Newsletter

তুমি দলিত? তা হলে আমিও দলিত

রাজনৈতিক প্রবাহে কতটা আবদ্ধতা এলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে এ ধরনের রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তা এ বার ভেবে দেখার সময় এসেছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০৫:১২
Share:

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দু’জন দলিত প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দ এবং মীরা কুমার।

একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা রূপ পেল। দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর নির্বাচনটাকেও জাতপাতের খেলার বাইরে রাখা গেল না। শাসকের নেতৃত্বাধীন শিবির যাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি দলিত। অতএব বিরোধী শিবিরও খুঁজে আনল দলিত মুখই। রাজনৈতিক প্রবাহে কতটা আবদ্ধতা এলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে এ ধরনের রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তা এ বার ভেবে দেখার সময় এসেছে।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। জাতীয় রাজনীতির যাবতীয় স্রোত, সমীকরণ, কোলাহল এখন সেই নির্বাচনকে ঘিরেই। সে আসরে দলিত তাসটা প্রথমে শাসকের শিবির থেকেই যে খেলা হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু শাসকের এই কৌশলের মোকাবিলার জন্য একটাই পথ খোলা ছিল, এমনটা ভাবার কোনও কারণও নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে জাতপাতের সমীকরণ কেন্দ্রিক করে তুলতে চাইল বিজেপি তথা এনডিএ। পাল্টা কৌশলে বৃহত্তর জাতীয়তাবাদের পথ ধরার চেষ্টা করতে পারত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবির। কিন্তু কোনও বিকল্প পথে হাঁটার কথা যেন ভাবতেই পারলেন না বিরোধী দলগুলির নেতারা। শাসকের পদাঙ্ক হুবহু অনুসরণ করলেন তাঁরা। বহুবিধ রাজনৈতিক কারণে এ বার দলিত ভাবাবেগকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মূল সুর করে তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। বিরোধীরা বিজেপির সেই চাহিদার কাছে যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করলেন। বিজেপির বেঁধে দেওয়া সুরেই তাঁরা গান ধরলেন। শাসকের প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দ যে হেতু দলিত, সে হেতু দলিত পরিচয়ের মীরা কুমারকেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হল।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দু’জন দলিতের মধ্যে লড়াই হলে আপত্তির কিছু থাকতে পারে না। রামনাথ কোবিন্দ এবং মীরা কুমার— যোগ্যতার মাপকাঠিতে দুই প্রার্থীই সসম্মানে উত্তীর্ণ। কিন্তু লড়াইটা এখানে বিহারের পদত্যাগী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকারের নয়। লড়াইটা দলিত রামনাথের বিরুদ্ধে দলিত মীরার। দুই প্রার্থীই ঘটনাচক্রে দলিত, এমন কিন্তু নয়। দুই প্রার্থীই সুচিন্তিত ভাবে দলিত এবং রাজনৈতিক ঘোষণা অনুযায়ী দলিত।

Advertisement

আবার বলি, ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র আর রাষ্ট্রপতি ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারী। বহু ধর্ম, বহু বর্ণ, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির এই রাষ্ট্রের সংবিধানের চোখে ব্রাহ্মণ যা, দলিতও তাই, মুসলিম যা, খ্রিস্টানও তাই। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর নির্বাচনটাকে তাই এই সঙ্কীর্ণ বিভাজনগুলোর অনেকটা ঊর্ধ্বে রাখাই উচিত ছিল। আমরা তা পারলাম না। জাতপাতের সমীকরণ আর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি এ দেশে আজও ঘোর বাস্তব, সে কথা ঠিক। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটা সরাসরি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির উপর নির্ভরশীল নয়। সদিচ্ছা থাকলেই এ নির্বাচনকে জাতপাত-বিভাজনের কালিমা থেকে দূরে রাখা যেত। কিন্তু সেই সদিচ্ছার ঠিক উল্টো দিকে হাঁটল আমাদের রাজনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন