সিকিম বেড়াতে এলে গন্তব্যসংখ্যা নয়, বরং জোর দিন বেড়ানোর গুণমানের উপর— পর্যটন মরসুম শুরুর প্রাক্কালে পর্যটকদের কাছে এমন বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছে সিকিম। প্লাস্টিক-মুক্ত পর্যটন নিশ্চিত করার পর তাদের নতুন লক্ষ্য— স্লো টুরিজ়্ম। এমন এক ভ্রমণ যেখানে প্রতি দিন ছোটাছুটি করে ‘টার্গেট’ পূরণই শেষ কথা নয়, বরং পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে একটি স্থানে বেশ কিছু দিন থেকে যাওয়া, স্থানীয় সংস্কৃতি, মানুষ ও তাঁদের জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়াই লক্ষ্য। স্লো টুরিজ়্ম-এর ঠিকানা হিসাবে পশ্চিম সিকিমের কিছু জায়গাকে নির্দিষ্ট করেছে সিকিম। একদা এগুলি ছিল ‘ব্যাকপ্যাকার’দের সাম্রাজ্য। তাঁরা সেখানে দীর্ঘ সময় থাকতেন, স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে, স্থানীয় খাবার, সংস্কৃতি, জীবিকার অংশ হয়ে। সেই ধারাটিকে অটুট রেখে সাধারণ পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করার ব্যবস্থায় সচেষ্ট সে রাজ্যের সরকার। সাম্প্রতিক কালে সিকিমের উত্তরাংশটি প্রকৃতির রোষে বার বার তছনছ হয়েছে। বিপুল সংখ্যক বুকিং বাতিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুতরাং, পর্যটনের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখতে বিকল্প পর্যটনস্থলের ব্যবস্থা করা সরকারের কাছে অত্যাবশ্যক ছিল। স্লো টুরিজ়্ম-এর ধারণাকে ছড়িয়ে দিয়ে সেই বিকল্প পথেরই ইঙ্গিত দিয়ে রাখল রাজ্যটি।
প্রসঙ্গত, এই ধরনের ভ্রমণ-ভাবনা আনুষ্ঠানিক ভাবে সিকিমের মুখে প্রথম শোনা গেলেও, সামগ্রিক ভাবে নতুন নয়। বরং আগামী দিনে এমন ভ্রমণই যে প্রবল কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনে কিছু দিনের অলসযাপনের সুযোগ এনে দেবে, তেমনটি বিদেশের পাশাপাশি এ দেশেও ইতিমধ্যেই ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছিল। জনবহুল স্থানে হোটেল-বাসের পরিবর্তে পাহাড়ি গ্রামের নির্জন কোণে হোম-স্টের আরাম খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির মধ্যে সেই ভাবনাই ফুটে ওঠে। এই ভ্রমণের মূল কথাও তো তা-ই— স্থানীয়দের মতো হয়ে দিন কাটানো। তাঁদের বাড়িতে, কাঠের রান্নাঘরে, হাতে তৈরি আনাজখেত থেকে দৈনন্দিনতার রসদ তুলে নেওয়া। শুধু পর্যটকদের স্বার্থেই নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও স্লো টুরিজ়্ম আগামী দিনে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে খানিক স্বস্তির সন্ধান দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। পর্যটকরা একটি স্থানে আবদ্ধ থাকার কারণে যান চলাচলজনিত দূষণ কমবে। স্থানীয়দের পরিবেশবান্ধব যাপনরীতির সঙ্গে পরিচিতি সচেতন করে তুলবে পর্যটকদের।
তবে এ দেশে পরিবেশবান্ধব সমস্ত ভবিষ্যৎ-ভাবনাই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে পরিপূর্ণ রূপ পায় না। স্লো টুরিজ়্ম-এর ক্ষেত্রেও তেমন আশঙ্কা প্রভূত। স্বাচ্ছন্দ্য ও বাহুল্যবর্জিত ভ্রমণ, যা এই টুরিজ়্ম-এর মূল কথা, সেই পথে ভাবতে এ দেশীয় পর্যটকদের এক বিরাট অংশ এখনও প্রস্তুত নন। তাঁরা পাহাড়ি গ্রামেও শহরের সমস্ত সুখবিলাস চান, নিজ গৃহকোণের কুঅভ্যাসগুলি সযত্নে বহন করেন। এই মানসিকতায় পরিবেশ সচেতনতা, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মতো কথাগুলি অলীক বোধ হয়। বস্তুত খোদ সিকিম সরকারও অনেকাংশে সেই মানসিকতারই শরিক। তাই তারা অনায়াসে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, টুরিজ়্ম পার্ক তৈরির কথা বলে, গ্রামীণ পর্যটনের সঙ্গে জুড়ে দিতে চায় রোপওয়ে, স্কাইওয়াক-এর নির্মাণকে। খাঁটি স্থানীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি বিনোদনের সুব্যবস্থা— সিকিমের নতুন উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করবে অনেক কিছু। স্থানীয় পরিবেশের হাতে থাকবে শূন্যই।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে