National News

সঙ্কীর্ণ রাজনীতির হাত থেকে ধর্মীয় উদারতাকে বাঁচাতেই হবে

ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে মানুষের কি কোনও উপকার হবে? প্রশ্ন তুললেন জয়ন্ত ঘোষালএই বিতর্কসভা খুব প্রসিদ্ধ। রুডইয়ার্ড গ্রিফিথ ছিলেন বিতর্কের মডারেটর। ম্যাংক বিতর্ক কানাডার প্রিমিয়ার পাবলিক পলিসি ইভেন্ট। টরন্টো-তে ২৭০০ জন মানুষের সামনে লাইভ বিতর্ক। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মাধ্যমে ২৪০ মিলিয়ন এই বিতর্ক শুনেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ২৩:২৮
Share:

টনি ব্লেয়ার ও ক্রিস্টোফার হিচেন্স।

পৃথিবীর ভাল করার জন্য ধর্ম কি একটা শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে?

Advertisement

বিতর্কের বিষয় ছিল এটাই। ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর। লন্ডনে বিখ্যাত ম্যাংক বিতর্ক। অরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এটার আয়োজন করা হয়। বিতর্কে অংশ নেন এক দিকে ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, অন্য দিকে ক্রিস্টোফার হিচেন্স। টনি ব্লেয়ার আগে ছিলেন প্রোটেস্টান্ট। ধর্মান্তরিত হয়ে হন ক্যাথলিক। তার পর টনি ব্লেয়ার ধর্মীয় সংগঠনের হয়ে কখনও আফ্রিকা, কখনও অন্য কোনও দরিদ্ৰ দেশে গিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের সেবা করে ফিরছেন। টনির বাবা ছিলেন ঘোরতর নাস্তিক। মা আয়ারল্যান্ডের প্রোটেস্টান্ট পরিবারের মেয়ে, কিন্তু কট্টর ছিলেন না। ছোটবেলায় টনি খ্রিস্টান স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। কলেজ জীবনেই তিনি ধর্ম ও রাজনীতি, দুটো ব্যাপারেই বিশেষ আগ্রহ অনুভব করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার পর তিনি অবসর নিয়ে গঠন করেন টনি ব্লেয়ার ফেইথ ফাউন্ডেশন!

টনি ছিলেন প্রস্তাবের পক্ষে আর বিপক্ষে ছিলেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স । হিচেন্স প্রসিদ্ধ সাংবাদিক। ২০টা বই লিখেছেন । তিনি থাকেন ওয়াশিংটনে। ঘোরতর নাস্তিক । খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, তবু মন কখনও দুর্বল হয়নি তাঁর। ফরেন পলিসি পত্রিকা অনুসারে, তিনি পৃথিবীর সেরা ১০০ জন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালসের তালিকার এক জন।

Advertisement

এই বিতর্কসভা খুব প্রসিদ্ধ। রুডইয়ার্ড গ্রিফিথ ছিলেন বিতর্কের মডারেটর। ম্যাংক বিতর্ক কানাডার প্রিমিয়ার পাবলিক পলিসি ইভেন্ট। টরন্টো-তে ২৭০০ জন মানুষের সামনে লাইভ বিতর্ক। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মাধ্যমে ২৪০ মিলিয়ন এই বিতর্ক শুনেছেন।

সুধী পাঠক ভাবছেন, হয়তো শাহি সমাচারে ধান ভানতে এত শিবের গীত কেন?

আসলে এই বিতর্কটি চিত্তাকর্ষক। ব্ল্যাক সোয়ান প্রকাশনা এ দেশে বইটি ছেপেছে। বইটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম, প্রেক্ষাপট আলাদা হতে পারে, কিন্তু আজ ভারতে এই বিতর্ক বড় প্রয়োজনীয় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করার জন্য। ক্রিস্টোফার বলছেন, ইসলাম আর খ্রিস্টধর্ম থাকা সত্ত্বেও আরব দেশে এই হানাহানি সন্ত্রাস কেন? মধ্য এশিয়া একেশ্বরবাদের জন্মস্থান, তবু সেখানে কেন হানাহানি? সভ্য মানুষ বলছে, দু’টো রাষ্ট্র হোক। ইহুদিরা বলছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব বলছে। তবু তা হয় না! রাষ্ট্রসঙ্ঘ পারে না! পিএলও পারে না। ইজরায়েল পারে না। আমেরিকা পারে না। কারণ ভগবানের নামে সৃষ্ট সব রাজনৈতিক দল তাতে রাজি নয়।

এডস ছড়াচ্ছে। ক্যাথলিকরা বলছেন, কন্ডোম এডসের চেয়েও খারাপ জিনিস। রাষ্ট্র ধর্মকে ব্যবহার করে অন্ধ বিশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।

টনি এর প্রতিবাদে বলেন, মানছি ধর্মের অনেক অপপ্রয়োগ হচ্ছে। কিন্তু ধর্ম ছাড়াও অনেক অমানবিক কাজ এ পৃথিবীতে হয়েছে, হচ্ছে, আরও হবে! স্তালিন হিটলার পলপট ধর্ম থেকে হয়নি। আবার অনেক চার্চ এডসের রোগীদেরও সেবা করছে। তাই রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে ছুড়ে বাইরে ফেলে দিলেও সঙ্কট মিটবে না! টনি হিন্দু এবং বৌদ্ধ দর্শনের কথাও বলেছেন। হিন্দু দর্শনে বহুত্ববাদের কথা বলেছেন টনি! হিন্দু ধর্ম সাম্প্রদায়িক নয়। অপপ্রয়োগের জন্য দর্শনকে কেন কলুষিত করা হবে?

আজ এ দেশে হিন্দু ধর্মের নামে যে সাম্প্রদায়িকতা দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি হচ্ছে। কিন্তু সেটাতে কি মানুষের কোনও উপকার হবে?

মনে রাখতে হবে, ভারতীয় দর্শনে শুধু ঈশ্বরবাদীদের কথা বলা হয়েছে এমন নয়। এ দর্শনে অনীশ্বরবাদী এবং নিরীশ্বরবাদী— দু’টি পৃথক ধারাও আছে। অনীশ্বরবাদী মানে যেখানে ঈশ্বর নামে কোনও শব্দই নেই। যেমন বৈশেষিক দর্শন। আর নিরীশ্বর মানে যেখানে ঈশ্বরকে অস্বীকার করা হচ্ছে। যেমন সাংখ্য লোকায়ত ও পূর্ব মীমাংসা।

ভারতীয় হিন্দুধর্মের এই বহুত্ববাদকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। গোটা পৃথিবী শুধু বিতর্ক নয়, ধর্মের এই গোঁড়ামির জন্য বড় শিকার!

ভারতীয় মননের মধুতে আছে পারস্পরিক সহিষ্ণুতা। সঙ্কীর্ণ রাজনীতির হাত থেকে আমাদের ধর্মীয় উদারতাকে বাঁচাতেই হবে। আসুন, আমরা দেশটাকে বাঁচাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন