সিবিএসই নির্দেশ জারি করিয়াছে, তাহার এক্তিয়ারভুক্ত সব স্কুলের সব কর্মীর— শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী, উভয় গোত্রেরই— সাইকোমেট্রিক মূল্যায়ন করাইতে হইবে। এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে, সংশ্লিষ্ট মানুষটির মধ্যে আচরণগত বিচ্যুতির সম্ভাবনা আছে কি না। গুরুগ্রাম ও দিল্লির স্কুল দুইটিতে সম্প্রতি যে নৃশংস ঘটনাগুলি ঘটিল, এই সিদ্ধান্ত তাহারই প্রতিক্রিয়া। এবং, জরুরি প্রতিক্রিয়া। স্কুলের পরিসরে শিশুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রথমত এবং প্রধানত স্কুল কর্তৃপক্ষের। স্কুলের পরিসরে যে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের প্রবেশাধিকার আছে, তাহাদের উপস্থিতি এই শিশুদের পক্ষে বিপজ্জনক হইয়া উঠিবার সম্ভাবনা আছে কি না, তাহা যাচাই করিয়া দেখা এই দায়িত্বের অন্যতম দিক। তবে, শুধু এই মূল্যায়নের উপর নির্ভর করিলেই চলিবে না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকিতে হইবে। কেহ মারণাস্ত্র হাতে স্কুলে ঢুকিতেছেন কি না, সে দিকে খেয়াল রাখাই যথেষ্ট নহে। শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীদের কাহারও কোনও বেচাল দেখিলে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু, শুধু শাস্তির ভয়ই শিশুদের নিরাপদ রাখিবে না। যাহারা এই গোত্রের ঘৃণ্য অপরাধ করে, তাহারা সহসা এক দিন অপরাধী হইয়া উঠে না। দিল্লির স্কুলের যে কর্মচারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, সে নিজেই স্বীকার করিয়াছে যে সে প্রত্যহ কিঞ্চিৎ নেশা করিয়া স্কুলে আসিত। এই অস্বাভাবিকতা দীর্ঘ দিন সকলের নজর এড়াইয়া গিয়াছিল, তাহা বিশ্বাস করা কঠিন। অনুমান করা যায়, এই আচরণটিকে কেহ গুরুত্ব দেন নাই। এই গোত্রের গাফিলতি অপরাধের পর্যায়ভুক্ত। এমন অস্বাভাবিকতা দেখিলে সেই কর্মচারীর ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
শুধু শাস্তিই নহে, স্কুলের কর্মীদের কাউন্সেলিং-ও প্রয়োজন। দেখা যাইবে, বহু স্কুলের বহু কর্মীর মধ্যে প্রাথমিক বোধগুলিরও অভাব প্রকট। শিশুরা অসহায় বলিয়াই তাহাদের সহজ শিকার জ্ঞান করা সেই বোধের অভাবেরই ফল। যদি যথাযথ কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে তাঁহাদের মানবিক বোধগুলিকে জাগাইয়া তোলা যায়, হয়তো কিছু লোক অপরাধের পথ হইতে সরিয়া আসিবেন। পাশাপাশি, শাস্তির কথাও স্মরণ করাইয়া দিতে হইবে। ভোপাল পুলিশ স্কুলের কর্মীদের ইতিবৃত্তান্ত যাচাই করিবার কাজটি আরম্ভ করিয়াছে। তাহাও জরুরি। স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখিতে হইবে। অপরাধ করিলে যে নিস্তার নাই, এই কথাটি কর্মীদের মাথায় গাঁথিয়া দিতে পারিলে কাজ হইবে বলিয়াই বিশ্বাস। কিন্তু প্রশ্ন, এই পদক্ষেপগুলি করিবে কে? সিবিএসই-র তৎপরতা সম্ভবত সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়িয়াই। বাকি বোর্ডগুলিও কি কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে? আদালত বলিলে তবে শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভাবা হইবে?
অভিভাবকরা যাহাতে কর্তৃপক্ষের নিকট সহজে নিজেদের উদ্বেগের কথা বলিতে পারেন, সেই পথও খোলা রাখা প্রয়োজন। স্কুল পরিচালনা কমিটিতে দুই জন অভিভাবককে অন্তর্ভুক্ত করিলেই এই কাজটি হইয়া যায় না। প্রশ্ন নিয়মরক্ষার নহে, প্রকৃত সম্পর্কের। অভিভাবকদের উদ্বেগ শুনিবার এবং পরামর্শ গ্রহণ করিবার জন্য স্কুলে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এবং, সেই উদ্বেগের কী প্রতিকার হইল, তাহাও জানাইতে হইবে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিতে হইবে, দায় সারিয়া ফেলা অথবা দোষ চাপা দেওয়া নহে, তাহাদের দায়িত্ব প্রতিটি শিশুর সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। সেই কাজে অভিভাবকরাই কর্তৃপক্ষের স্বাভাবিক সহযোগী। তাঁহাদের গুরুত্ব দিতে হইবে। বিশেষত, আর্থিক বা সামাজিক ভাবে পিছাইয়া থাকা অভিভাবকরাও যাহাতে নিজেদের কথা সমান অধিকারে বলিতে পারেন, সেই পরিসর প্রয়োজন। প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার কাজটিতে ‘নো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করিতে হইবে।