o panneerselvam

জনমত কোন দিকে, পরোয়া নেই রাজনীতিকদের

রাজনীতির এক বিচিত্র মোড়ে এখন তামিলনাড়ু। বিচিত্র রাজনৈতিক নাট্যরঙ্গ জয়ললিতার উত্তরাধিকারকে ঘিরে। তবে শুধু এক ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বেছে নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই ঘটনাপ্রবাহের তাৎপর্য।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৪
Share:

ও পনীরসেলভম, রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও এবং শশিকলা নটরাজন

রাজনীতির এক বিচিত্র মোড়ে এখন তামিলনাড়ু। বিচিত্র রাজনৈতিক নাট্যরঙ্গ জয়ললিতার উত্তরাধিকারকে ঘিরে। তবে শুধু এক ব্যক্তির উত্তরাধিকারী বেছে নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই ঘটনাপ্রবাহের তাৎপর্য। দলটি তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীনও বটে। তাই সরকারের উত্তরাধিকারও এখন নির্ভরশীল এই নাট্যরঙ্গের শেষ অঙ্কের উপরেই।

Advertisement

দড়ি টানাটানির এক প্রান্তে রয়েছেন শশিকলা নটরাজন। তাঁর পাশে রয়েছে একটি তিন অঙ্কের সংখ্যা, যা সরকার গঠনের সুনির্দিষ্ট হিসাবও বটে। দড়ির অন্য প্রান্তে পনীরসেলভম। দলের বেশ কয়েক জন প্রবীণ নেতা, অগণিত সমর্থক, তামিল বিদ্বজ্জনদের উল্লেখযোগ্য অংশ পনীরসেলভমের পাশে। সব মিলিয়ে সেও একটি সংখ্যা এবং সংখ্যাটি নেহাৎ নগণ্যও নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে, সেই হিসাবের সঙ্গে এই সংখ্যার কোনও সরাসরি যোগ নেই।

শশিকলা তা হলে নিশ্চয়ই স্বস্তিতে। তা কিন্তু একেবারেই নয়। শশিকলা যদি দলের অধিকাংশ বিধায়ককে পাশে পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হন, তা হলে বিধায়ক বন্দির খেলায় নামতে হল কেন? বিধায়কদের সুদূর অজ্ঞাতবাসে পাঠাতে হল কেন? পনীরসেলভমের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ স্থাপনের ন্যূনতম সম্ভাবনা নির্মূল করতে ফোনগুলোও কেড়ে নেওয়ার দরকার পড়ল কেন?

Advertisement

আসলে আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না শশিকলা নটরাজন। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার ঢঙে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে যে সিংহাসনটি, তাতে জাঁকিয়ে বসার মোহ এখন দুর্দমনীয়। কিন্তু লালসা নিবারণ যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিতও হতে পারছেন না। অতএব গণতন্ত্রের প্রকাশ্য লুঠ শুরু। জনমত কোন দিকে, পরোয়া নেই। দলের সমর্থকরা কী বলছেন, কান দেওয়ার সময় নেই। কমল হাসন-অরবিন্দ স্বামীরা, তামিল বিদ্বজ্জনরা, তামিল সুশীলরা কী চাইছেন, ভ্রূক্ষেপ নেই। যে কোনও মূল্যে মুখ্যমন্ত্রিত্বে পৌঁছতেই হবে। তার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সর্বসমক্ষে খুন করতে দ্বিধা নেই।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক যাঁর সঙ্গে থাকবেন, মুখ্যমন্ত্রী তিনিই হবেন। কিন্তু বিধায়করা কোন পক্ষে, তা যাচাই করার জন্য গণতন্ত্রের অবাধ অনুশীলনটাও তো দরকার। শশিকলা সে অনুশীলন এখন কিছুতেই হতে দিতে চান না। তাই শশিকলার মুখ্যমন্ত্রিত্ব সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিধায়কদের বন্দিদশা ঘোচার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

বিধায়কদের ভোটেই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু বিধায়করা আসলে তো পদ্ধতিগত ভোটাধিকারী। প্রকৃত ভোটাধিকারী সাধারণ ভোটদাতা। তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবেই ভোটাভুটিতে অংশ নেন বিধায়করা। অতএব সাধারণ ভোটদাতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোই বিধায়কদের কর্তব্য। স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, শশিকলার চাপানো বন্দিদশা যে বিধায়করা আজ মেনে নিচ্ছেন, গণতন্ত্রের প্রকাশ্য লুন্ঠন দেখেও যাঁরা চোখ বুঁজে থাকছেন, তাঁরা কি নিজের নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রের ভোটদাতাদের মতামতটা আদৌ জানার চেষ্টা করেছেন? নাকি ভোটদাতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর কোনও তাগিদ তাঁরা আর অনুভব করছেন না?

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ঝড় উঠছে। তামিলনাড়ুর প্রত্যেক ভোটদাতা নিজের বিধায়ককে ফোন করুন এবং জানিয়ে দিন যে কাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চান— এমন আহ্বানও ভেসে উঠেছে। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল শশিকলা বিধায়কদের থেকে ফোনই ছিনিয়ে নিয়েছেন। অতএব বিধায়কের কাছে নির্বাচকের ফোন আসার উপায়ও আর নেই।

রাজ্যপালের উপরে আজ নির্ভর করছে অনেক কিছু। বিচিত্র এই নাট্যরঙ্গের শেষ অঙ্কটা কেমন হবে, তা নির্ধারণে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে। গোটা দেশের নজর থাকছে তাঁর উপর। এই বিচিত্র মোড় থেকে ইতিহাসের কোনও লজ্জাজনক অধ্যায়ে আমরা ঢুকে পড়ব, নাকি গৌরবোজ্জ্বল কোনও নজির সৃষ্টি করব, তা এখন নির্ভর করছে রাজ্যপালের পদক্ষেপের উপর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন