Hospital

মানবিক মুখ

দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ অনেক কম, বলতে গেলে নামমাত্র, কিন্তু সেখানে রোগীর চাপ বিপুল, প্রতি পদে অব্যবস্থা।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৮
Share:

দুই রাজ্যের দুই সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, দু’টিই পরস্পর সংশ্লিষ্ট। কর্নাটক সরকার গত সপ্তাহে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বলেছে,দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের বিন্দুমাত্র দেরি না করে এবং অগ্রিম অর্থ ছাড়াই জরুরি চিকিৎসা দিতে। দুর্ঘটনা মানে শুধু সড়ক-দুর্ঘটনা নয়; অগ্নিদগ্ধ হওয়া, বিষক্রিয়া বা ফৌজদারি হামলাও দুর্ঘটনার অন্তর্ভুক্ত, বলা হয়েছে তা-ও। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য কমিশন এক মামলার রায়সূত্রে নির্দেশ দিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীমৃত্যুর পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে, চিকিৎসার খরচ বা বিমা সংক্রান্ত জটিলতার কারণ দেখিয়ে কোনও ভাবেই মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না। অন্যথায় হাসপাতালের শাস্তি হবে, এমনকি বাতিল হতে পারে লাইসেন্সও।

ভারতে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা-পরিষেবার কিছু উদ্বেগজনক ও অমানবিক প্রবণতা এই সরকারি নির্দেশের সূত্রে হাট হয়ে পড়ে। দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ অনেক কম, বলতে গেলে নামমাত্র, কিন্তু সেখানে রোগীর চাপ বিপুল, প্রতি পদে অব্যবস্থা। সে কারণেই সঙ্গতিসম্পন্ন ভারতবাসী এখন রোগব্যাধির চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেন। সেখানে চিকিৎসকের ফি, ভর্তি ও বেডের খরচ, মেডিক্যাল টেস্ট থেকে অপারেশন সব কিছুতেই বিপুল ব্যয় হবে জেনেও নিজেদের সঞ্চয় ও বেসরকারি স্বাস্থ্যবিমার ভরসায় তাদেরই দ্বারস্থ হন। এ ক্ষেত্রে রোগী তাঁর নিজের অর্থেই চিকিৎসা-পরিষেবা ‘ক্রয়’ করছেন, বেসরকারি হাসপাতাল তাঁকে দয়াদাক্ষিণ্য দেখাচ্ছে না। তবুও দেখা যায়, ভারতে রাজ্য-নির্বিশেষে বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ক্রমাগত খরচ বাড়িয়ে চলার অভিযোগ তো আছেই, তারও বড় অভিযোগ অমানবিকতার। জরুরি বিভাগে কোনও রোগীকে নিয়ে এলেও দ্রুত জরুরি পরিষেবা নিশ্চিত হয় না; রোগীর অর্থসংস্থান কেমন, স্বাস্থ্যবিমা সূত্রে টাকা পাওয়া নিশ্চিত কি না এই সব মুখ্য বিবেচ্য হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা বা হামলায় গুরুতর আহত, অগ্নিদগ্ধ, বিষক্রিয়ায় বিবশ মানুষের জরুরি চিকিৎসা গোড়ার কাজ, তা নিশ্চিত করতেও সরকারি নির্দেশের দরকার পড়ছে, এ-ই কি বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অমানবিকতার যথেষ্ট প্রমাণ নয়?

তার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর— রোগীমৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় মৃতদেহ না ছাড়া। বিমা সংস্থার ছাড়পত্র পেতে দেরি হচ্ছে, বা হাসপাতালের প্রাপ্য বিপুল অর্থ মেটানো হয়নি বলে আগের দিন মধ্যরাতে মৃত রোগীর দেহ পর দিন দুপুর পেরিয়েও ছাড়া হচ্ছে না, এমন ঘটনার উদাহরণ ভূরি ভূরি। মৃতের পরিজনদের মানসিক অবস্থা ওই সময়ে কেমন থাকে তা নিশ্চয়ই বলে বোঝাতে হবে না, বকেয়া অর্থ বা বিমা নিয়ে এই সময়টিতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসংবেদনশীল আচরণ তাঁদের শোকের উপরে আরও কঠিন আঘাত নিয়ে আসে। বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবার এই অর্থসর্বস্ব অমানবিক মুখ নিয়ে যে কম কথা হয় তা নয়, কিন্তু সেই সবই সাধারণ নাগরিক অনুযোগ-অভিযোগের ডালা— আসলে দরকার কঠোর সরকারি পদক্ষেপ, প্রয়োজনে হস্তক্ষেপেরও। উপরের দু’টি ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশে, আশা করা যায়, কিছুটা হলেও গতি হবে। সরকারি উদ্যোগেই এই নির্দেশগুলি বেশি করে প্রচার করা উচিত, যাতে নাগরিকরা তা জানতে পারেন, আশ্বস্ত হতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন