Divisible Tax Pool

অসম বণ্টন

সেস অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মোট ‘ডিভিসিবল ট্যাক্স পুল’ বৃদ্ধি করা হলে কম মাথাপিছু আয় বা অন্যান্য অসুবিধাযুক্ত রাজ্যগুলি সামগ্রিক কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের আনুপাতিক ভাবে বৃহত্তর অংশ পাবে, যা আরও সুষম জাতীয় উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:০৮
Share:

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক (সংশোধনী) বিল পাশ হল লোকসভায়। গত সেপ্টেম্বরে জিএসটি-তে করের স্তর কমানোয় এখন আর ২৮% হার এবং তার উপরে সেস বসানোর ব্যবস্থা রইল না। এটি মূলত চাপানো হয়েছিল বিলাসবহুল পণ্য-সহ সিগারেট, পানমশলা ও নানা নেশার দ্রব্যের উপর। তাই এগুলিতে উৎপাদন শুল্ক বাড়াতে এই বিল এনেছে কেন্দ্র, যাতে চড়া কর চাপিয়ে ক্রেতাদের নিরুৎসাহিত করা যায়। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, সেস-এর টাকা রাজ্যকে দিতে হয় না বলেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, উৎপাদন শুল্ক সেস নয়। এই শুল্ক থেকে যা আয় হবে তা ভাগ করে নেওয়া হবে রাজ্যের সঙ্গে। অতিমারিকালে রাজ্যগুলির ক্ষতি মেটাতে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তা সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে শোধ হয়ে যাবে। কিন্তু বিরোধীদের মতে, আগে যে সব পণ্যে সেস বসত, তার সবক’টি উৎপাদন শুল্ক (সংশোধনী) বিলে আনা হবে না। ফলে ভাগ হলেও কমবে রাজ্যের পাওনা।

ভারতীয় সংবিধানের ২৭০ অনুচ্ছেদ আইনত ভাবে যে-হেতু ‘ডিভিসিবল ট্যাক্স পুল’, যা কেন্দ্রকে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়, তা থেকে সেস এবং সারচার্জ বাদ দেয়, তাই কেন্দ্রীয় সরকার বেশির ভাগ সেস থেকে সংগৃহীত রাজস্ব নিজেদের কুক্ষিগত রাখে। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক সংগৃহীত মোট রাজস্ব থেকে যে অংশটি কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করা হয়, সেটিই ‘ডিভিসিবল ট্যাক্স পুল’। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের অধীনে এই ‘ডিভিসিবল ট্যাক্স পুল’-এ রাজ্যগুলির অংশ ৩২% থেকে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অধীনে ৪১% বৃদ্ধির ফলে কেন্দ্রের আর্থিক অংশ হ্রাস পেয়েছে। এই খামতি পূরণ করতে কেন্দ্র ক্রমবর্ধমান ভাবে সেস এবং সারচার্জের উপর নির্ভর করছে। এটি দেশের কর ব্যবস্থায় একটি স্থায়ী অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বণ্টনযোগ্য রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস করার ফলে সীমিত হয়ে পড়ছে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি-সহ অন্যান্য প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের জন্য রাজ্য সরকারগুলির আর্থিক গতিশীলতা এবং স্বায়ত্তশাসন। এর ফলেই আজ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কর ব্যবস্থায় একটি কাঠামোগত অসঙ্গতি বিদ্যমান। অন্য দিকে, সেস আয়ের বরাদ্দ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে রাজ্যগুলি। তাদের যুক্তি, তহবিলগুলি সর্বদা তাদের বর্ণিত নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না।

বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রীয় আর্থিক কাঠামোয় মোট সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ রাজ্যগুলিই বহন করে, বিশেষত স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক পরিকাঠামোয়। এমতাবস্থায় তাদের সঙ্গে রাজস্বের অংশ বৃদ্ধি করে, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলায় এবং প্রয়োজনীয় জনসেবা তহবিল গঠনে সহায়তা করতে পারে। সেস অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মোট ‘ডিভিসিবল ট্যাক্স পুল’ বৃদ্ধি করা হলে কম মাথাপিছু আয় বা অন্যান্য অসুবিধাযুক্ত রাজ্যগুলি সামগ্রিক কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের আনুপাতিক ভাবে বৃহত্তর অংশ পাবে, যা আরও সুষম জাতীয় উন্নয়নকে উৎসাহিত করবে। ফলে, রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সেস এবং সারচার্জ রাজস্ব ভাগাভাগি করার পদক্ষেপ ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কর পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ— কেন্দ্রীয় সরকারের এই কথাটি ভোলা উচিত নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন