ত চিনি স্থূলতা ও অন্যান্য রোগেরও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ। গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের কথা নয়। তবে, রাষ্ট্র পরিবেশে সূক্ষ্ম ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে নাগরিক ও ভবিষ্য-নাগরিকের পছন্দকে প্রভাবিত করতে পারে, তাদেরই স্বার্থে। একেই আচরণবাদী অর্থনীতি ‘নাজ’ বা মৃদু ঠেলা বলে চিহ্নিত করে। অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থ্যালারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই মৃদু ঠেলা দিয়ে মানুষকে ঠিক পথে চালনা করে তার স্বাস্থ্যগত, আর্থিক ও পরিবেশের পক্ষে মঙ্গলজনক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। প্রস্তাবিত শুগার বোর্ডটি ‘নাজ’নীতিরই উদাহরণ। ক্ষতিকর দিক নিয়ে স্পষ্ট ধারণা বার বার চোখের সামনে ভাসলে ছোটরা যেমন কুখাদ্যগুলির দিকে কম হাত বাড়াবে, তেমন জুস, চকলেট কিনে দেওয়ার আগে অভিভাবকও ভাববেন।

বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে টিফিন, দুপুরের খাবারের প্রভাব; সিলেবাস ও জীবনের পাঠ সম্যক আত্তীকরণে সুষম আহারের ভূমিকার মান্যতায় প্রথম বিশ্ব বহু আগেই মনোযোগী। টিফিনবাক্সকে স্বাস্থ্যকর রাখতে আমেরিকা কঠোর নীতি নিয়েছে। নুন-চিনির পরিমাণ বেঁধে রাখতে নানা নির্দেশিকা, ক্যাফেটেরিয়ায় নানা ‘নাজ’ ব্যবহারের চল এনেছে। যেমন বার্গারের সামনে সালাডপাত্র রাখা, সবুজ আনাজপাতিকে মজার ছলে পেশ করা ও তার দৃশ্যমানতা, সহজলভ্যতা বাড়ানো ইত্যাদি। চোখের সামনে বোর্ড রেখে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস করিয়ে, ক্যাফেটেরিয়া, স্কুল সংলগ্ন দোকানগুলিতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিপণন নিয়ন্ত্রণে জোর দিয়ে এত দিনে সেই পথ ধরতে চলেছে ভারতীয় স্কুলগুলি। অন্যান্য বোর্ডের শিক্ষায়তনগুলিকেও এই ব্যবস্থার আওতায় এনে এই অভ্যাসকে গোটা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়া বিধেয়। কারণ, গত দশকে দেশের ছাত্রমহলে চিনিজাতীয় খাবারে আসক্তি ও তার ভয়ানক ফল দুই-ই আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে। এর পর নুন, অসম্পৃক্ত চর্বি, প্রক্রিয়াজাত খাবারের রমরমা বন্ধেও সক্রিয়তা চাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন